Advertisement
০৮ মে ২০২৪

কেজরীবালের চাপে পথে নামলেন রাহুল

নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শেষ বার কবে এমন ঝুঁকি নিয়েছে গাঁধী পরিবার! এ বারও ঠিক ছিল দিল্লি ভোটে স্রেফ দুটো সভা করবেন রাহুল গাঁধী। বড় জোর আরও দুটো রোড-শো হবে সঙ্গে, ব্যাস। কিন্তু সেই ছক চুরমার করে আজ প্রচারের শেষ দিনে ফের উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে ট্রাকে চড়ে বড়সড় রোড-শো করলেন রাহুল গাঁধী। দুপুরে বেরিয়ে প্রচারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পথে থাকলেন। অথচ রাহুলেরও অজানা নয়, দিল্লি ভোটকে কেন্দ্র করে এ যাবত কোনও জনমত সমীক্ষা কংগ্রেসকে চার-ছ’টির বেশি আসন দেয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শেষ বার কবে এমন ঝুঁকি নিয়েছে গাঁধী পরিবার!

এ বারও ঠিক ছিল দিল্লি ভোটে স্রেফ দুটো সভা করবেন রাহুল গাঁধী। বড় জোর আরও দুটো রোড-শো হবে সঙ্গে, ব্যাস। কিন্তু সেই ছক চুরমার করে আজ প্রচারের শেষ দিনে ফের উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে ট্রাকে চড়ে বড়সড় রোড-শো করলেন রাহুল গাঁধী। দুপুরে বেরিয়ে প্রচারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পথে থাকলেন। অথচ রাহুলেরও অজানা নয়, দিল্লি ভোটকে কেন্দ্র করে এ যাবত কোনও জনমত সমীক্ষা কংগ্রেসকে চার-ছ’টির বেশি আসন দেয়নি।

তা হলে হঠাৎ কেন এমন ঝুঁকি নিচ্ছেন রাহুল?

পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে তৃণমূল-বিরোধী ভোট বিজেপির অনুকূলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে, অধীর চৌধুরী-আবদুল মান্নানরা হাজার চেষ্টা করলেও তা যেমন কিছুতেই কংগ্রেসের দিকে ফিরছে না। তেমনই দিল্লিতেও ক্রমশ বিজেপির বিকল্প হয়ে উঠছে আপ। জুগ্গি-ঝুপড়ি, গরিব-নিম্নবিত্তের বড় অংশের ভোট পেত কংগ্রেস। তার ১২ আনা এর মধ্যেই আপ-এর দখলে। পরিস্থিতি এমনই যে রাজধানীর সংখ্যালঘু শ্রেণিও এখন আপ-এর দিকে ঝুঁকছে। গত বিধানসভা ভোটেই দিল্লিতে কংগ্রেসের চিরাচরিত ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামিয়েছিল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)। কংগ্রেসের একাংশের আশঙ্কা, সেই খাদ এ বার গভীরতর হতে পারে।

মনে করা হচ্ছে, দিল্লিতে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলার এই সঙ্কটই এখন রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে রাহুল গাঁধীকে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা, রাজধানীতে জনভিত্তি আরও দুর্বল হলে দলের মধ্যে ফের সমালোচনার মুখে পড়বেন রাহুল। তাই কংগ্রেসের ধস ঠেকাতে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামতে হয়েছে রাহুলকে। গত কাল পুরনো দিল্লিতে রোড-শো করেছিলেন। আজ তিনি প্রচার করেন উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে কংগ্রেসের তিন বারের বিধায়ক জয়কিষাণের জন্য। তাৎপর্যপূর্ণ হল, দিল্লি ভোটে এ বার যে ক’টি সভা বা রোড-শো করেছেন রাহুল, সব ক’টিতেই ভিড় উপচে পড়েছে। আজকের মিছিলেও রাহুলকে ঘিরে উন্মাদনার ঘাটতি ছিল না! গত ভোটে আটটি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। রাহুল শিবির সূত্রে বলা হচ্ছে, এ বারে ১৪টি আসনকে নিশানা করেছেন রাহুল। ওই ১৪টি আসনের সব কটায় লড়াইয়ে রয়েছে কংগ্রেস।

মজার বিষয়, এই ভিড় দেখে খুশি বিজেপি। দিল্লিতে কংগ্রেস ও বিজেপি দু’জনেরই শত্রু এখন আপ। বিজেপির হিসাব, কংগ্রেসের ভোট ও আসন বাড়লে আপেরই ক্ষতি। তাতে লাভ হবে বিজেপির। বিজেপির আশা ছিল, কংগ্রেস অন্তত গত বারের পাওয়া আসন ক’টা ধরে রাখলেই আপকে কাবুতে রাখা যাবে। দিল্লিতে প্রচার শেষের পর বিজেপির এক নেতা বলেন, “রাহুল যদি আরও কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে প্রচার করতেন, তা হলে আপের এত বাড়বাড়ন্তের সুযোগই থাকত না। কিন্তুভোটের আগে অনেকটা সময় মাঠেই ছিল না কংগ্রেস। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে আপ।”

আবার দিল্লি ভোট যেমন রাহুলের সামনে দলের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ, তেমনই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের কাছে চ্যালেঞ্জ হল বিজেপির বিজয় রথ গতি অব্যাহত রাখা। যে হেতু লোকসভা ভোট থেকে শুরু করে দলের সব নির্বাচনী সাফল্যের কৃতিত্ব মোদী নিয়েছেন, এ বার দিল্লিতে গরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে তার দায়ও নিতে হবে মোদীকেই। সে জন্য আজ প্রচার শেষ হওয়ার পরেও গোটা দিল্লিতে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মী-নেতাদের। আজ শেষ দিনে দিল্লির ৭০টি কেন্দ্রে ৭০টি জনসভা করেছে বিজেপি। গত কাল রাতে অমিত শাহ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হয়। সেখানে স্থির হয়েছে, আজ রাত থেকে ভোট পর্যন্ত বুথে বুথে ছড়িয়ে দেওয়া হবে দল ও সঙ্ঘের নেতা-কর্মীদের। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বিজেপির জন্য ভোট চাওয়া হবে। অমিত আজও বলেন, “সমীক্ষা যা-ই বলুক, বিজেপি একার জোরে সরকার গড়বে!”

এর পরেও বিজেপি যে দিল্লি জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত, তা কিন্তু কখনওই নয়। কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করে ফল হয়নি, তাই সেই মোদীকে ধরেই এগোতে হয়েছে দলকে। আজ অবশ্য অমিত শাহ দাবি করেন, “দিল্লিতে আদৌ মোদীর নামে ভোট হচ্ছে না। কিরণ বেদীই দিল্লি ভোটে দলের মুখ।” তা শুনে আপ-এর এক নেতার কটাক্ষ ভোটে হার বুঝে গিয়েছেন অমিত। এখন থেকেই তাই ফলাফলের দায় থেকে মোদীকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছেন তিনি।

একটা বিষয় পরিষ্কার জাতীয় স্তরের যুযুধান দুই দলের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন কেবল একটি মানুষ। তিনি অরবিন্দ কেজরীবাল। লোকসভা ভোটের পরে অনেকেই তাঁকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন। এখন তাঁর আপ-ই বীর বিক্রমে এক দিকে যেমন রাহুলকে পথে নামিয়ে ছেড়েছে, অন্য দিকে ঘুম কেড়ে নিয়েছেন মোদী-অমিত শাহের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arvind Kejriwal delhi vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE