Advertisement
২৫ মে ২০২৪

পাঁচমুখী লড়াইয়ে আশাবাদী মুশাহারি

এক প্রার্থী খাতায়-কলমে এখনও কট্টর জঙ্গি নেতা, খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। অন্য প্রার্থী প্রাক্তন জঙ্গি নেতা, বর্তমানে মন্ত্রী। তাঁর দলেরই বিক্ষুব্ধ নেতা তথা বর্তমান সাংসদও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে। চতুর্থ জন পৃথক রাজ্যকামী প্রাক্তন সাংসদ। এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বিএসএফ ও এনএসজি-র প্রাক্তন প্রধান তথা মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৩
Share: Save:

এক প্রার্থী খাতায়-কলমে এখনও কট্টর জঙ্গি নেতা, খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। অন্য প্রার্থী প্রাক্তন জঙ্গি নেতা, বর্তমানে মন্ত্রী। তাঁর দলেরই বিক্ষুব্ধ নেতা তথা বর্তমান সাংসদও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে। চতুর্থ জন পৃথক রাজ্যকামী প্রাক্তন সাংসদ। এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বিএসএফ ও এনএসজি-র প্রাক্তন প্রধান তথা মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল।

কোকরাঝাড় লোকসভা আসনে সব মিলিয়ে জমজমাট লড়াই। এক দিকে পৃথক বড়োল্যান্ড গঠনের রসায়ন, অন্য দিকে বড়ো ও অ-বড়ো ভোট কাটাকাটি হওয়ার সমীকরণে ঝুলছে কোকরাঝাড়ের ভাগ্য।

কোকরাঝাড় মানেই অসমে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী বড়ো পিপল্‌স ফ্রন্টের (বিপিএফ) মৌরসিপাট্টা। কিন্তু এ বার বিপিএফ সভাপতি হাগ্রামা মহিলারির কপালে ভাঁজ পড়েছে। বর্তমান তথা টানা তিন বারের সাংসদ সাংসুমা খুংগুর বিসমুতিয়ারিকে তিনি টিকিট দেননি। প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্মকে। ব্রহ্মর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে লড়তে নামার কথা ঘোষণা করেছেন ক্ষুব্ধ সাংসুমা। দলীয় কর্মীদের সমর্থন আদায় করতে সফরও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। সাংসুমাকে বহিষ্কারের হুমকি দিলেও শান্তি পাচ্ছেন না হাগ্রামা। আসনটি শরিকদের ছেড়েছে কংগ্রেস। সে কারণে কোকরাঝাড়ে প্রার্থী দেয়নি তারা। তা নিয়ে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে। শেষ পর্যন্ত দলের চাপে বিক্ষুব্ধ প্রার্থী না দিলেও তারা ভোট কাকে দেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সাংসুমা সরাসরি বড়োল্যান্ড গঠনের পক্ষে। বড়োল্যান্ড চায় বিপিএফ-ও। কিন্তু আবসু ও অন্যান্য বড়ো সংগঠনগুলির দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, হাগ্রামা আসলে অসম থেকে পৃথক হতে চান না। তিনি তরুণ গগৈয়ের তাঁবেদারি করেই চলতে চান। তার প্রতিবাদেই অল বড়ো স্টুডেন্টস্‌ ইউনিয়ন বা আবসু, বিপিপিএফ, আলোচনাপন্থী এনডিএফবি, ইউডিপিএফ ও বড়োল্যান্ডের দাবিতে গড়া যৌথ মঞ্চ একযোগে প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ উরখাও গৌরা ব্রহ্মকে প্রার্থী করেছে। তাদের মতে, পৃথক রাজ্য এলেই বড়োভূমিতে শান্তি, উন্নয়ন আসবে।

এ দিকে, পৃথক রাজ্যের দাবিকে খারিজ করে অ-বড়ো জনগোষ্ঠীগুলির যৌথ মঞ্চ অবিভক্ত আলফার ৭০৯ ব্যাটেলিয়ানের কম্যান্ডার হীরা শরণিয়াকে প্রার্থী করেছে।

আলফার আলোচনাপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলালেও এখনও কেন্দ্রের সঙ্গে আলফার শান্তি চুক্তি হয়নি। তাই তিনি খাতায়-কলমে এখনও জঙ্গি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে আলফা নেতাদের আত্মসমর্পণের পরে গুয়াহাটিতে একটি ডাকাতি ও হত্যার মামলায় ফেঁসে গ্রেফতার হন হীরা। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল একে-৫৬ রাইফেল। এর পর আলফা নেতৃত্ব তাঁকে সাসপেন্ড করে। জামিনে মুক্ত অবস্থাতেই লড়তে নেমেছেন তিনি। গত কয়েক বছরের এই অঞ্চলের বড়ো এবং অ-বড়ো জনজাতি সংঘর্ষের জেরে অ-বড়োদের মনে জমে থাকা আশঙ্কাই হীরার মূলধন।

আর এই বড়ো বনাম অ-বড়োর কোঁদলের মধ্যে মধ্যপন্থা নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল রঞ্জিত্‌ শেখর মুশাহারি। মুশাহারি নিজে বড়ো হলেও, তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের মতে, অ-বড়োরাও নির্ভয়ে মমতাদেবীর প্রতিনিধিকে ভোট দেবেন। কিন্তু মুশাহারি বড়ো ভোট বেশি পাবেন, না অ-বড়ো ভোট, তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই। যদিও কোকরাঝাড়ের তৃণমূল প্রার্থী মুশাহারি নিজে মনে করছেন, “বাকি প্রার্থীরা আমার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। এখানকার স্থানীয় মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। আমি ও ‘সততার প্রতীক’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁদের কাঙ্খিত বিকল্প।”

বড়োল্যান্ডে শান্তি, নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনাই প্রাক্তন নিরাপত্তা কর্তার প্রধান লক্ষ্য। তবে পৃথক বড়োল্যান্ড গঠন নিয়ে তাঁর ও তাঁর দলের মত স্পষ্ট করে জানাননি মুশাহারি। তাঁর কথায়, “পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করা যায়, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

konkrajhar election rajibaksha rakshit guahati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE