Advertisement
E-Paper

ঘরের তাগিদেই কারাটের বৈঠকে নেই নবীন-প্রফুল্ল

’বছর আগে কোঝিকোড়ে পার্টি কংগ্রেসের দলিলে আঞ্চলিক দলগুলির রাজনীতিকে সুবিধাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছিল সিপিএম। এ বারেও অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় বিকল্প গড়তে গিয়ে প্রথমেই সমস্যায় পড়লেন প্রকাশ কারাট।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৭:২৭

’বছর আগে কোঝিকোড়ে পার্টি কংগ্রেসের দলিলে আঞ্চলিক দলগুলির রাজনীতিকে সুবিধাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছিল সিপিএম। এ বারেও অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় বিকল্প গড়তে গিয়ে প্রথমেই সমস্যায় পড়লেন প্রকাশ কারাট।

লোকসভা নির্বাচনের জন্য তৃতীয় বিকল্পের রণকৌশল ঠিক করতে গত কালই প্রথম ১১টি দলের বৈঠক বসেছিল। কিন্তু সেখানে অনুপস্থিত বিজু জনতা দল ও অসম গণ পরিষদ। নবীন পট্টনায়ক ও প্রফুল্ল মহন্ত এই বৈঠকে যোগ দেননি। প্রকাশ কারাট একে গুরুত্ব দিতে চাননি। যুক্তি দিয়েছেন, দুই দলের নেতারাই তাঁদের সঙ্গে আছেন। কিন্তু বিজু জনতা দল ও অসম গণ পরিষদের অন্দরমহলের খবর, এখনও দলের শীর্ষ নেতারা বামেদের এই জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করতে পারেননি। নিজেদের রাজ্য রাজনীতির কথা ভেবেই তাঁরা এখনও দোটানার মধ্যে রয়েছেন। তাই নবীন ও প্রফুল্ল মহন্তরা গত কালের বৈঠকে যোগ দেননি।

কোথায় সমস্যা নবীন পট্টনায়কের? বিজেডি সূত্রের বক্তব্য, পস্কো ইস্পাত প্রকল্প নিয়ে বামেদের প্রবল বিরোধিতা নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন নবীন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজ্যে শিল্পায়ন চাইছেন। দীর্ঘ টালবাহানার পর গত মাসে ছাড়পত্র পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পসকো সংস্থার এই প্রকল্প। যেখানে ৫২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। নবীন মনে করছেন, পস্কোর ওই কারখানা তৈরি হলে রাজ্যে শিল্পের ছবিটাই বদলে যাবে। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রথম থেকেই জমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে পস্কোর বিরোধিতা করছেন বামেরা। প্রকল্পটি ছাড়পত্র পেয়ে গেলেও বামেরা বিরোধিতার সুর নরম করেননি। বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শিল্পায়নের প্রশ্নে তাঁর সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন নবীন।

একই ভাবে বিজেপির সঙ্গে যাবেন, নাকি বামেদের জোটে যাবেন, তা নিয়ে এখনও মনস্থির করতে পারেননি প্রফুল্ল মহন্ত। তিনি নিজে বিজেপি-র সঙ্গে জোট করার দিকে বেশি উৎসাহী। অগপ সূত্রের খবর, মহন্তর ঘনিষ্ঠ এক নেতা সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু দলের আর একটি গোষ্ঠী বিজেপির সঙ্গে জোট করার বিরুদ্ধে। তাঁরা মনে করছেন, বিজেপির মতো বড় দলের সঙ্গে জোট করলে আখেরে অগপ-রই ক্ষতি। তাতে অগপ-র নিজস্ব রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়। কারণ দু’দলেরই ভোটব্যাঙ্ক এক। সাংগঠনিক ভাবেও বড় দল সব সময়ই ছোট আঞ্চলিক দলগুলির উপরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। অগপ-র এক নেতা বলেন, “অসমীয়া সংখ্যালঘুদের একটা অংশ আমাদের ভোট দেয়। কিন্তু যত বারই বিজেপির সঙ্গে জোট হয়েছে, তত বারই সেই ভোট হারিয়েছি। উল্টো দিকে বিজেপি নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে।”

শুধু নবীন বা মহন্ত নন। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার বাবুলাল মরান্ডিও গত কালের বৈঠকে হাজির হননি। তিনি দলের প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিলেন। এই ১১টি দলের বাইরে পঞ্জাব পিপলস পার্টি তালকাটোরা স্টেডিয়ামের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশে যোগ দিয়েছিল। শিরোমণি অকালি দল ভেঙে তৈরি হওয়া এই দলটির সঙ্গে পঞ্জাবে আসন সমঝোতায় যাচ্ছে সিপিএম। কিন্তু সেই দলের নেতা মনপ্রীত বাদলও কাল হাজির ছিলেন না। সিপিএমের ব্যাখ্যা, মনপ্রীত এখন বিদেশে। তৃতীয় বিকল্প খাড়া করার জন্য এর আগে এইচ ডি দেবগৌড়া, নীতীশ কুমার, প্রকাশ কারাটরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে বাকি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজটা কারাটকেই দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকেই নবীন ও মহন্তর অনুপস্থিতিতে কারাট অস্বস্তিতে পড়েছেন। তিনি মুখে বলছেন, ওঁরা পাশেই রয়েছেন। কিন্তু নিজেরা না এলেও কেন ওই দু’জন প্রতিনিধি পাঠালেন না, সেই প্রশ্ন থাকছে।

সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে এই সমস্যা থাকবেই। কখনও মুলায়ম সিংহের মতো কেউ কংগ্রেসের দিকে চলে যাবেন, কখনও অন্য কেউ বিজেপির দিকে ঝুঁকবেন। তাই ২০১২ সালে কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসের দলিলে এদের রাজনীতিকে সুবিধাবাদী বলা হয়েছিল। পলিটব্যুরোর এক নেতা বলেন, “দিনের শেষে আঞ্চলিক দলগুলো বুর্জোয়া পার্টি। গ্রামের ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করে। সরকারে এলে এরা নয়া উদারবাদী নীতিই মেনে চলে। তাই বামেদের সঙ্গে মতাদর্শগত ফারাক থেকেই যায়। কেন্দ্রে জোট রাজনীতির ধর্ম মেনে এরা কেউ কংগ্রেসের সঙ্গে, কেউ বিজেপির সঙ্গে ঘর করেছে। কংগ্রেস এবং বিজেপি-ও নিজেদের জোট মজবুত করতে এদের সঙ্গে হাত মেলায়। কাজেই আজ যারা আমাদের সঙ্গে, তারা যে আগামিকালও থাকবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। আবার পরিস্থিতি অনুকূল হলে নতুন কেউ এসে জুটেও যেতে পারে।”

তা হলে এই দলগুলোর সঙ্গে হাত মেলানো কেন? সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, এক দিকে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে হবে। অন্য দিকে তৃণমূলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বোঝাতে হবে, একা মমতা নন, সিপিএমও জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। পার্টি কংগ্রেসেও সেই রণকৌশলই ঠিক হয়েছিল বলে সিপিএম নেতাদের যুক্তি। রাজনৈতিক দলিলে বলা হয়, আঞ্চলিক দলগুলি এই পক্ষ ওই পক্ষ করবে। কিন্তু কংগ্রেস-বিজেপির বিরুদ্ধে তৃতীয় বিকল্প খাড়া করে লড়তে গেলে এই দলগুলোর সঙ্গে হাত মেলানো ছাড়া উপায় নেই।

karat kozhikode
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy