Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গ্রাহক আইডি বদলে রেলের ব্যাঙ্কে প্রতারণা, জালে কর্মী

রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতির পরে এ বার রেলের সমবায় ব্যাঙ্কেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ! তিল তিল করে টাকা বাঁচিয়ে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সমবায় ব্যাঙ্কে একটি স্থায়ী আমানত করেছিলেন তাপসকুমার তা নামে এক ব্যক্তি। হঠাৎই তিনি জানতে পারেন, তাঁর গচ্ছিত টাকার ভিত্তিতে অন্য এক জনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেন ব্যাঙ্ককর্তারা। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে কেউটে! তদন্তে দেখা যায়, শুধু তাপসবাবু নন, আরও অনেকের টাকা নিয়ে এ ভাবে তঞ্চকতা করা হয়েছে।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতির পরে এ বার রেলের সমবায় ব্যাঙ্কেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ!

তিল তিল করে টাকা বাঁচিয়ে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সমবায় ব্যাঙ্কে একটি স্থায়ী আমানত করেছিলেন তাপসকুমার তা নামে এক ব্যক্তি। হঠাৎই তিনি জানতে পারেন, তাঁর গচ্ছিত টাকার ভিত্তিতে অন্য এক জনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেন ব্যাঙ্ককর্তারা। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে কেউটে! তদন্তে দেখা যায়, শুধু তাপসবাবু নন, আরও অনেকের টাকা নিয়ে এ ভাবে তঞ্চকতা করা হয়েছে। তার মধ্যে আবার এক মৃত গ্রাহকের আমানত নিয়ে কারচুপি দেখে চোখ কপালে উঠেছে ব্যাঙ্ককর্তাদের। তাঁরা জানান, ব্যাঙ্কের এক গ্রাহক সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। আগেই তিনি নিজের স্থায়ী আমানতের টাকা তুলে নিয়েছিলেন। তবু তাঁর আমানত-নম্বরের ভিত্তিতেও বেমালুম ঋণ দেওয়া হয়েছে!

পরের পর কারচুপি ধরা পড়ায় ওই সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করার আগেই অবশ্য অভ্যন্তরীণ তদন্তে তিন অভিযুক্ত কর্মীকে সাসপেন্ড ও বদলি করে দেয় ব্যাঙ্ক। মঙ্গলবার একইই অভিযোগে রেল পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার পিনাকী দত্তকে গ্রেফতার করেছে।

কেউটে বেরোল কী ভাবে? পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সমবায় ব্যাঙ্কের সদর দফতর শশিভূষণ দে স্ট্রিটে। ব্যাঙ্কটির বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটি আছে শিয়ালদহে। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও ওই সমবায় ব্যাঙ্কের পরিষেবা পান। ফলে সেখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, তাপস তা নামে এক গ্রাহক সম্প্রতি ব্যাঙ্কের শিয়ালদহ শাখার চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার আনন্দকুমার রায়ের কাছে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তাপসবাবু জানান, ব্যাঙ্ক তাঁর স্থায়ী আমানতের বিনিময়ে অন্যকে ঋণ দিয়েছে। ব্যাঙ্ক অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্তে নামে। দেখা যায়, তাপসবাবুর অভিযোগ সত্য। এবং শুধু এক জন নয়, একাধিক গ্রাহকের স্থায়ী আমানত থেকে অন্যদের দেদার ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেই ঋণের কারচুপির পরিমাণও নিতান্ত কম নয়। প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।

তদন্ত রিপোর্টে ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার পিনাকী দত্ত এবং দুই কর্মী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সপ্তর্ষি বসুর নামে অভিযোগ করা হয়। ব্যাঙ্কের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার তার পরেই আনন্দবাবু বিষয়টি জানিয়ে সংস্থার সদর দফতরে রিপোর্ট পাঠান। সেই সঙ্গে অভিযোগ দায়ের করেন শিয়ালদহ জিআরপি থানাতেও।

এক জন গ্রাহকের টাকা থেকে অন্যকে ঋণ দেওয়া হল কী ভাবে?

রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় যেমন রেলেরই বিভিন্ন স্তরের অফিসার-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এ ক্ষেত্রেও আঙুল উঠেছে ব্যাঙ্কের কিছু কর্মীর দিকেই। ওই সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, প্রত্যেক গ্রাহকের একটি ‘আইডি নম্বর’ থাকে। সেই আইডি নম্বর দিলে কম্পিউটারে গ্রাহকের নাম, ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য ফুটে ওঠে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই আইডি নম্বরকে হাতিয়ার করে তিন ব্যাঙ্ককর্মী গ্রাহকদের তথ্যে কারচুপির সঙ্গে সঙ্গে আইডি নম্বরে শেষ দিকের কয়েকটি সংখ্যা বদলে দিয়েছেন। তার পরে আসল গ্রাহকের স্থায়ী আমানত থেকে ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন তাঁদের।

অভিজ্ঞ ব্যাঙ্ক অফিসারদের বক্তব্য, কর্মীদের যোগসাজশ ছাড়া এই কারচুপি অসম্ভব। বিষয়টি কী ভাবে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সমবায় ব্যাঙ্কের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এর আগেও তাদের শিয়ালদহ শাখায় কোটি কোটি টাকা কারচুপি হয়েছে। সব কিছু জেনেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি।

কী বলছেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ? শশিভূষণ দে স্ট্রিটে ওই সমবায় ব্যাঙ্কের সদর দফতরের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতারণা-কারচুপির অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। স্বীকার করেছেন শিয়ালদহ শাখার ক্যাশিয়ার পিনাকী দত্তের গ্রেফতারির বিষয়টিও। তবে তিনি বলেন, “এর আগে ব্যাঙ্কের শিয়ালদহ শাখায় কারচুপির ঘটনা ঘটেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

diksha bhuinya rail cooperative bank bank fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE