Advertisement
E-Paper

নিষিদ্ধ নির্ভয়া-কাণ্ডের তথ্যচিত্র, তপ্ত রাজ্যসভা

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের জন্য ফিল্ম পরিচালক লেসলি উডউইন দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের উপরে ভিত্তি করে যে তথ্যচিত্র (‘ইন্ডিয়াজ ডটার’) তৈরি করেছেন, তা নিয়ে আজ তোলপাড় হল রাজ্যসভা। তথ্যচিত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ধর্ষক মুকেশকে নাকি নির্বিকার ভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, নির্ভয়ার সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য তিনি নিজেই দায়ী। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তীব্র আপত্তি ওঠে দেশজুড়ে। আজ যার সাক্ষী রইল রাজ্যসভাও।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৯

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের জন্য ফিল্ম পরিচালক লেসলি উডউইন দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের উপরে ভিত্তি করে যে তথ্যচিত্র (‘ইন্ডিয়াজ ডটার’) তৈরি করেছেন, তা নিয়ে আজ তোলপাড় হল রাজ্যসভা। তথ্যচিত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ধর্ষক মুকেশকে নাকি নির্বিকার ভাবে বলতে শোনা গিয়েছে, নির্ভয়ার সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য তিনি নিজেই দায়ী। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তীব্র আপত্তি ওঠে দেশজুড়ে। আজ যার সাক্ষী রইল রাজ্যসভাও।

২০১৩ সালের জুলাইয়ে তিহাড় জেলে ঢুকে তিন দিন ধরে মোট ১৬ ঘণ্টা ধরে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি ওই ব্রিটিশ পরিচালককে কেন দেওয়া হল? রাজ্যসভায় আজ এই প্রশ্নের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যার জেরে তড়িঘড়ি রাজনাথ বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘ভারতে কোনও অবস্থাতেই ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হবে না।’ ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সংশ্লিষ্ট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম তাদের একটি চ্যানেলে ওই তথ্যচিত্র ৮ মার্চের পরিবর্তে বুধবারই স্থানীয় সময় রাত দশটায় দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাজনাথ কিছু বলার আগে অবশ্য বিরোধী দলের মহিলা সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। অল্প সময়ের জন্য মুলতুবিও হয় রাজ্যসভা। সমাজবাদী পার্টির নেত্রী জয়া বচ্চনের নেতৃত্বে এই সাংসদরা ওয়াকআউট করেন। দাবি, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। জয়া বলেন, “মহিলারা সরকারের কুম্ভীরাশ্রু দেখতে চান না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

রাজনাথ সিংহ পরে সকলের উদ্দেশে জানান, কী ভাবে ওই তথ্যচিত্র নির্মাতা জেলে ঢুকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি পেলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। তাঁর মন্তব্য, “বিষয়টি জানার পরে খুবই দুঃখ পেয়েছি। তথ্যচিত্রটি যাতে কোথাও সম্প্রচার না হয়, তার ব্যবস্থা হয়েছে। এ নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশও জারি করা হয়েছে। জেলের ভিতরে যাঁরা ওই শু্যটিংয়ের অনুমতি দিয়েছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে।”

তবে সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়েও উঠেছে আপত্তি। রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য এবং সমাজকর্মী অনু আগা বলেন, “অনুমতির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত ঠিকই। কিন্তু তথ্যচিত্রে মুকেশ যা বলেছে তা থেকে ভারতের অনেক পুরুষের মনোভাব প্রতিফলিত হয়। তা নিয়ে আমাদের এত লজ্জা কীসের? ভারতকে মহান করে দেখিয়ে বিতর্কিত প্রশ্নগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়া কি খুব যুক্তিযুক্ত?” অনুর মতোই সরব হয়েছেন আর এক মনোনীত সদস্য জাভেদ আখতার। তাঁর মতে, “এমন তথ্যচিত্রকে সাধুবাদ জানাই। যাঁদের এতে আপত্তি রয়েছে, তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।” বিজেপি সাংসদ এবং দলের মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি অবশ্য বলেছেন, এ নিয়ে যথাযথ তদন্ত হবে। দেশের পর্যটনে এ ধরনের ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে।

তিহাড় জেলে শু্যটিং ২০১৩ সালে হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, রাজনাথের পূর্বসূরি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে কি এ ব্যাপারে সায় দিয়েছিলেন? তিনি জানান, এমন অনুমতি তিনি দেননি। দিল্লির পুলিশ কমিশনার বি এস বাস্সি জানান, কিছু শর্তে শু্যটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। তিহাড় জেলের ডিরেক্টর জেনারেল অলোক বর্মাকেও ডেকে পাঠান রাজনাথ। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে ওই শু্যটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়িক কারণের জন্য নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন পরিচালক। রাজনাথের বক্তব্য, “২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনায় নিন্দা ছাড়া সরকারের আর কোনও ভাষা নেই। কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই নৃশংস ঘটনা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।”

তথ্যচিত্রের পরিচালক লেসলি উডউইন অবশ্য গত কাল জানিয়েছিলেন, তিনি এই ছবির জন্য তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতি নিয়েছেন। সব নির্দেশ মেনেই তিনি কাজ করেছেন বলে লেসলির দাবি। তাঁর কথায়, “আমরা অসম্পাদিত ফুটেজও দেখিয়েছি। নিরাপত্তা বা অনুমতি সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ অমান্য করা হয়নি।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি তাঁর আর্জি, “আগে ছবিটা দেখুন। তার পরে নিষেধ করার কথা ভাবুন।”

ওই তথ্যচিত্রে ধর্ষক মুকেশ শুধু নির্ভয়ার দিকে আঙুল তুলেই ক্ষান্ত হয়নি। তার দাবি, ধর্ষণে পুরুষের চেয়ে মেয়েদের দায় অনেক বেশি। নির্ভয়া প্রতিবাদ করেছিলেন বলেই তাঁকে মরতে হয়েছিল বলে জানায় মুকেশ। এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরে ফের আঘাত পেয়েছেন নির্ভয়ার বাবা-মাও। আপাতত দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে তথ্যচিত্রটি ভারতে দেখানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে এফআইএর-ও দায়ের করেছে।

nirbhaya rape case documentary rajya sabha uproar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy