খবরের শিরোনামে আজও হাজির বাবা-ছেলে। লাগাতার ধর্ষণের ঘটনা আর দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েও বিতর্কিত মন্তব্যে লাগাম টানতে পারছেন না উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বা তাঁর বাবা মুলায়ম সিংহ যাদব।
দিন কয়েক আগে ছেলে বলেছিলেন, “গুগলে সার্চ দিয়ে দেখুন, অন্য রাজ্যগুলোর কী অবস্থা।” রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বেঙ্গালুরুর উদাহরণ টেনে অখিলেশের অভিযোগ ছিল, শুধু তাঁর রাজ্যের ঘটনাগুলোই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বড় বড় করে দেখানো হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। আজ আবার সেই প্রসঙ্গে মুলায়ম বললেন, “যাঁদের এই সব নিয়ে এত মাথাব্যথা, তাঁরা দিল্লি গিয়ে থাকুন।” তেড়েফুঁড়ে তিনি বলেন, “আপনারা নিজেদের কাজটা করুন। আমাদেরটা আমাদের করতে দিন।” আজও সাংবাদিকের উপর ফুঁসে ওঠেন প্রবীণ নেতা। তাঁর অভিযোগ, বারবার করে শুধু উত্তরপ্রদেশ নিয়েই হইচই করছে খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলগুলো। অন্য রাজ্যগুলো নিয়ে আগ্রহ নেই।
বুধবার অখিলেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুখমন্ত্রীর কাকা তথা রাজ্যসভার সদস্য রামগোপাল যাদব। বলেছিলেন, “ছেলেমেয়েদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে এসে গেলেই লোকে তাকে ধর্ষণ বলে।” তা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি কাল। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিতর্কিত মন্তব্যে নয়া সংযোজন। আজ অখিলেশের পাশে দাঁড়িয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলাল গৌর। এ দিন তিনি বলেন, “(ধর্ষণ) কখনও ঠিক, কখনও ভুল। ঠিক-ভুল নির্ভর করে ছেলেমেয়েদের উপর।” তুলনামূলক ভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাছেন যাদব পরিবারের পুত্রবধূ। সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণের সামনে ডিম্পল যাদব বলেন, “ভীষণ স্পর্শকাতর ঘটনা। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হবে।”
যদিও তাঁর আশ্বাসই সার। এক সপ্তাহ ধরে বাবা-ছেলে যতই তর্জন গর্জন করে যান না কেন, ডিম্পল যাদব যতই বিচারের ভরসা দিন না কেন, রোজকার মতো আজও উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্ত থেকে মিলেছে ধর্ষণের খবর। মুজফ্ফরনগরের খুব্বাপুর গ্রামে বছর চোদ্দোর কিশোরীকে বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণ করেছে প্রতিবেশী যুবক। থানায় এফআইআর করেছে মেয়েটির মা। অন্য দিকে, উন্নাওয়ের হরিনামখেদা গ্রামে ঝোপঝাড়ের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ২৫ বছরের একটি তরুণীর দগ্ধ দেহ। সন্দেহ, ধর্ষণ করেই পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাঁকে।
দেওরিয়ার ঘটনা প্রায় বদায়ূঁরই পুনরাবৃত্তি। শুধু ধর্ষিতাদের হত্যার বদলে সম্মান রক্ষায় খুন। আজ উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ায় একটি গাছ থেকে ঝুলতে দেখা যায় তরুণ-তরুণীর দেহ। দু’জনের মুখেই কাপড় গোঁজা ছিল। তাই হত্যা যে করা হয়েছে, সে নিয়ে সন্দেহ নেই পুলিশের। মেয়েটির মাথার সিঁদুর দেখে পুলিশের অনুমান, তাঁরা বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলেন। আর তাই পরিবারের সম্মান রক্ষার্থেই খুন করা হয়েছে দু’জনকে। নিহতরা কোন বাড়ির ছেলেমেয়ে, গ্রামের লোকের সঙ্গে কথা বলে এখনও তা জানতে পারেনি পুলিশ। খুনি যে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী নয়, পরিবার!
এ সব খবর পাতে পড়তে না পড়তেই, মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্য পর্ব শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, “কোনও আইনশৃঙ্খলা নেই রাজ্যে। কেউ কাউকে পরোয়া করে না।” উমা ভারতী বলেন, “উত্তরপ্রদেশ সরকার ধর্ষকদের নিরাপত্তা দেয়। তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে।” মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবুলাল গৌর মুলায়মদের ‘অসহায়তা’ নিয়ে কথা বলতে বলতে বলে বসেন, “এটা আসলে সামাজিক অপরাধ। কখনও ঠিক, কখনও ভুল। সেটা নির্ভর করে ছেলেমেয়েদের উপর।” কেন্দ্র অবশ্য স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে “ওটা বাবুলালের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী। দল ওঁকে সমর্থন করে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy