বরাকের চা বাগানে। পার্থ শীলের তোলা ছবি।
মাঘে-মেঘে দেখা হয়নি এ বার। চায়ের পাতাগুলি বৃষ্টির জন্য ধুঁকছে। তবু এর মধ্যেই আশার আলো দেখছেন বরাক উপত্যকার চা-বাগানগুলি। ‘সুদিন’ সমাগত ধরে নিয়ে অপেক্ষা করছেন মালিক-শ্রমিক-কর্মীরা। সম্প্রতি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বন্ধে টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া যথেষ্ট কড়া মনোভাব নিয়েছে। অন্য দিকে, এপ্রিলেই ব্রডগেজ রেল লাইন চালু হওয়ার কথা। এ ছাড়াও, বিদ্যুৎ দফতর চা-ফ্যাক্টরিগুলির জন্য পৃথক সংযোগের ব্যবস্থা করছে।
বরাকের চা-উৎপাদকদের কথায়, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বন্ধের নির্দেশে বরাক উপত্যকার চা উৎপাদন বাড়বে না। কিন্তু টি বোর্ডের নির্দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বরাক। কারণ বরাক উপত্যকার চা-বাগানগুলিতে কড়া রাসায়নিক সার-কীটনাশক কখনওই ব্যবহার করা হয় না। প্রথম থেকেই জৈব সারে গুরুত্ব দেয় তারা।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (টাই)-এর সুরমা ভ্যালি শাখার সচিব কল্যাণ মিত্র বলেন, “চা পানের মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থ শরীরে ঢুকছে বলে গত ক’বছর থেকেই শোনা হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে টি বোর্ড তৎপর হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েকটি রাসায়নিক সার ও কীটনাশককে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পোকামাকড়ের হাত থেকে রেহাই পেতে কি ধরণের সার-কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, তারও একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বোর্ড।” কল্যাণবাবুদের বক্তব্য, এতেই মাথায় হাত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা-সহ অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ উৎপাদকের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, নিষিদ্ধ সার-কীটনাশক প্রয়োগই ছিল সেখানকার উৎপাদন বৃদ্ধির মূল মন্ত্র। আর শুধু অনুমোদিত তালিকার সামগ্রী ব্যবহার করতে যে সব কৌশলের দরকার, তাও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অধিকাংশের হাতে নেই। চা-উৎপাদক শরদিন্দু ভট্টাচার্য মনে করেন, “বরাক উপত্যকার বাগানগুলির সুবিধে হল, এখানে আগে থেকেই কড়া কোনও রাসায়নিক সার-কীটনাশকের প্রয়োগ করা হয় না। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই পরিবহণের সমস্যা। চাইলেই এই সব সার বা কীটনাশক পাওয়াও যেত না। ফলে জৈব সারেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।” আর সেটাই বরাকের পক্ষে শাপে বর হয়েছে।
এপ্রিল থেকে চালু হচ্ছে রেল যোগাযোগ। ফলে এ বার বরাক থেকে উৎপাদিত চা রফতানির সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যাবে। কমবে আমদানি, রফতানির সার্বিক পরিবহণ খরচ। উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার অজিত পণ্ডিত জানিয়েছেন, “৩১ মার্চের আগেই ব্রডগেজ লাইনে লামডিং-শিলচর মালগাড়ি চলবে। ১ এপ্রিল থেকে চলবে যাত্রীবাহী ট্রেন।” ব্রডগেজের সঙ্গে এই অঞ্চলের সংযুক্তির ঘোষণা স্বাভাবিক ভাবেই এখানকার চা-শিল্পপতিদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে।
এরই পাশাপাশি, অসম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি বরাকের চা-ফ্যাক্টরিগুলির জন্য পৃথক সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, লোডশেডিং-এর কবল থেকে মুক্তি পাবে বরাকের চা-উৎপাদকরা। পর্ষদ ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছে। ফ্যাক্টরিগুলির জন্য আলাদা ও নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ সংযোগ হলে সাশ্রয় হবে চা-শিল্পের। উৎপাদকদের বক্তব্য, “ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের দরুন জেনারেটর চালাতে গিয়ে প্রচুর খরচ হয়। এ ছাড়া, বার বার বিদ্যুৎ ও জেনারেটর লাইনের ‘সুইচ ওভার’ চায়ের গুণমানেও বেশ প্রভাব ফেলে। বরাক উপত্যকায় এখন ছোট-বড় মোট ১১০টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে চল্লিশের বেশি বাগানে নিজস্ব ফ্যাক্টরি রয়েছে। গড়ে উৎপাদন প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy