Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দু’শো বছরের পুরনো পাণ্ডুলিপি থেকে অসমে ছাপা হল অভিধান

পাণ্ডুলিপি তৈরির ২০০ বছর পরে ছাপা হল বই! নিছক বই বললে ভুল হবে। তা এক অভিধান। উত্তর-পূর্বের ন’টি ভাষার শব্দ-ভাণ্ডার নিয়ে স্কটিশ পণ্ডিত ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটনের সেই পাণ্ডুলিপি রাখা ছিল লন্ডনের সংগ্রহশালায়। পাণ্ডুলিপির প্রত্যেকটি পৃষ্ঠার প্রতিলিপি সংগ্রহ করা হয়। আজ অসমে প্রথম প্রকাশিত অভিধানের লেখক যদুরাম ডেকা বরুয়ার ২১৩-তম জন্মবার্ষিকীতে ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত হল হ্যামিলটনের সেই অভিধান।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২৫
Share: Save:

পাণ্ডুলিপি তৈরির ২০০ বছর পরে ছাপা হল বই!

নিছক বই বললে ভুল হবে। তা এক অভিধান। উত্তর-পূর্বের ন’টি ভাষার শব্দ-ভাণ্ডার নিয়ে স্কটিশ পণ্ডিত ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটনের সেই পাণ্ডুলিপি রাখা ছিল লন্ডনের সংগ্রহশালায়। পাণ্ডুলিপির প্রত্যেকটি পৃষ্ঠার প্রতিলিপি সংগ্রহ করা হয়।

আজ অসমে প্রথম প্রকাশিত অভিধানের লেখক যদুরাম ডেকা বরুয়ার ২১৩-তম জন্মবার্ষিকীতে ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত হল হ্যামিলটনের সেই অভিধান।

উত্তর-পূর্বের ভাষা নিয়ে গবেষণা চালানোর সময় অধ্যাপক রক্তিমরঞ্জন শইকিয়া পাণ্ডুলিপিটির কথা জানতে পারেন। ব্রিটিশ সংগ্রহালয়ে অভিধানটির সন্ধান পাওয়ার পরে, ‘ফ্রেন্ডস অফ আসাম অ্যান্ড সেভেন সিস্টার্স’ এবং লেবার পার্টির সদস্য রিনি কাকতির চেষ্টায় মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি হাতে পায় ‘অসমিয় জাতীয় প্রকাশ’ প্রকাশনা সংস্থা। সম্পাদনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দেবব্রত শর্মাকে। অভিধানের নাম দেওয়া হয় ‘কম্প্রিহেনসিভ ভোক্যাবুলারিজ’। শর্মা বলেন, “আধুনিক মানসিকতার লোক ছিলেন হ্যামিলটন।

সমোচ্চারিত ভাষার মধ্যে বিভেদ, শব্দের চলাচল, জনগোষ্ঠীয় প্রকার ভেদকে তিনি সঠিক ভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। পানি কোচ ও মণিপুরি মেইতেইদের সম্পর্কেও তিনি লিখে গিয়েছেন।” রবিবার যোরহাটে একটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ভাষার শিক্ষাবিদরা অভিধানটি প্রকাশ করেন।

১৭৯৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজে ভারতে এসেছিলেন স্কটিশ পণ্ডিত হ্যামিলটন। একাধারে তিনি ছিলেন শল্য চিকিৎসক, প্রাণী ও উদ্ভিদবিদ। এবং লেখকও। ১৮০৩ থেকে ১৮০৪ পর্যন্ত তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল মার্কুয়েস ওয়েলেসলির শল্য চিকিৎসক ছিলেন। ওই সময়ই তিনি আলিপুরে গড়ে তোলেন একটি পশুশালা। বোটানিক্যাল গার্ডেনের তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন। ১৭৯৯ সালে টিপু সুলতানের পরাজয়ের পরে, কোম্পানির নির্দেশে তিনি দক্ষিণ ভারতের সমীক্ষা চালান। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই লেখেন ‘আ জার্নি ফ্রম মাদ্রাজ থ্রু কান্ট্রিস

অব মাইসোর, কানাড়া অ্যান্ড মালাবার’। নেপাল ভ্রমণের পরে লেখেন‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ দ্য কিংডম অফ নেপাল’।

১৮০৭ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত, বাংলার শাসনাধীন এলাকাগুলির ভূ-প্রকৃতি, জন-বিন্যাস, ইতিহাস, মানব চরিত্র, ধর্ম, প্রকৃতি, উৎপাদিত ফসল ও উদ্ভিদ, ফুল-ফল, বন্য প্রাণী ও গবাদি পশু, জমি, সম্পদ, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, পরিবহণ নিয়ে বিশদে সমীক্ষা চালানোর দায়িত্ব হ্যামিলটনকেই দেওয়া হয়েছিল। বাংলা, নেপাল, অসমের বিভিন্ন উদ্ভিদ, শতাধিক মাছ, প্রাণীর বর্ণনা সংগ্রহ করে, স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে জল রঙে সে সবের ছবি আঁকিয়ে তিনি নথিবদ্ধ করেছিলেন।

অসমে পৌঁছনোর পরে, সেখানকার বাসিন্দাদের সাহায্য নিয়ে স্থানীয় ভাষা বুঝতে শুরু করেন। তাঁকে সাহায্য করেছিলেন অভিধান লেখক, ভাষাবিদ তথা শেষ আহোম রাজা পুরন্দর সিংহের প্রধানমন্ত্রীরুচিনাথ বুড়াগোঁহাই।

এ ভাবেই তিনি ধীরে ধীরে লেখেন ১৫৫ পাতার অভিধান। যেখানে ‘অসম দেশীয় ভাষা’, ‘প্রকৃত বঙ্গ দেশীয় ভাষা’, ‘কোচর দেশীয় ভাষা’, ‘রাভা জাতীয় ভাষা’, ‘গারো জাতীয় ভাষা’, ‘কছারী জাতীয় ভাষা’, ‘পানি কোচ জাতীয় ভাষা’, ‘মেচ জাতীয় ভাষা’ ও ‘মণিপুর দেশীয় ভাষা’-সহ আঠারো হাজার শব্দের ইংরেজি অর্থ রয়েছে।

অভিধানের শুরুতে হ্যামিলটন লেখেন, যে ভাষার সঙ্গে প্রদেশের সম্পর্ক রয়েছে সে গুলি ‘দেশীয়’ এবং জনগোষ্ঠীয় ভাষা ‘জাতীয়’ তালিকাভুক্ত। ‘জাত’ তালিকভুক্ত ভাষার রাজনৈতিক মর্যাদা নেই। পানি কোচ ভাষাটি বর্তমানে বিলুপ্ত। মূলত কোম্পানির বিদেশি লোকজনের কাজের সুবিধার জন্যই পাণ্ডুলিপিটি লেখেন তিনি। তখন তা ছাপা বই হিসেবে প্রকাশিত হয়নি। ১৮১৫ সালে ভারত থেকে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এ দেশের প্রায় ৩০টি ভাষা শিখেছিলেন হ্যামিলটন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajibaksha rakshit gauhati dictionary manuscript
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE