Advertisement
E-Paper

নীচ-রাজনীতি বনাম নিচু-জাতের রাজনীতি

কাল মুখে রাম নাম। আজ তিনি জাতপাতে! যেখানে যেমনটা দরকার, সে ভাবেই প্রচারের ভাষা বদলে নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বারের ভোটে প্রথম থেকেই উন্নয়ন আর স্বচ্ছ প্রশাসনই তাঁর প্রচারের ভিত। কিন্তু গত কাল অযোধ্যার কাছে গিয়ে তাঁর মুখে ফিরে এসেছে রাম নাম। মঞ্চেও ছিল ভরপুর হিন্দুত্বের প্রকাশ। এ বার তিনি ঢুকে পড়লেন পুরোপুরি জাতপাতের রাজনীতিতে। গোবলয়ে শেষ দু’দফার ভোটের মুখে সেটা জরুরিও বটে বিজেপি-র পক্ষে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০৩:১৮

কাল মুখে রাম নাম। আজ তিনি জাতপাতে!

যেখানে যেমনটা দরকার, সে ভাবেই প্রচারের ভাষা বদলে নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বারের ভোটে প্রথম থেকেই উন্নয়ন আর স্বচ্ছ প্রশাসনই তাঁর প্রচারের ভিত। কিন্তু গত কাল অযোধ্যার কাছে গিয়ে তাঁর মুখে ফিরে এসেছে রাম নাম। মঞ্চেও ছিল ভরপুর হিন্দুত্বের প্রকাশ। এ বার তিনি ঢুকে পড়লেন পুরোপুরি জাতপাতের রাজনীতিতে। গোবলয়ে শেষ দু’দফার ভোটের মুখে সেটা জরুরিও বটে বিজেপি-র পক্ষে। উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশে, যেখানে দলের কিছুটা প্রভাব রয়েছে, সেখানে ভোট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের পূর্ব ভাগে দাপট মুলায়ম-মায়াবতীর। সেখানে জাতপাতের রাজনীতিই বাস্তব। মোদীও তাই সুযোগ খুঁজছিলেন। প্রিয়ঙ্কা বঢরার গত কালের আক্রমণ তাঁকে সেই সুযোগটা করে দিল। তবে সেটা আপাত সত্য। বরং বলা যেতে পারে, প্রিয়ঙ্কার বক্তব্যের সূত্র ধরে সেই সুযোগটা তৈরি করে নিলেন মোদী নিজে।

কী ভাবে?

অমেঠীতে মোদী কাল রাজীব গাঁধী-সহ গোটা গাঁধী পরিবারকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করায় প্রিয়ঙ্কা তার জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তাঁর বাবা শহিদ হয়েছেন। মোদী শহিদের অপমান করেছেন। অমেঠীর বুথে বুথে মানুষ এই তথা নীচ-রাজনীতির জবাব দেবেন। আজ উত্তরপ্রদেশে জনসভা শুরুর আগে সকালেই প্রিয়ঙ্কার কথার সূত্র ধরে মোদী টুইটারে উস্কে দেন জাতপাতের রাজনীতি। শেষ দু’দফার নির্বাচনে যা তাঁর অন্যতম অস্ত্র।

প্রিয়ঙ্কা বলেছিলেন, রাজনীতির নিচু মানের কথা। সেই আক্রমণের মুখটাই ঘুরিয়ে দিয়ে মোদী এ দিন বললেন নিচু জাতের মানুষের রাজনীতির কথা। বোঝাতে চাইলেন, তিনি নিজে নিচু জাতির তথা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির বলেই তাঁর রাজনীতিকে আক্রমণ করছে তথাকথিত উঁচু জাতিভুক্ত রাজনীতিকরা। টুইটে মোদীর বক্তব্য, “সমাজের নিচু তলা থেকে এসেছি বলেই আমার রাজনীতি ওঁদের চোখে নীচ-রাজনীতি বলে মনে হবে।” এর পরের টুইটেই মোদী মনে করিয়েছেন, “নিচু জাতির মানুষের কতটা ত্যাগ, বলিদান ও চেষ্টায় দেশ আজ এই উচ্চতায় পৌঁছেছে সেটা হয়তো কিছু মানুষের নজরেই আসে না।” পরে জনসভাতেও একই ভাবে প্রিয়ঙ্কার বক্তব্যের ছুতো ধরে মোদী কার্যত নিজেকে শহিদের জায়গায় তুলে ধরে বলেন, “আমাকে যত খুশি গাল দাও। দরকারে ফাঁসিকাঠে ঝোলাও। কিন্তু আমার মতো নিচু জাতের কাউকে অপমান কোরো না। আমার স্বপ্ন একটাই। এক ভারত, সেরা ভারত।”

নিজের বিরুদ্ধে আক্রমণকে কী ভাবে পাল্টা আক্রমণের হাতিয়ার করে তোলা যায়, সেটা বারবারই করে দেখিয়েছেন গুজরাতের এই ধুরন্ধর রাজনীতিক। কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার যখন চা-ওয়ালা বলে তাঁর দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছিলেন, সেই সময়ও মোদী বলটা প্রায় লুফে নিয়েছিলেন নিজস্ব দক্ষতায়। দেশ-জুড়ে শুরু করেছিলেন ‘চায়ে পে চর্চা’ অভিযান। কংগ্রেসে পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিঁধতে চা-ওয়ালা তথা পিছিয়ে থাকা মানুষদের সঙ্গে নিজের আত্মিক যোগের কথা তুলে ধরার চেষ্টা নিরন্তরই চালিয়ে যাচ্ছেন মোদী। বারাণসীতে তাঁর মনোনয়নপত্র পেশের সময়ও সেটা দেখা গিয়েছে। এ বারও সেটাকেই নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইলেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।

প্রিয়ঙ্কার কথার মোড় ঘুরিয়ে মোদী যে ভাবে মানুষের সমীহ আদায়ের চেষ্টা করছেন, কংগ্রেস তাতে বিব্রত। কংগ্রেস আজ দাবি করে, মোদী মানুষকে অযথা বিভ্রান্ত করছেন। রাজীব শুক্লের মতে, নীচ-রাজনীতি বলতে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নোংরা রাজনীতির কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে জাতপাতের কোনও সম্পর্কই নেই। বক্তব্যের ভুল মানে করে মোদী বোকা বানাচ্ছেন। মেরুকরণের রাজনীতি বুমেরাং হয়েছে। তাই মরিয়া হয়ে মোদী এখন জাতপাতের ধুয়ো তুলে শেষ চেষ্টা করছেন।

বিজেপি-ও মনে করছে, গোবলয়ের বাকি দুই দফার ভোটেই দলের ভোট বাড়ানোর সুযোগ সব চেয়ে বেশি। এত দিন মোদী জাতপাত নিয়ে তেমন সরব হননি, পাছে দলেরই উচ্চ বর্ণের ভোটাররা নারাজ হয়। কিন্তু সে এলাকাতেও ভোট শেষ। এখন তাই জাতপাতই শেষ ভরসা।

প্রিয়ঙ্কার মন্তব্যকে সামনে রেখে তোপ দাগলেও মোদীর মূল নিশানা দলিত ও ওবিসি ভোট। উত্তরপ্রদেশের যে অংশে ভোট বাকি সেখানে কংগ্রেসের তেমন অস্তিত্বও নেই। ফলে মোদীর বক্তব্য নিয়ে মাথাব্যথা সবচেয়ে বেশি মায়াবতীর। তাঁর আশঙ্কা, যাদব ও মুসলমানদের মধ্যে মুলায়মের প্রভাব থাকলেও বসপা-র দলিত ও পিছিয়ে পড়া ভোটে থাবা বসানোই মোদীর বেশি লক্ষ্য। যে কারণে তড়িঘড়ি আজ সাংবাদিক বৈঠক করে মোদীকে আক্রমণ করেছেন বসপা-নেত্রী। প্রশ্ন তুলেছেন, নিজেকে নিচু জাতের বলে দাবি করছেন মোদী। কিন্তু আদৌ তিনি পিছিয়ে পড়া জাতির কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নিজের জাতটা কি, সেটা কেন তিনি খোলসা করছেন না? এ ছাড়া, বিজেপি পিছিয়ে পড়া জাতির জন্য এ পর্যন্ত কী করেছে, সে প্রশ্নও তোলেন মায়াবতী।

বহেনজি তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দেন নেতাজি মুলায়ম ও সনিয়া গাঁধীর উপরেও। ময়দানে মোদীর হানায় উদ্বিগ্ন মায়াবতী জানতে চান, ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁরা মোদীর বিরুদ্ধে সক্রিয় হচ্ছেন না?

modi priyanka mayawati
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy