Advertisement
E-Paper

নিজের নথিপত্রে এ বার নিজের সই-ই যথেষ্ট

নানান বিষয়ে তথ্যপ্রমাণের নথি ‘অ্যাটেস্ট’ বা প্রত্যয়নের জন্য আর গেজেটেড অফিসারদের দরজায় হত্যে দিতে হবে না। নিজের নথিপত্রের ব্যাপারে নিজের ঘোষণাই এ বার থেকে যথেষ্ট বলে গণ্য হবে। স্কুল-কলেজে ভর্তি, চাকরি কিংবা সরকারি কাজে নথিপত্র পেশ করার আগে গেজেটেড অফিসারদের দিয়ে তা ‘অ্যাটেস্ট’ করিয়ে নেওয়ার রীতি দীর্ঘদিনের।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৫

নানান বিষয়ে তথ্যপ্রমাণের নথি ‘অ্যাটেস্ট’ বা প্রত্যয়নের জন্য আর গেজেটেড অফিসারদের দরজায় হত্যে দিতে হবে না। নিজের নথিপত্রের ব্যাপারে নিজের ঘোষণাই এ বার থেকে যথেষ্ট বলে গণ্য হবে।

স্কুল-কলেজে ভর্তি, চাকরি কিংবা সরকারি কাজে নথিপত্র পেশ করার আগে গেজেটেড অফিসারদের দিয়ে তা ‘অ্যাটেস্ট’ করিয়ে নেওয়ার রীতি দীর্ঘদিনের। এত দিনে অবসান ঘটতে চলেছে সেই রেওয়াজের। নিত্যদিনের প্রয়োজনে মানুষ যাতে নিজের নথি বা বক্তব্যে নিজেই সিলমোহর (‘সেল্ফ অ্যাটেস্টেশন’) লাগাতে পারেন, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রের প্রশাসনিক সংস্কার ও জন-অভিযোগ মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গও এই ব্যবস্থায় রাজি। সোমবার বিভিন্ন দফতরের সচিব ও জেলাশাসকদের সঙ্গে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

জন-অভিযোগ মন্ত্রকের খবর, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলেই কেন্দ্রের দ্বিতীয় প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে অ্যাটেস্টেশন প্রক্রিয়া সরলীকরণের সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশ মেনে পঞ্জাব, তামিলনাড়ুর মতো কিছু রাজ্য ইতিমধ্যেই নতুন নিয়ম চালু করে দিয়েছে। একই পথে হাঁটছে মহারাষ্ট্র, কেরলও। তবে পশ্চিমবঙ্গ এই ব্যবস্থা চালু করতে কেন্দ্রের নির্দেশিকাই অনুসরণ করবে, নাকি নিজের মতো করে নয়া রূপরেখা তৈরি করবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন এ দিন বলেন, “সব দফতরেরই নিজস্ব রীতিনীতি আছে। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁরা সেল্ফ অ্যাটেস্টেশন অনুমোদন করতে পারেন, ১৫ দিনের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সচিবদের।”

কিন্তু কেউ যদি স্ব-ঘোষণায় অসত্য তথ্য পেশ করেন? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ‘আমি যা বলছি, সত্যি বলছি, মিথ্যে বললে সরকার আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে’ এমন কথা লেখা বাধ্যতামূলক করা হবে স্ব-ঘোষিত নথিতে। “একই সঙ্গে অসত্য তথ্য দাখিল করে যদি কেউ কোনও রকম সুবিধে নেন, ধরা পড়লে তৎক্ষণাৎ তা বাতিল হবে,” বলেছেন ওই প্রশাসনিক কর্তা। প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের সচিব জানান, অসত্য প্রমাণ কিংবা ভুল তথ্য দিলে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় শাস্তির বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করা হবে।

এখন রেশন কার্ড বানাতে কিংবা কলেজে ভর্তির আবেদন করতে গেলে সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে কোনও গেজেটেড অফিসারকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া কার্যত বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার জন্য সাধারণ মানুষকে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রশাসনের একাধিক আধিকারিকও তা তা মেনে নিচ্ছেন। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “দিনকাল খারাপ। হাতে ‘অরিজিনাল’ বা মূল নথি থাকলেও অ্যাটেস্ট করতে ভরসা পাই না। কারণ, মূল বলে যেটা দাখিল করা হচ্ছে, সেটা যে নকল নয়, কী ভাবে বুঝব?” আমলাদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, স্কুল-কলেজে ভর্তি কিংবা গৃহঋণের আবেদনপত্রে গেজেটেড অফিসারদের অ্যাটেস্টেশনের কোনও দরকারই নেই। এতে অযথা ভোগান্তি বাড়ে আমজনতার। আবার নির্ধারিত কাজের বাইরে এ-সব করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় সরকারি অফিসারদেরও।

তবে নাম-পদবি পরিবর্তন কিংবা জন্মের তারিখ বদলের মতো কিছু ক্ষেত্রে স্ব-ঘোষণায় ‘নোটারি’র ভূমিকা আদৌ থাকবে কি না, রাজ্যের আইন ও বিচার দফতর সেই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। পঞ্জাব সরকার অবশ্য ‘এফিডেবিট’ প্রথাটাই তুলে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এফিডেফিট করতে গেলে সাধারণ মানুষকে স্ট্যাম্প ও স্ট্যাম্প পেপার কিনতে হয়। পারিশ্রমিক দিয়ে ‘ডিড রাইটার’ জোগাড় করতে হয়। তার উপরে নোটারির ফি তো আছেই। সব মিলিয়ে ৩০০ টাকার মতো খরচ পড়ে। পঞ্জাব দেখেছে, এফিডেবিট তুলে দিয়ে প্রতি বছর ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে আমজনতার।

self attestation debjit bhattacharya attested
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy