Advertisement
২০ মে ২০২৪

তোমায় হৃদমাঝারেই রাখব

‘ভালবাসা পেলে পায়সান্ন কেন কিনে খাব! যে দিকে দু’চোখ যায় চলে যাব!’ ভালবাসার অনেক ভাল কথা বললেন মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।বুকের ভেতর ছোট্ট চড়ুইটা প্রায়ই কিচিরমিচির শুরু করে দেয়। টের পায় তোর্সা। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আলাপ হয়েছিল ভিনপ্রদেশীয় সমবয়সি রায়ান শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। নেটে আলগা ক্রাশ-টাও দিব্যি জমে গেল। তার পর মোবাইল নম্বর দেওয়া-নেওয়াও হল। কখনও ‘হোয়াটস অ্যাপ’।

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

“লভ ইজ দ্য স্ট্রেঞ্জ বিউইল্ডারমেন্ট

হুইচ ওভারটেকস ওয়ান

পার্সন অন অ্যাকাউন্ট অফ অ্যানাদার পার্সন”

—জেমস থার্বার

চ্যাটিং অ্যান্ড অ্যাওয়েটিং...

বুকের ভেতর ছোট্ট চড়ুইটা প্রায়ই কিচিরমিচির শুরু করে দেয়। টের পায় তোর্সা। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আলাপ হয়েছিল ভিনপ্রদেশীয় সমবয়সি রায়ান শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। নেটে আলগা ক্রাশ-টাও দিব্যি জমে গেল। তার পর মোবাইল নম্বর দেওয়া-নেওয়াও হল। কখনও ‘হোয়াটস অ্যাপ’।

দেখা হওয়াটা এমন কিছু দুরূহ ছিল না। কিন্তু হয়নি। মোবাইল আর মেসেঞ্জারে বিস্তর আড্ডা হয়েছে। ওই মোবাইলটাই যেন এক কমফর্ট জোন দাবি করে, যেখানে ওরা সম্পূর্ণ আনকোরা দু’জন মানুষ অন্য এক ধরনের স্বস্তি ও সহমমির্তা খুঁজে নেয়। কিছুটা স্পর্ধা, কিছুটা প্রশ্রয়ও।

কখনও কী ভীষণ কৌতূহলী হয়ে ওঠে তোর্সা। ঢের হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে ফোনাফুনি। আসুক না একবার সে দিনটা, যে দিন সমমনস্ক দুই বন্ধুর দেখা হবে স্বপ্নময় নির্জন দুপুরে। কী পরবে তোর্সা—শাড়ি, না সালোয়ার-কুর্তা? রায়ান কি জিন্স-টি শার্টে ক্যাজুয়াল থাকবে, না কি ট্রাউজারস ও ফুল স্লিভস? তোর্সা যদি নিজের সুবিধামত নন্দন চত্বরে দেখার স্থান নির্ধারণ করে, তার পর কোথায় বসবে দুজনে? মোহরকুঞ্জের বেঞ্চে, না কি নন্দনে সিনেমার টিকিট কেটে প্রেক্ষাগৃহের অন্দরে? রবীন্দ্রসদনের সিঁড়ি বা ফোয়ারার কাছে ফালতু বসবে না মোটেই। তার চেয়ে এক্সাইড মোড়ের বিশাল খাবারের দোকানটার বাতানুকূল পরিবেশে বসা যেতে পারে। দু’প্লেট ভেজ বার্গার আর ক্যাপুচিনো নিয়ে এক্কেবারে মুখোমুখি। দিনটা যদি ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়? হেব্বি হয়! হাল্কা লজ্জাও হয়তো করবে। কিংবা সংকোচ। প্রথম দেখা হবে তো! ভাবতেই আপনমনে নিজের ব্লাশ করা মুখটা যেন নিজেই দেখতে পেল। আচ্ছা, চাক্ষুষ মোলাকাতের পর যদি একজনের আর একজনকে তেমন ভাল না লাগে? নেটওয়ার্ক, ছবি কি চ্যাটের পরও যদি বিস্তর ফারাক থাকে বাস্তবে! তবু যা-ই হোক, ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-টায় দুজনে কিছুটা সময় অন্তত কাটাবে। সঙ্গে নিয়ে যাবে লাল গোলাপ, ক্যাডবেরি আর একটা সুন্দর গ্রিটিংস কার্ড।

“ট্রু লভ ইজ দিস ডিফারস

ফ্রম গোল্ড অ্যান্ড ক্লে

দ্যাট টু ডিভাইড ইজ

নট টু টেক অ্যাওয়ে”

—শেলি

হৃদয় বসন্তবনে...

পাশ দিয়ে কোনও সুদর্শন পুরুষ হেঁটে গেলেই বুকে ধাক্কা খায় চুয়া। এমনকী এখনও, এই মধ্য চল্লিশেও। সেই নেহাৎই পনেরো-ষোলোর কোঠায়— সে অর্থে প্রেম তখনও কড়া নাড়েনি, তবে কোচিং ক্লাসের সুপ্রতিমদা’র প্রতি একটা ক্রাশ ছিল। ফ্রক ছেড়ে ডিজাইনার স্কার্টে পৌঁছে ভাল লাগার অনুভূতিও মাথাচাড়া দিতে লাগল। সদ্য কলেজে ঢুকে টি কে বি-র ক্লাসে তাঁর সেই ভরাট গলায় পড়ানো শুরু হতেই কী চাপা উত্তেজনা, কী রোমাঞ্চ! টল ডার্ক হ্যান্ডসাম বলতে যা বোঝায়— টি কে বি একেবারে খাপে খাপ। আর কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন ইন্দ্রাশিস কাকুকে দেখে কত রাত যে স্রেফ ঘুমোতে পারেনি চুয়া! ইন্দ্রাশিস কাকুকে একদিন না দেখতে পেলেই মনটা কেমন গুমোট হয়ে যেত। আরও একটু পরে বাস্তব মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে চুয়ার ক্রাশ শুরু হল সেলেব্রিটিদের প্রতি। রবি শাস্ত্রী, রাহুল দ্রাবিড়, সলমন, আমির, কমল হাসান, সন্তুরের শিবকুমার শর্মা তো তবলার জাকির হোসেন। সেই টিন এজ জীবনে আরও ক্রাশ ছিল।

বিয়ের পর এক সন্তানের মা চুয়া। পাশ দিয়ে কোনও সুদর্শন পুরুষ হেঁটে গেলেই চুয়ার হৃদয়ে সামান্য একটু দোলা লাগেই। আজও হয়। এমনকী, বিয়ে করা বর সত্রাজিৎ পাশে থাকলেও হয়। তবে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও পরকীয়া ঘেঁষা নয়। ওই মনে মনে ফ্যান্টাসাইজ করা আর কী। চুয়া বেশ বোঝে, এর সঙ্গে বিবাহিত জীবন, সন্তানপালন বা শারীরিক সম্পর্কের যোগ নেই। কিশোরীবেলায় যখন কারও প্রতি ক্রাশ জন্মাত, তখন তাকে নিয়ে মনে আকুলিবিকুলি এস্রাজ বাজত তাকে নিয়ে স্বপ্ন-খেলা অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল। বিবাহিত চুয়ার চরিত্রগত পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। স্বামী সত্রাজিৎকে নিয়ে খুশিও সে। ক্রাশ তো আসলে আধা-বাস্তব আধা-ফ্যান্টাসির এক রূপকথার জগৎ। সত্রাজিতের সঙ্গে সামনের ভ্যালেন্টাইন ডে-তে ক্রেডিট কার্ড ভেঙে নামি সোনার দোকানের ‘দ্যুতি ডায়মন্ড কালেকশন’ থেকে হিরের আংটিটা কিন্তু এ বছর আদায় করতেই হবে। কোনও জারিজুরি শুনবে না সে।

“ফাইন্ড মি আ রিজনেবল লাভার অ্যান্ড আই উইল গিভ ইউ হিজ ওয়েট ইন গোল্ড”

—প্লুটাস

সৌহার্দ্য প্রস্তাব...

যে ভাবে কথারা আসে যায়। নব্য সখ্যে ইচ্ছেমতন, দিগ্বিদিক। ফেসবুকের খেরো খাতায় তেমনই ভিড় জমে। বন্ধু-মোড়কে আলটপকা সামান্য কিছু স্মৃতি যাচ্ছেতাই রকম ঝাপটা মারল মনের গায়ে। কিছুটা মন-কেমনও। এক্কেবারে ফেডআউট হয়ে গেছিল স্মৃতি থেকে। রুদ্রদার প্রতি সাময়িক ইনফ্যাচুয়েশনই ছিল দেবযানীর। এ সব মনে থাকার কথাও নয়। কেউ মনেও রাখে না এ সব।

রুদ্রকে মোটেই চিনতে পারেনি দেবযানী। ফেসবুক প্রোফাইলটায় চোখ বোলাতেই মনে পড়ে যেতে লাগল সব কিছু। রুদ্র একটা মেসেজও লিখে পাঠিয়েছিল ওর টাইমলাইনে—“সেভেনটিন ইয়ার্স ব্যাক, ওয়ান ফাইন ডে আই হ্যাভ প্রোপোজড ইউ। রিমেমবার?” সতেরো বছর বড় কম সময় নয়। প্রায় দেড় যুগের কাছাকাছি। শ্রীপঞ্চমীর দিন পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে সরস্বতী ঠাকুরকে অঞ্জলি দেওয়ার সময়ে ফুল-বেলপাতা কুচির সঙ্গে একটা হাতে-লেখা চিরকুট গুঁজে দিয়েছিল প্রায় মজা করেই। চিরকুটে লেখা, ‘ভালবাসি তোমায়’। কোনও প্রস্তুতি ছাড়া, ন্যাকামি-বর্জিত, স্পষ্ট, জোরালো, সরাসরি। সেই মাঘের শ্রীপঞ্চমীর আগে-পরেই ছিল ‘প্রেমদিবস’। তখন আজকের মতো এতটা বাণিজ্যিক লোক-দেখানো হয়ে ওঠেনি।

রুদ্রর সঙ্গে ভাব-ভালবাসা একটু গড়াতেই মনের মধ্যে অন্য ইচ্ছেও তখন উঁকি মারত দেবযানীর। একটু হাত ধরা, আঙুলে আঙুল ছোঁয়াছুঁয়ির মতো আপাতপ্রেমের স্টেটমেন্ট নয়। আরও একটু সাহসী হতে ইচ্ছে করত দেবযানীর। হিন্দি সিনেমায় যেমন দেখেছে, কোনও ঝড়বাদলের রাতে প্রেমিক-প্রেমিকা খড়ের বিছানায় বা কোনও হন্টেড হাউসে। তার পর ইন্টু সিন্টু। তবে রুদ্র ক্যাজুয়াল সেক্সে একেবারেই বিশ্বাসী নয়। সম্পর্কের শুরুতে তাড়াহুড়ো করে শারীরিক সম্পর্কে যেতে আগ্রহী ছিল না মোটেই। তবে ওর মধ্যে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াটা ছিল একটু নীতিবাগীশ টাইপের।

রুদ্রর সঙ্গে কত দিন দেখা হয়নি। মায়াবী ফেসবুকের বন্ধু-মোড়কে আজ এত দিন পর ওর পাঠানো সৌহার্দ্য-প্রস্তাব। আচম্বিতে এই যোগাযোগটা বুঝি বা অবশ্যম্ভাবী ছিল। ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পড়তেই আরও অদ্ভুত ভাবে, কাকতালীয় ভাবে ঠাহর হল, আজও তো ভ্যালেন্টাইন ডে-ই!

“ফার্স্ট লভ ইজ ওনলি

আ লিটল ফুলিশনেস

অ্যান্ড আ লট অফ কিউরিওসিটি”

—বার্নার্ড শ

কেন যে লিখেছিলাম এ কথা, আজ আর মনে নেই। বেশ কয়েক বছর আগে আমার লেখা একটা কবিতার লাইন ছিল—“সম্পর্ক গাঢ় হলেই অকস্মাৎ দুঃখবোধে কেঁপে ওঠে একাকিত্ব”! কেন যে লিখেছিলাম এ কথা! সেই মগ্ন ধ্যান নিয়ে যত অরূপ-কথন। সোনার জিয়নকাঠির ছোঁয়ায়, কী ছুঃ-মন্তরে আলটপকা ঘুম উধাও। রুপোর পালঙ্কে খসে পড়ে নিঃশব্দ গমন। সেই যে ছোট্টবেলায় পড়া সেই সব রূপকথার মতো—যার অচিন স্পর্শে স্বপ্নে দেখা সেই রাজকুমার এসে ঘুম ভাঙাবে স্বপ্নঘোরে থাকা রাজকন্যার। সেই প্রেম— যাকে অনুভব করা, উপলব্ধি করা! সে জন্য যা কিছু পরিচর্যা, শুশ্রূষা সবই নিয়মমাফিক।

অদ্ভুত মাদকতা, এক অন্য মদিরতা। যেন আয়নার সামনে অবয়ব রেখে গেল অকপট সেই স্বীকারোক্তি। অনায়াস উচ্চারিত নিপাট আবেগঘন এক স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিমা— কী? না, ভালবাসি তোমায়! বহু-ব্যবহারে জীর্ণ, ক্লিশে, আদ্যিকালের বহুল প্রচলিত এক শব্দবন্ধ। উঁকি দিল বিপুল অহংকার, অন্য দিকে কী আকুল নিবেদন! কেউ বুঝি শিহরন রেখে গেল পরম বিশুদ্ধতায়। নিবেদিত ভাল লাগা ভালবাসা বয়ে আনে। তখনই হৃদমাঝারে ছলাৎছল! ব্যাকুলতা। কিছুটা প্রশ্রয়। রং-ঢং। সেই ন্যায়-অন্যায় বোধ, নিবিষ্টতা এ ভাবেই। আজন্মকাল। অস্থিরতা ঘন হয়ে আসে। নীরব মুহূর্ত, চুপিসাড়। লালিত ইচ্ছের মতন গোপন সংলাপ তখন অনুভূতি ছুঁয়ে থাকে।

আসলে প্রাণের মানুষটিকে কাছে পাওয়ার উদ্বেলতা। মনের মানুষটির নাগাল পেতে এক নিদারুণ তাড়না। পিছলে পড়তে থাকে পিরিতির কণা। সবুজ নেশার চমকদমক প্রেমজ খোলস ভেঙে অজস্র আনন্দের সাম্পান। মনে হয়, বুঝি বা সমস্ত সংকেত, আকুলতা ইশারা, গোপন সংলাপ। কোনও নিভৃত ক্ষণে নিভৃত পাকের্র বেঞ্চে, নিদেনপক্ষে কফিশপ বা রেস্তোরাঁয় ঘনিষ্ঠ সঙ্গ-সুখানুভূতি। মন্ত্রগুপ্তির চোরাভাষায় সৃষ্টি হয় দ্বিপাক্ষিক সেই সম্পর্ক ঘিরে কোলাহল-গান। সেখান থেকেই তো প্রেম ও তোয়াক্কা না-করা গোপন আঁতাতের ফিচেল হাওয়ায় অনিশ্চিত শিউরে ওঠা! দুটি হৃদয়ের সঙ্গম যে কী অনিবার্য অকপট ও অনস্বীকার্য, বলা বাহুল্য। কাঙ্ক্ষিত সুখের মনস্কতা মেনেই খরচ হয়ে যায় আশ্চর্য ধারাবাহিকতায়। প্রেমস্পর্শের গভীরতায় পুরুষ ও রমণী হৃদয়ে ঘটে রূপান্তর। আকাশের ছায়াটুকু নিয়ে কুয়াশা ছড়ানো স্নিগ্ধতায় সে হৃদয় দুটি তখন নান্দনিক প্রশ্রয়ে। জীবনে অবচেতনেই শরতের স্নিগ্ধতা, বর্ষার সজীবতা, বসন্তের উচ্ছলতা এনে দেয় শরীরে-মনে। ভালবাসাই তো পারে পৃথিবীর আদিমতম গহন অনুভব বয়ে আনতে কোনও শপথ ছাড়া, কোনও শর্ত ছাড়াই। নিঝুম প্রণয়টুকু ভরা থাকে গোপন চিরকুটে। নিরুদ্দেশ-মুহূর্তে মুঠো খুলে তাতে ভরা থাকে কৌতূহলী ইশারা— আর তখনই তো মায়াবী ভূমিকায় চাপা পড়ে থাকে পাপ-পুণ্য জাগতিক হিসেব-নিকেশ। বাহারি জাফরিতে সাজানো থাকে মোহনির্ভর প্রেম। কী বিশুদ্ধ ভাবে সত্য হয়ে ওঠে সহস্র মায়াজাল বোনা। স্নায়ুর ভেতরে শিউরে ওঠে অদ্ভুত এক রম্যতা। সে রম্যতা লুকোচুরি বোঝে না কোনও। একের ভালসবাসা নিবিড় হয় অন্যের ভালবাসায়। অবশেষ সমর্পণের কাছে তখন রাতের চিহ্ন খোলা থাকে।

“ইয়েস লভ ইনডিড আ লাইট

ফ্রম হেভেন,

আ স্পার্ক অফ দ্যাট

ইম্মরটাল ফায়ার

উইথ এঞ্জেলস শেয়ারড, বাই

আল্লাহ্ গিভন,

টু লিফ্ট ফ্রম আর্থ আওয়ার

লো ডিজায়ার”

—বায়রন

তেপান্তরের মাঠ পাড়ি দেওয়া পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে কিংবা ময়ূরপঙ্খী নাওয়ে সাত-সমুদ্দুর তেরো-নদী পাড়ি দেওয়া মন জুড়ে অবিরাম বসন্তের কুহু ডাক। প্রতিটি মোহক্ষণেই মনে হয়, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। রবি-কবি যদিও গানটি লিখেছিলেন ঘনঘোর বরিষনের কথা ভেবে, ভালবাসার ঘোষণা কি আর অত দিনক্ষণ ঋতু মেনে চলে!

অঙ্গীকারে ঘন হয়ে ওঠে যে ভালবাসা, তার খোঁজ দেশ কাল ভাষা বর্ণ বিত্ত মানতে চায় না। প্রেমজ তাগিদে দুটি মন এক হতে চায়। কখনও বেহিসেবি আশকারায় কেঁঁপে ওঠে। কখনও বা চূড়ান্ত বিপদসীমা টপকে শোনায় উস্কানি-আহ্বান। রোমাঞ্চকর দ্রবণে মিশে থাকে শুক-সারি উপাখ্যান। সম্পর্ক গড়ার আকুলতায় থেকে যায় ফলিত যাপনকথা। ক্রমে জীবনবোধ শেখায় অথবা শিখতে বাধ্য করায়— ভালবাসা গড়ে তোলা যতটা সহজ, সেই ভালবাসাকে টিকিয়ে রাখা ঠিক ততটাই কঠিন। ভালবাসার শর্ত ও দায়ভার, সমস্ত ব্যাপারেই নিয়ত কিছু রফা ও বোঝাপড়াও এসে যায় শেষ পর্যন্ত। ভালবাসা তখন শুধুই অভ্যাস। সেই অভ্যাসেই অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া। ভালবাসা ভিখিরিও করে, আবার ঋণীও করে।

“লভ ইজ মিয়ারলি আ ম্যাডনেস

অ্যান্ড আই টেল ইউ, ডিজার্ভস

অ্যাজ ওয়েল আ ডার্ক হাউস

অ্যান্ড আ হুইপ অ্যাজ ম্যাডম্যান ডু”

—শেকস্পিয়ার

আগামী ভ্যালেন্টাইন ডে-তে একটা জুতসই পরকীয়াও করে ফেলা যেতেই পারে। গতানুগতিক বিবাহিত জীবনে একটু ‘স্পাইসড আপ’ করা আর কী। ষড় রিপুর ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’ ছাড়াও পরকীয়ায় পাপবোধ থাকে, হাতছানি থাকে, আবার মনের আলোছায়াও থাকে। এই সব সাত-পাঁচ ভুলভাল ঠিক-বেঠিক ভাবতে ভাবতে কখন ডায়েরির পাতায় লেখা পরকীয়া-বিষয়ক একটা আস্ত কবিতা শুনিয়েই নয় আজ শেষ করি।

“চৌকাঠ ডিঙোনো সম্পর্কে

পরকীয়া গচ্ছিত থাকে

সুখের কুঠুরিতে

মুগ্ধ ভেবে প্রিয় কথা

প্রেম ও তোয়াক্কা না-মানা

গোপন আঁতাত

ছুঁয়েছি দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব,

লাজ ও লজ্জা

আসক্তি জড়ানো সারল্যে

অভিসারী মৌতাতে

হৃদয়ের আনাচকানাচ

বসন্ত ঋতু ভরে ওঠে

সংবাদ শিরোনামে...।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE