এক বিদ্রোহে তিন পরিণতি! প্রথমত, মুখ পুড়িয়ে এবং দেশ জুড়ে চাপের মুখে পড়ে কেরলের সিপিএম বাধ্য হল অন্য শরিকদের প্রতি কিছুটা উদার মনোভাব নিতে! দ্বিতীয়ত, আরএসপি-র কর্মকাণ্ডের জেরে দেবগৌড়ার জেডি (এস) শেষ পর্যন্ত একটি আসন পেল। এবং তৃতীয়ত, প্রত্যাশিত ভাবেই ভাঙন ধরল আরএসপি-তে।
সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের কাছে কোল্লম লোকসভা আসনটি এ বার দাবি করেছিল আরএসপি। সিপিএম দাবি মানতে অনড় থাকায় বাম জোট ছেড়ে বেরিয়ে কংগ্রেসের জোট ইউডিএফের হয়ে ওই আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছেন বিদ্রোহী আরএসপি নেতা এন কে প্রেমচন্দ্রন। কিন্তু কংগ্রেসের হাত ধরার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করতে পারেননি আরএসপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের সিদ্ধান্ত, বিদ্রোহীদের নির্বাচনী প্রতীক দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের তরফে কোনও সুপারিশ করা হবে না। দলের রাজনৈতিক লাইন ভাঙার অপরাধে কেরলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। তবে আরএসপি-র তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গোটা দেশেই বাম দলগুলির সঙ্গে ঐক্য বজায় রেখে চলবে তারা। কেরলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁদের।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার তিরুঅনন্তপুরমে এলডিএফের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কোল্লমের পাশে কোট্টায়ম আসনটি এ বার ছেড়ে দেওয়া হবে জেডি (এস)-কে। সেখানে প্রার্থী হতে চলেছেন বিধায়ক ম্যাথিউ টমাস। আরএসপি-র বিদ্রোহের জেরেই যে দেবগৌড়ার দলের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল, তা নিয়ে বাম শিবিরে কোনও সংশয় নেই! কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য এ দিন বলেছেন, “পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং বাম ঐক্যের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এই সিদ্ধান্তে কেরলের ২০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১৫, সিপিআই চার ও জেডি (এস) একটি আসনে লড়বে বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়ে থাকল।
বামেদের প্রার্থী তালিকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ঝুলে সিপিএমের অন্দরে মতানৈক্যের জন্যই। ভাডাকারা আসনে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীকেই দাঁড় করানোর জন্য জেদ ধরে আছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন। যদিও কোঝিকোড় জেলা কমিটি আপত্তি জানিয়ে রেখেছে। এর্নাকুলাম আসনের প্রার্থী নিয়ে জটও এখনও কাটেনি। সিপিএম সূত্রের খবর, শেষ মুহূর্তের দর কষাকষি শেষে আজ, বৃহস্পতিবার বা কাল, শুক্রবারই তালিকা ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী তারুরের কেন্দ্র তিরুঅনন্তপুরমে সিপিআই প্রার্থী করছে ক্যাথলিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বেনেট পি আব্রাহামকে। কেরলে গির্জার সঙ্গে কমিউনিস্টদের যে দীর্ঘ দিনের সংঘাত, তার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তকে একটি নির্দিষ্ট বার্তা হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
কলকাতায় এ দিন আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক থেকে ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্যের মতো দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা দফায় দফায় কথা বলেছেন কেরলে। দলের সাধারণ সম্পাদক টি জে চন্দ্রচূড়ন কেরল থেকেই গোটা পরিস্থিতি নিয়ে দলকে একটি রিপোর্ট দেবেন। দলের তরফে কেরল ঘুরে এসে পর্যবেক্ষক অবনী রায়ও একটি রিপোর্ট দেবেন। জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে কেরলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও। ক্ষিতিবাবু এ দিন বলেন, “সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের অনড় মনোভাবের জনই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব যা করেছেন, তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। ব্যবস্থা নিতে হবেই। তার আগে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”
আরএসপি-রই একটি সূত্রের ইঙ্গিত, নির্বাচনের ফলাফলের পরে প্রেমচন্দ্রনেরা শেষ পর্যন্ত কোথায় থাকেন, তা দেখার পরেই সম্ভবত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে কেরলের পর্যপেক্ষক অবনীবাবুর বক্তব্য, “বিজয়নেরা আমাদের দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তাতে ওঁরা অত্যন্ত আহত ও ক্ষুব্ধ। তাই আমাদের আর্জি ওঁরা এখন শোনেননি। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে শরিকদের যেমন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়, কেরলে সমস্যা কাটাতে সে পথের কথা ভাবেইনি সিপিএম!”
তবে এরই মধ্যে বামেদের জন্য স্বস্তির খবর, কলকাতা থেকে প্রবীণ নেতা অশোক ঘোষের হস্তক্ষেপে কেরলের চার আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেও পিছিয়ে এসেছে ফরওয়ার্ড ব্লক।
যদিও ফরওয়ার্ড ব্লক কেরলে বাম জোটে নেই, তবু সামগ্রিক ভাবে বাম ঐক্যের সঙ্কট ঠেকাতে অশোকবাবুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy