বৃহস্পতিবার চুয়াল্লিশ বছর পূর্ণ করছেন রাহুল গাঁধী। আর লোকসভা ভোটে গোহারা হেরে সাকুল্যে সেই চুয়াল্লিশটি আসনই এ বার পেয়েছে কংগ্রেস। দলের এই দুঃসময়ে কর্মীদের সঙ্গে মিলে হইহই করে জন্মদিন পালন কি মানায়! তাই কাল কর্মী-সমর্থকদের কাছে ধরা না-দিয়ে ছুটি কাটাতে আগেভাগেই বিদেশ চলে গিয়েছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। কংগ্রেস সূত্র বলছে, মা সনিয়া ছাড়া বোন প্রিয়ঙ্কাও সপরিবার গিয়েছেন তাঁর সঙ্গে।
সনিয়া গাঁধী কংগ্রেস সভানেত্রী হওয়ার পর থেকে তাঁর জন্মদিনে ১০ নম্বর জনপথের ভিতরে-বাইরে দলের উৎসাহী নেতা-কর্মীদের আনাগোনা শুরু হয়। রাহুলের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে দলের উদযাপন শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে। সে বছরই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে অমেঠি থেকে সাংসদ হন রাহুল। লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার গঠনের পর ১০ নম্বর জনপথে ধুমধাম করে রাহুলের জন্মদিন পালন শুরু করেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। তার পর থেকে জন্মদিনে রাহুল কখনও দেশে থেকেছেন, কখনও বা বিদেশে ছুটি কাটিয়েছেন। কিন্তু রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, এ বার দলের কর্মীদের এড়িয়ে যাওয়ার কৌশলই নিয়েছেন রাহুল। কারণ, তাঁর উপস্থিতিতে কংগ্রেস কর্মীরা জন্মদিন নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সেটা নিয়েও সমালোচনা হতে পারত।
তা হলে কাল ১০ নম্বর জনপথ বা রাহুলের বাসভবন ১২ নম্বর তুঘলক লেনে কোনও উদযাপন কি হবে না? রাহুল শিবিরের এক নেতা বলেন হচ্ছে। কারণ একেবারে না হলেও বলা হবে, পরাজয়ের ধাক্কায় কংগ্রেস মুষড়ে পড়েছে। সুতরাং রাহুল না-থাকলেও দশ নম্বর জনপথের বাইরে কাল চুয়াল্লিশ কেজি ওজনের কেক কাটার ব্যবস্থা যেমন রাখা হচ্ছে, তেমন গরিবদের জামাকাপড় বিলিও করবেন দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা।
নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে বড় বড় হোর্ডিংও তৈরি করেছেন কংগ্রেস নেতারা। মজার কথা, রাহুলকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কাল তাঁর জন্মদিনেই হাইকম্যান্ডের কাছে কিছু দাবিদাওয়াও পেশ করতে চলেছেন দলের নিচু তলার নেতারা। হোর্ডিংয়ে তাই লেখা হয়েছে, “রাহুলকে শুভেচ্ছা। তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা নেতাদের এ বার সংগঠনে দায়িত্ব দিক হাইকম্যান্ড।” দিল্লি কংগ্রেসের নেতা জগদীশ শর্মা আজ বলেন, “কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা নেতাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরাতে দলের একাংশ ষড়যন্ত্র করেছেন। কিন্তু রাহুলকে এ ধরনের নেতাকেই আরও বেশি সংগঠনের দায়িত্ব দিতে হবে।” কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির নেতা জনার্দন দ্বিবেদীও আজ বলেন, “কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন সংগঠন উপেক্ষিত হয়েছে। ক্ষমতায় পৌঁছলে এই রোগ সব দলেই দেখা যায়। কংগ্রেসও সেই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেনি।”
বস্তুত গত দশ বছর ধরে সনিয়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের সংগঠন দেখছেন রাহুল গাঁধীই। সুতরাং জনার্দন প্রকারান্তরে রাহুলেরই সমালোচনা করছেন। তবে রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, সাংগঠনিক পদ থেকে জনার্দনকে সরানো হতে পারে বুঝেই আপাত-মৌন এই নেতা এখন মুখ খুলেছেন। কিন্তু জনার্দনের মতো নেতারা যাই বলুন, দেশে ফিরে সাংগঠনিক পরিবর্তনের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে রাহুলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy