গদি ছাড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে নারাজ। প্রদেশ সভাপতি বলছেন, সেই সম্ভাবনা ৫০-৫০। বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলছেন, শীঘ্রই সব বিবাদ শেষ হবে। সব মিলিয়ে সুতোয় ঝুলছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের ভবিষ্যৎ। তবে এই রাজ্যে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে আকার নিয়েছে, তাতে গগৈয়ের অপসারণই অনিবার্য হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
অসমের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানাতেও মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবি উঠেছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে। লোকসভা ভোটে এই তিন রাজ্যেই দলের ভরাডুবি হয়েছে। গগৈয়ের মেয়াদ তবু দু’বছর বাকি। কিন্তু মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন চলতি বছরের শেষেই। মোটের উপর শীর্ষ নেতৃত্ব এমন নেতা চাইছেন, যাঁদের হাত ধরে এই তিন রাজ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কংগ্রেস। এ দিকে, অসম বা মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদের অনেক দাবিদার থাকলেও হরিয়ানায় ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার যোগ্য বিকল্প মিলছে না।
শুক্রবার রাতে সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল এবং এ কে অ্যান্টনির সঙ্গে বৈঠক করেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। আজ সনিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। দেখা করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সাক্ষাৎ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, মনমোহনই পৃথ্বীরাজকে প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী করে এনেছিলেন। তাঁকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোতেও তাঁর সম্মতি ছিল। সেই সময়ে মহারাষ্ট্রের প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছিলেন প্রণববাবু। এ বার সেই কাজটিই করতে মুম্বই পাঠানো হচ্ছে এ কে অ্যান্টনি এবং গুলাম নবি আজাদকে।
ইতিমধ্যে সনিয়াও মহারাষ্ট্রের অন্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার মুখ্যমন্ত্রী পদে সুশীলকুমার শিন্দেকে চান। অতীতে পওয়ারের অপছন্দের নেতাদেরই মুখ্যমন্ত্রী করেছে কংগ্রেস। কিন্তু বিপদের সময় সেই পথে হাঁটতে চায় না তারা। শিন্দে ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী পদে উঠে আসছে বালাসাহেব থোরাট ও রাধাকৃষ্ণ ভিখে পাটিলের নাম।
সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে অসমে এআইসিসি-র প্রতিনিধি হিসেবে মল্লিকার্জুন খড়্গেকে পাঠানো হবে। তার পরেই হাইকম্যান্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। গত বছর থেকেই রাজ্যের মন্ত্রী ও বিধায়কদের একাংশ গগৈয়ের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে নেতৃত্ব বদলের দাবি জানিয়ে চলেছেন। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর পুরোভাগে আছেন একদা গগৈয়ের ডান হাত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও তিন মন্ত্রী গৌতম রায়, সিদ্দেক আহমেদ ও অর্ধেন্দু দে। এমনকী হিমন্ত পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বলে গৌতমবাবু ঘোষণা করে দিয়েছেন।
তা সত্ত্বেও এআইসিসি গগৈকেই থেকে যেতে বলেছিল। তাঁকে মন্ত্রিসভায় রদবদলেরও সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়। কারণ, মেয়াদ পূর্ণ করার আগে গগৈকে সরানো হলে বিধানসভায় দল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা নিয়ে এত দিন ধন্দে ছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। অবস্থা সামলাতে হিমন্তকে উপমুখ্যমন্ত্রী করে তাঁর হাতে অর্থ বা স্বরাষ্ট্র দফতর তুলে দিতে চেয়েছিল এআইসিসি। কিন্তু হিমন্ত-সহ বিক্ষুব্ধরা জানান, তাঁরা কেউ গগৈ মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। হিমন্ত নিজেও গগৈয়ের বাড়ি গিয়ে পদত্যাগের ইচ্ছা জানিয়ে দেন। স্পষ্ট হয়ে যায়, চাপ দিয়ে ফাটল বোজানো যাবে না।
গত কাল হিমন্তকে দিল্লি ডেকে পাঠান শীর্ষ নেতৃত্ব। আজ গুয়াহাটি ফিরেই হিমন্ত তাঁর শিবিরের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বলেন, “শীঘ্রই সব বিবাদের অবসান হবে। হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেব।” প্রদেশ সভাপতি ভুবনেশ্বর কলিতা জানান, “নেতৃত্ব বদলের সম্ভাবনা ৫০-৫০।” গগৈকে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলের সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য কী। গগৈ বলেন, “আমি নিজের ব্যাপারেই কিছু নিশ্চিত জানি না তো অন্য রাজ্যের কথা কী বলব! হাইকম্যান্ড যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।” অসমে মুখ্যমন্ত্রী বদলের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি এ নিয়ে হ্যাঁ বা না কিছু বলব না।”
তুলনায় হুডার গদিতে কাঁটা অনেক কম। আজ সকালে সনিয়ার সঙ্গে আধ ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনিও। কুমারী শৈলজা বা চৌধুরি বিজেন্দ্র সিংহের মতো বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীরা কেউই হুডার মাপের নন বলে অধিকাংশ কংগ্রেস নেতার মত। হরিয়ানার ভারপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদও হুডাকে সরানোর পক্ষে নন। এখন সনিয়া কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy