Advertisement
E-Paper

নমো-বধে নামতে আজ আপের গণভোট

ভূমিপুত্র নন এঁদের এক জনও। কিন্তু তাতে কী? আসন্ন নির্বাচনী কুরুক্ষেত্রে দুই মহারথীর দ্বৈরথের আঁচ নিতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রাচীন এই জনপদ। এক জন নরেন্দ্র মোদী। যিনি গোটা দেশে প্রচ্ছন্ন হিন্দুত্বের বার্তা দিতে ও বারাণসীর লাগোয়া পূর্ব-উত্তরপ্রদেশে দলের খোয়ানো জমি ফিরে পেতেই ‘কাশী-বিশ্বনাথ’-এর শহরকে বেছে নিয়েছেন। অন্য জন আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতা। আম আদমির ধাঁচেই আজ রাতে দিল্লি থেকে শিব-গঙ্গা এক্সপ্রেস ধরেছেন বারাণসীর উদ্দেশে। পৌঁছবেন কাল সকালে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৬

ভূমিপুত্র নন এঁদের এক জনও। কিন্তু তাতে কী? আসন্ন নির্বাচনী কুরুক্ষেত্রে দুই মহারথীর দ্বৈরথের আঁচ নিতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রাচীন এই জনপদ।

এক জন নরেন্দ্র মোদী। যিনি গোটা দেশে প্রচ্ছন্ন হিন্দুত্বের বার্তা দিতে ও বারাণসীর লাগোয়া পূর্ব-উত্তরপ্রদেশে দলের খোয়ানো জমি ফিরে পেতেই ‘কাশী-বিশ্বনাথ’-এর শহরকে বেছে নিয়েছেন। অন্য জন আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতা। আম আদমির ধাঁচেই আজ রাতে দিল্লি থেকে শিব-গঙ্গা এক্সপ্রেস ধরেছেন বারাণসীর উদ্দেশে। পৌঁছবেন কাল সকালে। রাজনীতিতে এখনও আনকোরাই বলা চলে। যদিও তাঁর পরিচয় এখন জায়েন্ট কিলার। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েই হারিয়েছেন তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে। হয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও।

এ বার কেজরীবালের নিশানা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বারাণসী থেকে মোদীর দিল্লিযাত্রা ভঙ্গ করার লড়াইয়ে নামবেন কি না, সেটা ঠিক হতে চলেছে আগামিকাল। গণভোটে। বারাণসীর বেনিয়াবাগের ময়দানে প্রায় এক লক্ষ সমর্থক জোটানোর লক্ষ্য নিয়েছেন আপ নেতৃত্ব। রাত জেগে চলছে ময়দান প্রস্তুতির কাজ। আপ শিবিরের মতে, গণভোট একটা হবে ঠিকই। কিন্তু মোটামুটি এটা ঠিক হয়ে রয়েছে, কালই এখান থেকে লড়ার কথা ঘোষণা করবেন কেজরীবাল। দলের বিশ্বাস, “কেজরীবালের সামনে হেরে ভূত হবেন মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর ওয়াটারলু হতে চলেছে বারাণসী।”

প্রশ্ন হল, কাদের ভরসায় এখান থেকে লড়ার কথা ভাবছেন কেজরীবাল? কেজরীবালের মতোই গণভোটের ময়দানে কিন্তু আপ-সমর্থকদের একটা বড় অংশই আসছেন গাজিপুর, জৌনপুর, ইলাহাবাদ, বরেলী বা দিল্লি থেকে। ১২ মে বারাণসীর কোনও ভোট কেন্দ্রে তাঁরা থাকবেন না। ভোটও দিতে পারবেন না কেজরীবালের সমর্থনে। তাই আপের এই গণভোটের আগে দেখে নেওয়া যাক, বারাণসীর আম জনতার সমর্থন কোন দিকে?

বিজেপি শিবিরের দাবি, গোটা দেশের মতোই বারাণসীতেও মোদী-হাওয়া চলেছে। সেই হাওয়ার ঝাপটা টের পেলাম সকালে বারাণসী স্টেশনে পা দিয়েই। খবরের কাগজের বিক্রেতার কাছে প্রশ্নটা রাখতেই উত্তর এল “বিলকুল সাফ, মোদী জিতেগা।” হোটেলের কর্মী গোলু থেকে পড়ন্ত বিকেলে গঙ্গার ঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকা সঞ্জয় মাঝি, বিশ্বনাথ মন্দিরে লাইন ঠিক করার দায়িত্বে থাকা উত্তরপ্রদেশের পুলিশকর্মীসকলেই দেখলাম সেই হাওয়ায় সওয়ার। কেন্দ্রের মূল্যবৃদ্ধি-মুদ্রাস্ফীতি, অখিলেশ সরকারের অযোগ্য শাসন এ সবেরই জবাব হিসেবেই মোদীকে দেখতে চাইছেন অনেকে। তাঁদের মতে কেজরীবাল এসে নির্বাচনী সমীকরণ অকারণে গুলিয়ে দিচ্ছেন।

উল্টো ছবিও কি নেই? অহল্যাবাই ঘাটে সিঁড়িকেই ক্রিকেটের পিচ বানিয়ে ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন এক যুবক। আউট হয়ে ফিরে আসার পরে আলাপ হল। রাহুল তিওয়ারি। উচ্চবর্ণের এই যুবক রাখঢাক না রেখে সপাটে বলে দিলেন, “আমার ভোট কেজরীবালের পক্ষে।” তাঁর মতে, ছাত্র-ছাত্রী বা যুব সমাজে কেজরীবালের আবেদন যথেষ্ট।” বারাণসীর অস্সী ঘাটে চায়ের ঠেকে চর্চাও দেখা গেল কেজরীবালের পক্ষে। স্থানীয় শিক্ষক প্রমোদ দুবের হিসেব, “কেজরীবাল শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়ার হিম্মত দেখাচ্ছেন। স্বচ্ছ রাজনীতির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এটাই বা কম কী! কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টি তাঁকে সমর্থন করলে মোদীর মুশকিল হবে।” মোদীর দিল্লিযাত্রা ভঙ্গ করতে ইতিমধ্যেই সেই আবেদন রেখেছেন আপের শীর্ষনেতা নিজেও।

স্টেশন, হোটেল, গঙ্গার ঘাট ও আরও ক’জায়গায় ঘোরাঘুরির ফাঁকে কেজরীবালের পক্ষে চোরা স্রোত টের পাওয়া গেল অটো ও রিকশা চালকদের মধ্যেও। যেমনটি দেখেছিলাম দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের আগে। এ রাজ্যে আপের মিডিয়া কনভেনার বৈভব মহেশ্বরীর দাবি, “যাঁরা মোদী-মোদী করছেন, কালই তাঁরা সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।” বারাণসীর আমজনতাকে কাল ময়দানমুখী করতে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন আপের শ’আড়াই স্বেচ্ছাসেবী। বিভিন্ন মোড়ে চলছে পথনাটিকা। জনসভা। কিন্তু তাতেও কি ভরবে ময়দান? এ ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে নারাজ আপ নেতৃত্ব। সন্ধে থেকেই দিল্লি-সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গার আপ সমর্থকরা ঢুকতে শুরু করেছেন বারাণসীতে।

এরই মধ্যে হর হর মোদী স্লোগান তুলে দলেরই বিপদ বাড়িয়েছেন বেশ কিছু বিজেপি সমর্থক। রমেশ মিশ্রের দোকান বিশ্বনাথ মন্দিরের দু’নম্বর গেটের সামনে। দর্শনার্থীদের জুতো রাখার সুযোগে ফুল-বেলপাতা গছিয়ে দেওয়ার ব্যবসা তিন-চার পুরুষের। পাঁড় বিজেপি সমর্থক। মোদী জিতছেনই, ভবিষ্যদ্বাণী করার পরেই রাগে গজগজ শুরু করলেন ‘হর হর মোদী’ স্লোগান নিয়ে প্রশ্ন করতেই। বললেন, “বাবা বিশ্বনাথের সঙ্গে মস্করা করলে কেউ পার পাবে না। তবে এগুলো কিছু সমর্থক করছে। মোদী থোড়াই কিছু করছেন।” বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠার পরে মোদী নিজেও টুইট করে সমর্থকদের এ সব করতে মানা করেছেন। কিন্তু আক্রমণের সুযোগটা লুফে নিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। আজ দিনভর গোধুলিয়া চক, লাক্ষা-র মতো জায়গাগুলিতে মোদীর ছবিতে আলকাতরা মাখিয়েছেন তাঁদের কর্মী ও নেতারা।

ওই স্লোগান নিয়ে স্থানীয় মানুষের ভাবাবেগ কিছুটা আহত হওয়ায় খুশি আপ নেতৃত্ব। দেখা যাচ্ছে, কালকের সভা সফল করতে ও আগামী দিনের সম্ভাব্য লড়াইয়ে সফল হতে প্রাচীন এই জনপদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে মর্যাদা দিতে দ্বিধা নেই আপ শিবিরেও। কেজরীবাল বারাণসীতে পা দেওয়ার পরেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে স্থানীয় কালভৈরব মন্দিরে। স্থানীয় মান্যতা, তিনি একাধারে শহরের কোতয়াল বা রক্ষাকর্তা। লড়াই শুরু করার আগে তাঁর অনুমতি নেওয়াটাই এখানে দস্তুর। সেখান থেকে বিশ্বনাথ মন্দির। তার পরে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক ও পরে স্থানীয় সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে কেজরীবালের। যদিও আপাতত সবার চোখ রাজনীতিতে আপ-ঘরানার এক নয়া উপহারের দিকে ভোটের আগে গণভোটে। দিল্লিতে যা দেখা গিয়েছে।

আপের সাধারণ কর্মী থেকে নেতা সকলেই চাইছেন, মোদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিন কেজরীবাল। মোদী হাওয়ার অভিমুখ ঘুরুক এখান থেকেই, কেজরীবালের হাতে। কেন? কেজরীবালের জনাকয় সমর্থক মনে করিয়ে দিলেন, স্থান-মাহাত্ম্যে গঙ্গা এখানে উত্তরমুখী। স্রোতের টান যে উল্টো দিকে।

ভোটের অঙ্কে কত বিচিত্র ভাবেই না মিশে যায় স্থান-মাহাত্ম্য!

loksabha election baranasi anamitra sengupta aap bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy