শিক্ষামন্ত্রী যখন নিজেই শিক্ষার্থী!
শপথ নেওয়া ইস্তক বিতর্ক চলছে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হলফনামায় অসঙ্গতির অভিযোগ! ফলে দায়িত্ব পেতেই না পেতেই বেশ বেকায়দায় স্মৃতি ইরানি। বিতর্ক সামলাতে প্রথম থেকেই কোমর কষে নেমে পড়েছেন তিনি। মন্ত্রকের খুঁটিনাটি বুঝে নিতে দিনভর বৈঠক করছেন আমলাদের সঙ্গে। তৈরি করছেন আগামী একশো দিনের পরিকল্পনা।
বিরোধী শিবিরের লাগাতার তির্যক মন্তব্যের মুখে আজই প্রথম পাল্টা উত্তর দিয়েছেন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। বলেছেন, “আমাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। এটুকুই বলতে পারি, আমার কাজ দেখে আমায় বিচার করুন।” হলফনামা-বিতর্ক নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি স্মৃতি। মন্ত্রক-সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহের গোড়ায় সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেন তিনি।
ইতিমধ্যে আজ স্মৃতির দফতরে ফোন করে সাক্ষাতের সময় চান ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালোন উশপিজ। রাজি হয়ে যান স্মৃতি। এ ভাবে সঙ্গে সঙ্গেই স্মৃতি সময় দেবেন, সম্ভবত আশা করেননি উশপিজ। ফলে আজ অন্যান্য সমস্ত পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে শাস্ত্রী ভবনে পৌঁছে যান তিনি।
সোমবার কলকাতা যাচ্ছেন উশপিজ। আবার বুধবার থেকে শুরু হয়ে যাবে সংসদ অধিবেশন। তাই স্মৃতিও চাইছিলেন আজই বৈঠকটি করে ফেলতে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে কী কী বিষয়ে আদানপ্রদান রয়েছে, সে বিষয়েও তড়িঘড়ি হোমওয়ার্ক করে রাখেন মন্ত্রী। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত বেরিয়ে এসে বলেন, “সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও দেখছি উনি প্রত্যেকটি বিষয়ে অবহিত। দু’দেশের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে কী ধরনের কাজ চলছে, সে বিষয়ে নতুন মন্ত্রীর স্পষ্ট ধারণা আছে। প্রথম সাক্ষাতে আমি মুগ্ধ।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, স্মৃতি সত্যিই হোমওয়ার্ক করছেন যথেষ্ট। মন্ত্রকের পরিকাঠামো, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার দুর্বল জায়গাগুলি কী কী, গবেষণাধর্মী কাজে কী ভাবে জোর দেওয়া যায়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কী ভাবে পরিচালিত হয় এমন নানা বিষয় বুঝে নিতে ইতিমধ্যেই দফায় দফায় মন্ত্রকে বা বাড়িতে আমলাদের ডাকছেন তিনি। বৈঠক গড়াচ্ছে মধ্যরাত পর্যন্তও। পাশাপাশি, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমস্যার কথাও জানতে চেয়েছেন স্মৃতি।
পবিত্র সরকারের মতো শিক্ষাবিদেরা মনে করেন, এক জন শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তিনি দ্রুত মন্ত্রকের সার্বিক বিষয়টি বুঝে নেবেন, সেটাই কাম্য। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি অংশ বলছে, স্মৃতি তাঁর কর্মস্থল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা করতে চাইছেন ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক নিজের মন্ত্রকের প্রথম একশো দিনের লক্ষ্যও স্থির করে ফেলছেন তিনি।
কী রকম সেই লক্ষ্য?
প্রথমত, যে রাজ্যগুলিতে আইআইটি নেই, সেখানে তা স্থাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা। এ বিষয়ে মন্ত্রকের আমলাদের একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন স্মৃতি। দ্বিতীয়ত, মিড ডে মিলের খারাপ মান ও তা নিয়ে একাধিক অভিযোগ বারংবার মন্ত্রকের সামনে এসেছে। সে বিষয়েও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চাইছেন স্মৃতি। তৃতীয়ত, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো। চতুর্থত, শিক্ষাকে আরও চাকুরিমুখী করে তুলতে পদক্ষেপ। পঞ্চমত, শিক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হওয়া উচিত বা তাঁদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতি আনার ভাবনা। ষষ্ঠত, শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ৫০টি ডিটিএইচ চ্যানেল চালু। এই বিষয়টি নিয়ে ইউপিএ সরকার অনেকটাই এগিয়েছিল।
অতএব, কাজ অনেক। কাজের মধ্যে দিয়েই স্মৃতি সমালোচনার জবাব দিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।