থানার ভিতরেই প্রেমিক-প্রেমিকাকে বেধড়ক মারের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে কোনও ভাবে। তাতেই দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা-সহ পাঁচ, ছ’জন পুলিশকর্মী চড়থাপ্পর মারছেন যুগলকে। চলছে কিল, ঘুষিও। তরুণীর চুলের মুঠি ধরে ঠুকে দিচ্ছেন টেবিলে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে তরুণকে। ভিডিওটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চাপে পড়ে শেষমেশ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।
দিন তিনেক আগের ঘটনা। নিগৃহীতা তরুণ-তরুণী মালাডের একটি কলসেন্টারে কাজ করেন। তরুণী থাকেন নালাসোপারায়। আর তরুণের
বাড়ি দক্ষিণ মুম্বইয়ের বাইকুল্লায়। ১ নভেম্বর রাতে অফিস থেকেই ফিরছিলেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, আন্ধেরি মেট্রো স্টেশনের সামনে মদ্যপ অবস্থায় চিৎকার-চেঁচামেচি করতে দেখা যায় তাঁদের। ঝগড়া হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছিল বলেও দাবি। এর পরেই যুগলকে পাকড়াও করে আন্ধেরি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। থানার সিনিয়র ইনস্পেক্টর নন্দকুমার ধুমল জানিয়েছেন, থানায় এসেও দমেননি দু’জন। আলাদা আলাদা জায়গায় বসানো হয়েছিল ওঁদের। কিছু ক্ষণ চুপ থাকার পর ফের আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। যুগলকে থামাতেই হস্তক্ষেপ করে পুলিশ।
ধুমলের বক্তব্য, ঝগড়া চলাকালীনই প্রেমিকাকে ফের মারতে উদ্যত হয় যুবকটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে যান উপস্থিত পুলিশরা। ধাক্কা দিয়ে দু’জনকে সরিয়ে দেন। কুমতলব নিয়ে তখনই কেউ ঘটনাটি ভিডিও করেন। পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। ধুমল জানিয়েছেন, সে রাতেই যুগলের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। মা-বাবা এলে সামান্য হুঁশিয়ারি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের।
পুলিশের হাতে সাধারণের হেনস্থা মুম্বইয়ে অবশ্য নতুন নয়। সেপ্টেম্বরে গণেশ পুজোর মণ্ডপে এক তরুণীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল দুই মহিলা কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। সে বারও ঘটনা জানাজানি হয় একটি ভিডিও ক্লিপ-এর মাধ্যমে। তীব্র সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফ়ডণবীস অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। তার এক মাস আগে, অগস্টে প্রকাশ্যে অশালীন আচরণের অভিযোগে মাড আইল্যান্ড এবং আকসা এলাকা থেকে ১৩ জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে আটক করেছিল পুলিশ। ঘটনায় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুম্বইয়ের তৎকালীন পুলিশ প্রধান।
আন্ধেরির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সোচ্চার হওয়ায় পর নড়ে বসে প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রঞ্জিত পাটিল সংবাদমাধ্যমকে জানান, আন্ধেরি থানার পুলিশকর্মীরা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছেন কি না, তা দেখতে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ডিসিপি ( জোন ১০) বিনায়ক দেশমুখকে। মন্ত্রীই জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তরুণ-তরুণীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে।
এ দিকে বেআইনি ভাবে আটক করার অভিযোগে আন্ধেরি থানায় সে দিন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে আজ এফআইআর করেছে নিগৃহীতদের আইনজীবী। তাঁর কথা, ‘‘পুলিশ মানেই যা ইচ্ছে করার ক্ষমতা নয়। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’