নেপালে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে উদ্ধারকাজ। আজ হিমালয়ের তুষারঝড় বিধ্বস্ত অংশে পৌঁছে গিয়েছেন নেপালি সেনা। বরফে চাপা পড়ে রয়েছে বহু অভিযাত্রীর দেহ। ফলে উদ্ধারকাজে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে ওই সেনাদের। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩৯ ছুঁয়েছে। আহত ১৭৫। নিখোঁজ বহু অভিযাত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ট্রেকিংয়ে যাওয়া বাঙালি অভিযাত্রীদের খোঁজ মেলেনি।
নেপালে উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত এক সেনাকর্তা জানান, নেপাল সরকার থেকে উদ্ধারকাজের জন্য প্রায় ১২টি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। বরফ খুঁড়ে সরিয়ে বের করতে হচ্ছে অভিযাত্রীদের মৃতদেহ। এমন ভাবে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে যাতে বরফে কোনও মৃতদেহ চাপা না পড়ে থাকে। প্রথম বার এই ধরনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন তাঁরা।
এই সময় নেপালে পর্বতারোহণের আদর্শ মরসুম। ফলে ট্রেকিংয়ের জন্য ভিড় জমায় অভিযাত্রী দল। তুষারঝড়ের অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত নেপালের মানাং ও মুস্তাং জেলা। ঝড়ের মুখে পড়েও যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁরা এখনও আতঙ্কিত। সঙ্গে জানালেন তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও।
এই নিয়ে নিজের দলের সঙ্গে চার বার নেপালে এলেন জার্মানির এক বৃদ্ধ অভিযাত্রী হর্স্ট উলরিখ। তবে এ বারের অভিজ্ঞতাটাই অন্য রকম। বেঁচে ফিরেছেন। তার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। তবে প্রবল ওই ঝড় তাঁর চোখের সামনেই উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে তাঁর সহযাত্রীদের। ফলে বেঁচে গিয়েও চোখেমুখে আতঙ্কের রেশ কাটছে না ওই বৃদ্ধের। ইজরায়েলি মহিলা অভিযাত্রী দলের সঙ্গে ছিলেন নেপালি শেরপা মানচাং লামা। তিনি বলেন, “কোনও আগাম সতর্কতা ছাড়াই প্রবল তুষারঝড় আছড়ে পড়ে। সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। সেই সময় দু’টো বড় পাথরের মাঝে আমি আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওই অবস্থায় সারা রাত ছিলাম। পরের দিন সকালে উঠে দেখি, বরফের পুরু স্তরে আমার পা আটকে গিয়েছে। পরে অনুভব করলাম, ওই বরফ যতক্ষণ না গলছে, ততক্ষণ ওই ভাবেই আটকে থাকতে হবে। ব্যাগে থাকা শুকনো খাবার খেয়ে প্রায় ৪৮ ঘন্টা বেঁচে থাকতে পেরেছি।”
পল শেরিডান নামে ব্রিটেনের এক পুলিশ অফিসারও নেপালে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। প্রাণে বেঁচেও গিয়েছেন। তবে তিনি নেপালের তুষার ঝড়ে তাঁর ও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, এক নেপালি কিশোরের মুখ বরফে জমে গিয়েছিল। তার চিবুক থেকে ঝুলছিল কাচের মতো ধারালো বরফ খণ্ড। ফলে মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে ওই কিশোরের মুখ। ওই দৃশ্য দেখে চমকে যান পল। এর পর তিনি ও ওই কিশোর ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। তাঁরা ভেবেছিলেন হয়তো মরেই যাবেন। তবে বেঁচে গেলেও তিনি তাঁর সঙ্গীদের খোঁজ পাননি। হয়তো তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নেপাল প্রশাসন সূত্রে খবর, একটি উদ্ধারকারী দল হেলিকপ্টারে সন্ধান চালাচ্ছিলেন। সেই সময় বরফে চাপা ১২টি দেহ দেখতে পান তাঁরা। প্রায় ২৮৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy