গোপীনাথ মুন্ডে
নিয়তি নয়? কী বলবেন একে!
কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল কাল, বুধবার থেকে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে শনিবার মুম্বই গিয়েছিলেন। ঠিক ছিল, একেবারে বুধবারই দিল্লি ফিরবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকায় গত কাল বিকেলে তড়িঘড়ি দিল্লি আসতে হয়েছিল। তার পরে আজ ভোরে মহারাষ্ট্রে ফেরার বিমান ধরার জন্য রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দরে যাওয়ার পথেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের।
অপঘাতে মৃত্যু হল মহারাষ্ট্র বিজেপির আরও এক প্রভাবশালী নেতার। ২০০৬ সালে মুম্বইয়ে নিজের বাসভবনে নিজেরই ভাইয়ের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা প্রমোদ মহাজন। আট বছর পরে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রমোদেরই ভগ্নীপতি তথা মহারাষ্ট্রের অন্যতম দলিত নেতা গোপীনাথের মৃত্যু হল।
ঘটনাটা ঘটে আজ সকাল ৬টা ২০ নাগাদ। নিজের সরকারি বাসভবন থেকে বেরিয়ে বিমানবন্দরের দিকে সবে কিছুটা এগিয়েছেন। পৃথ্বীরাজ রোড ও অরবিন্দ মার্গের ক্রসিংয়ে হঠাৎই একটি ইন্ডিকা গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে এসে ধাক্কা মারে তাঁর গাড়িতে। মুন্ডে পিছনের আসনে যে দিকটিতে বসেছিলেন, ঠিক সে দিকটাতেই ধাক্কা লাগে। ঘটনার আকস্মিকতায় চোখ বুঁজে ফেলেন গোপীনাথ। তার পর চালকের কাছ থেকে চেয়ে একটু জল চেয়ে নেন। জলটুকু খাওয়ার পরে চালককে বলেন, “এ বার চলো।” চালক জানতে চান কোথায়? মন্ত্রী জানান, “হাসপাতালে।” ওই ছিল তাঁর শেষ কথা। চালক সোজা অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
সান্ত্বনার হাত। গোপীনাথ মুন্ডের মেয়ের কাছে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
এত বড় দুর্ঘটনা। অথচ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর শরীরে বাইরে থেকে কোনও ক্ষত চিহ্নই দেখা যায়নি। দুর্ঘটনার পর মুন্ডের গাড়ির চালক বিজেন্দ্র এবং ব্যক্তিগত সহকারী সুরেন্দ্র নায়ারের শরীরও ছিল অক্ষত। চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনার পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, “ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের ধারণা, দুর্ঘটনায় ঘাড়ে চোট পান গোপীনাথ। তাতেই তাঁর হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এমনকী যকৃতেও তিন-চারটি ক্ষত তৈরি হয়। যা থেকে প্রায় দু’লিটারের মতো রক্তক্ষরণ হয়। স্পন্ডিলাইটিস ও ব্লাড সুগারের রোগী গোপীনাথ এর পর আর লড়াই করতে পারেননি বলেই চিকিৎসকদের ধারণা। হাসপাতালে যখন তিনি পৌঁছন, তখনই তাঁর নাড়ি ও হৃদ্স্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেছিল।”
দুর্ঘটনার পর ইন্ডিকা গাড়িটির চালক গুরবিন্দর সিংহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অবশ্য তিনি জামিনও পেয়ে যান। দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল ও আইবি। প্রমোদ মহাজনের পরিবারে গত কয়েক বছরে একাধিক মৃত্যু হচ্ছে অপঘাতে। আজ গোপীনাথেরও আকস্মিক মৃত্যুর পরে অনেকেই এ দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে দুর্ঘটনায় দু’টি গাড়ির চালকই অক্ষত থাকায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
হাসপাতাল থেকে গোপীনাথের দেহ দুপুরে আনা হয় বিজেপি-র সদর দফতরে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি শীর্ষ নেতারা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। প্রয়াত মন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে বিজেপি দফতরে যান কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীও। বিকেলে মুন্ডের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বইয়ের ওরলিতে, তাঁর বাসভবনে। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর গ্রাম পারালিতে। সেখানেই মুন্ডের শেষকৃত্য হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
অথচ এ ভাবে মুম্বই ফেরার কথাই ছিল না গোপীনাথের। গত সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ গ্রহণের পর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন মহারাষ্ট্রের এই দলিত নেতা। তাঁর আপ্ত সহায়ক দামোদর পুস্ত্রী জানান, শুরু থেকেই মন্ত্রকে কাজের চাপ ছিল। প্রাথমিক ভাবে কাজ বুঝে নিয়ে শনিবার মুম্বই ফিরেছিলেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। ঠিক ছিল দিল্লি ফিরবেন বুধবার। কিন্তু সংসদের অধিবেশনের আগে সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রকওয়ারি প্রথম একশো দিনের কর্মসূচি চাওয়া হয়েছিল ক্যাবিনেট সচিবালয় থেকে। গত কাল বিকেল চারটে নাগাদ দিল্লি পৌঁছে মন্ত্রকের সচিব ও যুগ্ম-সচিবদের নিয়ে তাই আপৎকালীন বৈঠক ডেকেছিলেন গোপীনাথ। বিকেল পাঁচটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পরে একশো দিনের কর্মসূচির সেই খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
আজ সকাল ৬টা ৪০ নাগাদ দিল্লি থেকে মুম্বই যাওয়ার জন্য জেট এয়ারওয়েজের টিকিট কাটা ছিল। মুম্বই বিমানবন্দরে সাড়ে ৯টার সময় একটা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও করে রাখা ছিল। ঠিক ছিল, মুম্বইয়ে নেমে প্রথমে স্ত্রী, ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করবেন। তার পর ওঁদের নিয়েই নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বিড়ে রওনা হবেন গোপীনাথ। লোকসভা ভোটে জয় ও কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর আজ তাঁকে সামনে রেখে বিজয় যাত্রা বেরোনোর কথা ছিল বিড়ে।
কিন্তু মুম্বইয়ের উড়ান আর ধরা হল না গোপীনাথের। বিমানবন্দরে মন্ত্রীর বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দামোদর। বিমানের পাইলট বার বার তাড়া দেওয়ায় ৬টা ২৫ নাগাদ ফোন করে জানতে পারেন, মন্ত্রী তখন হাসপাতালের পথে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy