Advertisement
E-Paper

কুকথার সন্ত্রাস, অচল সংসদ নিয়ে জোড়া হুঁশিয়ারি প্রণবের

গত বার তিনি তুলে ধরেছিলেন, জোট-নির্ভর বা নীতিপঙ্গু নয়, এমন একটি স্থায়ী সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা। পরের নির্বাচনে তেমন সরকারই বেছে নিয়েছে দেশবাসী। এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের সন্ধেয় কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষকেই সতর্ক করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দুই শিবিরকেই দেশের পক্ষে বিপজ্জনক দু’টি প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন দেশের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
ভাষণ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। ছবি: পিটিআই

ভাষণ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। ছবি: পিটিআই

গত বার তিনি তুলে ধরেছিলেন, জোট-নির্ভর বা নীতিপঙ্গু নয়, এমন একটি স্থায়ী সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা। পরের নির্বাচনে তেমন সরকারই বেছে নিয়েছে দেশবাসী। এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের সন্ধেয় কেন্দ্রের শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষকেই সতর্ক করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দুই শিবিরকেই দেশের পক্ষে বিপজ্জনক দু’টি প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন দেশের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে।

গত সাত মাসে ধর্মান্তরণের মতো বিষয় নিয়ে বিজেপি-সহ গেরুয়া ব্রিগেডের নেতাদের তৎপরতা, পরের পর সাম্প্রদায়িক ও কটূ মন্তব্য যে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে, সে বিষয়ে আজ শাসক শিবিরকে সতর্ক করেন প্রণববাবু। তাঁর পরামর্শ, শাসক দলের সাংসদ-নেতারা যেন সমাজে বিভাজন তৈরির জন্য ধর্মের দোহাই দিয়ে কথার সন্ত্রাস না ছড়ান। প্রণববাবুর কথায় “জিহ্বার সন্ত্রাস মানুষের মনে ক্ষত তৈরি করে।” মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর দেওয়া ব্যাখ্যা তুলে ধরে প্রণববাবু মনে করিয়ে দেন, ধর্ম সবাইকে মেলায়। তাকে যেন পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ করে তোলা না হয়।

এরই পাশাপাশি, কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা যে ভাবে সংসদ অচল করে রাখার পথে হাঁটছেন সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন রাষ্ট্রপতি। দু’দিন আগেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় কংগ্রেসের এক শ্রেণির নেতা সংসদ অচল করে রেখে যে ধারার জন্ম দিয়েছিলেন সেটা ভুল ছিল, কংগ্রেস সভানেত্রীকে তা মনে করিয়ে দেন তিনি। আর আজ জাতির উদ্দেশে বক্তৃতাতেও রাষ্ট্রপতি বলেন, “সংসদ না চললে সুশাসন কায়েম হতে পারে না। সংসদে সুষ্ঠু আলোচনা প্রয়োজন।”

বাজপেয়ী জমানায় সরকারের তা-ও শরিকি দায়বদ্ধতা ছিল। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের তা নেই। ফলে সংসদ অচল থাকলেও সংস্কারের কাজে থমকে থাকতে রাজি নন তিনি। ফলে ক’মাসে পরের পর অর্ডিন্যান্স জারি করেছে সরকার। সংসদে আলোচনা ছাড়া এ ভাবে আইন প্রণয়ন যে সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়, রাষ্ট্রপতি সে কথা একাধিক বার বলেছেন, উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। আজও এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করার পাশাপাশি বিরোধী পক্ষের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন স্পষ্ট ভাবে। তাঁর কথায়, “আলোচনা ছাড়া আইন প্রণয়ন করলে তা সংসদকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার সামিল। এটা যেমন গণতন্ত্রের জন্য ভাল নয়, তেমনই সংশ্লিষ্ট আইন বা নীতির জন্যও খারাপ।”

অন্য সময় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার বয়ান ঠিক করে দেয় সরকার। কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের সন্ধেয় রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন, তা তাঁর স্বরচিত। এই বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত মত ও পর্যবেক্ষণই উঠে আসে। প্রণববাবুর পর্যবেক্ষণে এ দিন শুধুই যে দু’পক্ষের নেতিবাচক দিকগুলি ধরা পড়েছে, এমন অবশ্য নয়। পরোক্ষে মোদী সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রশংসাও করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ১৯০১-এ কলকাতার রিপন কলেজে কংগ্রেসের এক সভার কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “সভায় উপস্থিত ছিলেন গাঁধীজি। সভা শেষে তিনি খুবই মর্মাহত হন। দেখেন তাঁর সতীর্থরা সভাস্থলটি নোংরা করে রেখেছেন। কিন্তু ঝাড়ুদারের অপেক্ষা না করে তিনি নিজেই হাতে ঝাড়ু তুলে নেন। ১১৪ বছর পরে, এখন দেশকে সেই দৃষ্টান্তই অনুসরণের জন্য আর্জি জানান রাষ্ট্রপতি।

president of india republic day speech pranab mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy