মায়ের কেন্দ্রে প্রিয়ঙ্কা বঢরা। বুধবার রায়বরেলীতে। ছবি: পিটিআই।
চার দফার ভোট এখনও বাকি। তার আগেই বিশেষজ্ঞদের অনেকে যখন সরকার গঠনের দৌড়ে বিজেপিকে এগিয়ে রাখছেন, তখন প্রচারের প্রায় শেষ ধাপে পৌঁছে রণকৌশল পাল্টাল কংগ্রেস। প্রচারের মুখ্য মঞ্চে এক দিকে তুলে আনা হল প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে। অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও ঝাঁঝালো করার সিদ্ধান্ত নিলেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী।
কী ভাবে?
বারাণসী লোকসভা কেন্দ্রে আগামিকাল মনোনয়ন পেশ করবেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে মহিলাদের মর্যাদার প্রশ্নে আজ মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করেন প্রিয়ঙ্কা। বেঙ্গালুরুর এক মহিলার ফোনে আড়ি পাতার যে অভিযোগ মোদী প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠেছিল, তার জের টেনে রায়বরেলীতে রাজীব কন্যা বলেন, “মহিলাদের ক্ষমতায়নের বুলি আউড়ে তলে তলে যাঁরা মেয়েদের ফোনে আড়ি পাতেন, তাঁদের ভুলেও ক্ষমতায় আনবেন না। বরং এই ভোটেই ছুড়ে ফেলে দিন।”
আজ দিনভর বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ঘুরেফিরে এসেছে প্রিয়ঙ্কার এই আক্রমণ। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, কাল মনোনয়ন পেশ করতে মোদী যখন বারাণসীর মাটি ছোঁবেন, ততক্ষণে সংবাদপত্রের শিরোনামেও চলে আসবে প্রিয়ঙ্কার মন্তব্য। আর সেই আবহে যথাক্রমে গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে মোদী-বিরোধী প্রচার আরও তীব্র করে তুলবেন সনিয়া ও রাহুল।
বারাণসীতে মোদীর রোড শো-র পাল্টা হিসেবে কাল লখনউয়ে রোড শো করবেন রাহুল। তার আগে সকাল থেকে উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর, হরদোই ও জলাউয়ে তিনটি জনসভা করবেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। আর সনিয়া কাল সভা করবেন গুজরাতে। কংগ্রেস সূত্র বলছে, শেষ মুহূর্তে সনিয়ার বক্তৃতায় কোনও পরিবর্তন না হলে সাম্প্রতিক কালে মোদীর বিরুদ্ধে সব চেয়ে ক্ষুরধার আক্রমণ কাল শানাবেন সনিয়া।
মোদী অবশ্য ঝটিতি প্রিয়ঙ্কার সমালোচনার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা কংগ্রেসের মুখে মানায় না। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।” অন্য দিকে রবার্ট বঢরা প্রসঙ্গে মোদীর কটাক্ষই ফের আউড়ে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ বলেছেন, “টুজি, থ্রিজি দুর্নীতির পর এখন জিজাজি দুর্নীতির দাগ লেগেছে কংগ্রেসের গায়ে।”
বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি নেতৃত্বের মুখে এমন চটজলদি জবাব প্রত্যাশিত। বরং কংগ্রেসের প্রচার কৌশলেই বদলটা চোখে পড়ছে। প্রথমত, রাহুল ঢাকা পড়ে যাবেন, সেই আশঙ্কায় গোড়ার দিকে প্রিয়ঙ্কাকে তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নামাতে চাননি দলের নেতারা। কিন্তু এখন তাঁদের অনেকে মনে করছেন, মোদীর বিরুদ্ধে প্রিয়ঙ্কার আক্রমণেরই গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তিনি প্রচারে যখনই নেমেছেন, আলো কেড়েছেন। আর প্রিয়ঙ্কার মধ্যে ইন্দিরা গাঁধীর ছায়া তো দেখেন অনেকেই। তাই দেরিতে হলেও মোদীকে রুখতে প্রচারের মূল মঞ্চে আনা হয়েছে প্রিয়ঙ্কাকে।
দ্বিতীয়ত, সরাসরি মোদীকে আক্রমণ করার ব্যাপারে দ্বিমত ছিল কংগ্রেসে। রাহুলকে ‘শাহজাদা’ বলে মোদী যখন কটাক্ষ করছিলেন, তখন রাজনৈতিক আক্রমণে সৌজন্য দেখাতে গিয়ে নিষ্প্রভ ছিলেন সনিয়া-রাহুল। কিন্তু হাইকম্যান্ডই এখন মনে করছে, মোদীকে জবাব দিতে হবে তাঁরই ভাষায়। বস্তুত, মোদী যেমন প্রতিটি আক্রমণের জবাব মুহূর্তের মধ্যেই দিচ্ছেন, কংগ্রেসেরও গোড়া থেকে একই মনোভাব নেওয়া উচিত ছিল এমন আক্ষেপও করছেন তাঁরা।
প্রিয়ঙ্কার সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি নজর এড়ায়নি বিরোধী শিবিরের। তাঁরা প্রচারে বলছেন যে, রাহুলকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না বুঝেই প্রিয়ঙ্কাকে প্রচারে নামাতে হয়েছে কংগ্রেসকে। স্বভাবতই সেই জল্পনা খারিজ করে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বলছে, ভাইবোনের তালমিল সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, প্রিয়ঙ্কা প্রচার করলে দলের যে ভাল হবে, তা রাহুল জানেন। তাই তিনিই মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্রতর করার জন্য প্রিয়ঙ্কাকে পরামর্শ দিয়েছেন। আবার প্রিয়ঙ্কাও জানেন, তিনি অমেঠি-রায়বরেলীর বাইরে গিয়ে প্রচার করলে রাহুলের ক্ষতি হবে। তাই দাদা ও মায়ের লোকসভা কেন্দ্র থেকেই তিনি মোদী-বিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন গোটা দেশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy