Advertisement
E-Paper

পরিবর্তন নেই ভরাডুবির কংগ্রেসেও

আশঙ্কা ছিল আজ মায়ের সামনেই বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারেন ছেলে। কিন্তু সে সব কিছুই হল না। ‘ইস্তফার প্রস্তাব’ নামক যে চেনা ছক কংগ্রেসে সেই আবহমান কাল থেকে চলে আসছে, সেই ছকে ফেলেই পাশার দানটা রাতারাতি বদলে দিলেন সনিয়া-রাহুল! যাকে দলের একাংশই নাটক বলে অভিহিত করেছেন। লোকসভা ভোটে গোহারা হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০৩:০৪
দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল ও সনিয়া। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল ও সনিয়া। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

আশঙ্কা ছিল আজ মায়ের সামনেই বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারেন ছেলে। কিন্তু সে সব কিছুই হল না। ‘ইস্তফার প্রস্তাব’ নামক যে চেনা ছক কংগ্রেসে সেই আবহমান কাল থেকে চলে আসছে, সেই ছকে ফেলেই পাশার দানটা রাতারাতি বদলে দিলেন সনিয়া-রাহুল! যাকে দলের একাংশই নাটক বলে অভিহিত করেছেন।

লোকসভা ভোটে গোহারা হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। যে বৈঠকের আগে গত ৭২ ঘণ্টা ধরে কংগ্রেসের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা বলছিলেন, বৈঠকে তাঁর কাজকর্ম নিয়ে বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারেন রাহুল। এমনকী, তাঁর নিজস্ব টিম ভেঙে দেওয়ার দাবিও উঠতে পারে বৈঠকে। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের শুরুতেই সনিয়া ও রাহুল দলের সভানেত্রী ও সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফার প্রস্তাব দিলে যাবতীয় বিদ্রোহ ও অসন্তোষ কার্যত শিকেয় ওঠে। উল্টে কেন সনিয়া-রাহুলের ইস্তফা দেওয়া উচিত হবে না, তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় আলোচনা! যার নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মনমোহন সিংহ। আর এ সবের নিট ফল? ভরাডুবির পরেও স্থিতাবস্থাই বজায় রইল দলে!

গোটা ঘটনায় প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও চরম ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। দলের এক নেতার কথায়, “আজ যেটা হল, সেটা স্রেফ নাটক! সাধারণ লোকে কি বুঝবে না এই নাটকটা? মোদী যেখানে কাজ করে দেখাচ্ছেন, সেখানে আমাদের নেতাদের এই আচরণ দলের আরও সর্বনাশ ডেকে আনবে।”

মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে কমবেশি এই ধরনের ছবিই দেখা গিয়েছিল দিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকে। দলের ইতিহাসে সব থেকে খারাপ ফল করার পরে পলিটব্যুরোর বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বিপর্যয়ের দায় নিজের ঘাড়ে নেন। তিনি অবশ্য ইস্তফার কথা মুখে আনেননি। কিন্তু যৌথ দায়িত্বের তত্ত্ব আউড়ে বিমানবাবুকে সেই দায় ঘাড়ে নিতে দেননি দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। পরে বিমানবাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, “একক ভাবে দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে পদত্যাগ করার ঘটনা বুর্জোয়া দলগুলিতে হয়।” ঘটনাচক্রে, আজ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও (সিপিএমের ভাষায় বুর্জোয়া দল) সিপিএমের মতোই যৌথ দায়িত্বের কথা বলে সনিয়া-রাহুলের ইস্তফার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে!

অথচ কংগ্রেসের অন্দরে নিম্নচাপের আবহ গত কাল রাত পর্যন্তও ছিল। দলীয় সূত্রে খবর, পরিস্থিতি বুঝে রবিবার মধ্য রাত থেকে একে একে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের ফোন করেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল ও ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য জনার্দন দ্বিবেদী। ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের তাঁরা বারবার অনুরোধ করেন যে, সোমবারের বৈঠকে কেউ যেন রাহুলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করেন। পরিবর্তে তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে পৃথক ভাবে পরে দেখা করবেন সনিয়া গাঁধী। তখনই যেন সনিয়াকে তাঁদের অসন্তোষের কথা জানানো হয়। মধ্যরাতের সেই অপারেশনের পর আজকের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের বাকি চিত্রনাট্যটাও লেখা হয়ে যায় আগে থেকেই। বৈঠকে সনিয়া-রাহুলের ইস্তফার প্রস্তাব শুধু খারিজই করা হয়নি, সেই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করে এ-ও বলা হয়, “কংগ্রেস সভানেত্রী ও সহ-সভাপতি যে রকম নিরলস পরিশ্রম করে প্রচার করেছেন, সে জন্য তাঁদের প্রশংসা করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে অবশ্য সমালোচনা এড়াতে গৃহীত প্রস্তাবে বার্তা দেওয়া হয়, ভরাডুবির ধাক্কা সামলাতে এ বারে সংগঠনে আমূল বদল করা হবে।

রাহুল গাঁধীর সমর্থনে যুব কংগ্রেস কর্মীদের স্লোগান।
এআইসিসি সদর দফতরের বাইরে। ছবি: পিটিআই

ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের শুরুতেই আজ সনিয়া গাঁধী বলেন, “ভোটের ফল ঘোষণার দিনই আমি দায় নিয়েছি। তবে ভোটের আগে গোটা দেশ জুড়ে যে রকম মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন বিরোধীরা, সেটা হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এটাও ঠিক যে, সরকার এবং দলেরও অনেক ব্যর্থতা ছিল।” তাঁরা যে সাধারণ মানুষের মধ্যে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন, তা স্বীকার করে নিয়ে সনিয়া বলেন, “হয়তো এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল, যা আমি নিতে পারিনি। তাই ব্যর্থতার দায় নিয়ে আমি পদ থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি।”

সনিয়ার কথা শেষ হতেই রাহুল বলেন, “কংগ্রেসের প্রতিটি স্তরে যে ভাবে দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা নেই। কিন্তু তা এক দিন শুরু হওয়া দরকার। তাই আমি ব্যর্থতার দায় নিয়ে সেই দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছি এবং সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফার প্রস্তাব দিচ্ছি।”

এর পরেই আসরে নামেন মনমোহন সিংহ। সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ ভাবে ইস্তফা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং দলের সামনে চ্যালেঞ্জ কী কী, তা খুঁজে বার করতে হবে। এবং সেগুলির সমাধান সূত্র খুঁজতে হবে।” একই সঙ্গে লোকসভা ভোটে ভরাডুবির জন্য সরকারের ব্যর্থতাও আজ মেনে নেন মনমোহন। ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের প্রতি তিনি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিষয়টিই কংগ্রেস বিরোধিতার পরিবেশ মজবুত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার দায় সরকার এড়াতে পারে না।”

প্রশ্ন হল, বিস্তর ঢাকঢোল পিটিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকার পর শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াল? কারও দায় কি চিহ্নিত হল? নাকি ভবিষ্যতের জন্য আদৌ কোনও পথ বেরোল আজকের বৈঠক থেকে?

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “বরাবর যা হয়েছে, এ বারও তাই হল! আপাতত কিছুই হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।” তবে একাধিক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, মাসখানেকের মধ্যে ওয়ার্কিং কমিটি তথা কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে সংগঠনের খোলনলচে বদলে ফেলার চেষ্টা করবেন সনিয়া-রাহুল। এ ধরনের ঘটনার পর যা মোটেও নতুন নয়। কিন্তু যাঁকে নিয়ে সব চেয়ে বেশি প্রশ্ন, সেই রাহুল নিজে বদলাবেন কি না, সেই সংশয় রয়েই গেল নেতাদের মনে।

কংগ্রেসে দায়বদ্ধতা বলে কোনও বস্তু নেই।
কিন্তু এক দিন তা শুরু হওয়া দরকার। আমি সেই
প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছি এবং সহ-সভাপতি
পদ থেকে ইস্তফার প্রস্তাব দিচ্ছি।

রাহুল গাঁধী

আমি বিশ্বাস করি, দলকে শক্তিশালী করার জন্য যে
পরিবর্তন করা দরকার ছিল, তা করতে পারিনি।
তাই পরাজয়ের দায় স্বীকার করছি এবং
সভানেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছি।

সনিয়া গাঁধী

rahul gandhi sonia gandhi congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy