ফের ভাঙল অসম গণ পরিষদ। চন্দ্রমোহন পটওয়ারি, হিতেন গোস্বামীর পরে এ বার দলের তিন তাবড় নেতা---বিজন মহাজন, দেবদত্ত বরকটকি এবং গুয়াহাটির প্রাক্তন মেয়র কুইন ওঝা বিজেপিতে যোগ দিলেন। অন্য দিকে, প্রদেশ কংগ্রেসে বিদ্রোহের খবর ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “আমার দলের মধ্যে ঝগড়া করলেও ভোটের ময়দানে লড়াইটা এক সঙ্গেই লড়ি। বিজেপি মুখে বড় বড় কথা বললেও, অগপর ঘর ভাঙিয়ে শক্তি না বাড়ালে ওরা রাজ্যে লড়তেই পারবে না।”
আজ সকালে প্রদেশ বিজেপি কার্যালয়ে সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়াল, সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী, রমেন ডেকারা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজন, কুইন ও দেবদত্তবাবুকে দলের সদস্য করে নেন। এঁদের মধ্যে দেবদত্তবাবু অসম আন্দোলন শুরু করার অন্যতম পুরোধা ছিলেন। বিজনবাবু নামী আইনজীবি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে কুইনদেবী, বিজনবাবুরা বলেন, “যে ভাবে দলে স্বেচ্ছাচার চলছে, পুরনো কর্মীদের অবহেলা করা হচ্ছে তাতে দলত্যাগ ভিন্ন পথ ছিল না। আমাদের উদ্দেশ্য একই। আশা করি বিজেপিও আঞ্চলিকতাবাদের আদর্শ ও অসমের মৌলিক সমস্যা নিয়ে কাজ করবে।” এরই পাশাপাশি, দল থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার ও অবমাননার জন্য অগপ সভাপতি প্রফুল্ল মহন্তর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা। রাজ্যসভায় ভোট বাতিল হওয়ার জেরে পদ্মকে ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে অগপ।
তবে এই ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়েও আজ প্রথম দফায় লোকসভার ১৪টি আসনের মধ্যে সাতটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল অসম গণ পরিষদ। আজ বিকেলে আমবাড়িতে, দলের সদর দফতরে সভাপতি প্রফুল্ল মহন্ত জানান: বরপেটা থেকে ফণীভূষণ চৌধুরী, গুয়াহাটি থেকে বীরেন্দ্রপ্রসাদ বৈশ্য, নগাঁও থেকে বিজেপি ছেড়ে অগপয় যোগ দেওয়া মৃদুলা বরকটকি, কলিয়াবরে অরুণ শর্মা, যোরহাট থেকে প্রদীপ হাজরিকা, ডিব্রুগড় থেকে অনুপ ফুকন, লখিমপুর থেকে হরিপ্রসাদ দিহিঙিয়াকে প্রার্থী করা হচ্ছে। ডিফুতে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে অগপ। কোকরাঝাড় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। বাকি ৫টি কেন্দ্রে কারা প্রার্থী হবেন তা পরে জানানো হবে। ভাঙন নিয়ে অবশ্য তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
অগপ নেতাদের দলবদল প্রসঙ্গে ব্যঙ্গ করে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “বিজেপি হল ‘ওয়ান ম্যান শো’। ওদের মোদী ছাড়া গতি নেই। রাজ্যে অগপকে না ভাঙালে বিজেপি তো সব আসনে প্রার্থীই দিতে পারবে না। ওদের নিজেদের মধ্যে গোপন আঁতাতও থাকতে পারে।” উল্লেখ্য, প্রথমে ১৪টি, পরে ১২টি আসনে জয় নিয়ে ‘নিশ্চিত’ থাকা গগৈ আজ কংগ্রেসের সম্ভাব্য জয়ের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনেন। মোদীকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই বললেও, গগৈ মেনে নেন, ‘‘বিজেপিই আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। অগপ থেকে কংগ্রেসে কেউ এলে স্বাগত জানাব। তবে বিজেপিতে যেমন গেলেই পদ বা টিকিট মেলে কংগ্রেসে তা হবে না।” এআইইউডিএফকে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করে গগৈ জানান, বদরুদ্দিন আজমল এআইসিসির সঙ্গে আঁতাত চেয়ে বিস্তর দর কষাকষি করেন। তবে ধুবুরি, বরপেটা, করিমগঞ্জ ওদের ছাড়া সম্ভব ছিল না।
গগৈ বিরোধী শিবির হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন বিধায়ক গত কাল রাতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার বাড়িতে বৈঠক করেন। এরপরেই আজ সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন গগৈ। জানান, হিমন্ত তাঁকে জানিয়েই নির্বাচন কেন্দ্রীক বৈঠক ডেকেছিলেন। কংগ্রেসের বিরোধ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “এত বড় দলে ঝগড়া থাকবেই। আমি সবাইকে তার অভিযোগ নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ দিই। তবে আমি তো লোকসভায় প্রার্থী বাছাই করিনি। তা করেছে কমিটি। তাই আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রেখে লাভ নেই।” তাঁর কথায়, “আমাদের যেমন ঝগড়া বাধে, তেমনই মিটেও যায়। লোকসভা ভোটে সকলে একজোট হয়েই লড়ব এবং জিতব। এটাই কংগ্রেসের ঐতিহ্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy