চায়ে পে চর্চা নয়, স্রেফ চা খেতে এক অতি সাধারণ দোকানে ঢুকে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ‘তুলসী’ ইরানি। স্তম্ভিত দোকান মালিক সুজিত দেবও। নিজের দোকানে অভিনেত্রী-মন্ত্রীকে দেখে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করতে চান তাঁকে। রসগোল্লা ফিরিয়ে নিমকি চেয়ে নেন তাঁর ভিভিআইপি খদ্দের। ক’টি সন্দেশও কিনে নিয়ে যান তাঁর দোকান থেকে।
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে যতটা, তাঁর তার চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা হিন্দি ধারাবাহিকের ‘তুলসী’র দৌলতে। আজ ফের এ কথার প্রমাণ মিলল। করিমগঞ্জ শহরে তাঁকে দেখতে ভিড় উপচে পড়ে। বহু তরুণ-তরুণী তাঁর ফটো তুলতে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। সভায় মন্ত্রী ইরানি রামচন্দ্রের বনবাসের কথা টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘সে তো ছিল ১৪ বছরের। আর অসমে কংগ্রেস সরকারের আমলে জনগণ পনেরো বছর ধরে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।’’ এই সরকার ফের ক্ষমতায় এলে বনবাসের সময়সীমা দীর্ঘতর হবে বলে তিনি ভোটদাতাদের সতর্ক করে দেন। তাঁর ভাষণে স্মৃতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার দুঃস্থদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস প্রদান করবে। বেকারদের কর্ম সংস্থানের জন্য নিযুক্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সভা শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হেলিপ্যাডের দিকে যাওয়ার সময় আচমকাই শহরের মেন রোডে সুজিতবাবুর দোকানে ঢুকে পড়েন। সঙ্গে ছিলেন উত্তর করিমগঞ্জ আসনের বিজেপি প্রার্থী মিশন রঞ্জন দাস। দোকানের অন্যান্য খদ্দেররা তাঁকে ঘিরে ধরেন। সঙ্গে যোগ দেন পথচলতি জনতা। তাঁরা বরাকের জরাজীর্ণ পথের কথা তাঁকে জানান। সুজিতবাবুও উপত্যকার অনুন্নয়নের দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মন্ত্রী জানিয়ে যান, মিশন দাস জিতলে ফের করিমগঞ্জে আসবেন। ফের সুজিতবাবুর দোকানে চা খাবেন। এলাকার সমস্যা জেনে সমাধানের চেষ্টা করবেন।
শিলচরে চা না খেলেও স্মৃতি ইরানি তাঁর হিন্দি ভাষণের ফাঁকে ফাঁকে বাংলা বলে সকলকে আকৃষ্ট করেন। বিদ্যুত, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, পানীয় জল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ-ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে গগৈ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান তিনি। প্রতিশ্রুতি দেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের আদলে বরাক বোর্ড গঠন করা হবে। ব্রডগেজে শিলচরকে যুক্ত করার কৃতিত্ব দাবি করে স্মৃতি ইরানি জানান, ‘‘এ হল নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাজের গতি। অসমে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সেই গতিই তীব্রতর হবে।’’
এর আগে শিলচরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ পাল কংগ্রেসের ভাষাদরদী হয়ে ওঠা নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘কার আমলে ভাষার জন্য বরাকে আন্দোলন করতে হয়েছিল, কারা সত্যাগ্রহীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, কেন আজও মেহরোত্রা কমিশনের রিপোর্ট বেরোল না কংগ্রেসকে এ সব প্রশ্নের জবাব আগে দিতে হবে।’’ স্মৃতি ইরানিকেও বরাক উপত্যকার একাদশ শহিদের কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি বক্তৃতা করতে গিয়ে ভাষাশহিদদের স্বাধীনতা সংগ্রামী বানিয়ে দেন। সভায় ভাষণ দেন দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় এবং জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিমলেন্দু রায়ও।