Advertisement
E-Paper

ডিসেম্বরে পতন, ডিসেম্বরেই উত্থান! ভগবদ্গীতা বদলে দিয়েছে ‘বিশৃঙ্খল’ ঈশানকে, বিশ্বকাপের দলে ফিরে প্রথম প্রতিক্রিয়া উইকেটকিপারের

গত তিনটি ডিসেম্বরে জীবনে সব কিছু দেখেছিলেন তিনি। উত্থান, পতন দেখার পর খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনে ফেরার মন্ত্র। সেই ডিসেম্বরেই ঈশান কিশনের প্রত্যাবর্তন হল ভারতীয় দলে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫১
cricket

ভারতের ক্রিকেটার ঈশান কিশন। ছবি: সমাজমাধ্যম।

ঠিক এক বছর আগে এই ডিসেম্বর মাসেই ভগবদ্গীতার একটি শ্লোক পড়তে পড়তে চোখে জল এসেছিল ঈশান কিশনের। ব্যক্তিগত সমস্যায় জর্জরিত ঈশান শান্তি খুঁজতে ভগবদ্গীতাই বেছে নিয়েছিলেন। ক্রিকেটজীবনে কাছের লোকেদের কাছে ধোঁকা খাওয়া এবং জীবন কোন দিকে এগোবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন ঈশান। এক ডিসেম্বর পর, ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন হল তাঁর। গত চারটি ডিসেম্বরে ঈশান দেখেছেন উত্থান, পতন এবং প্রত্যাবর্তন।

২০২২-এর ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে ১২৬ বলে দ্বিশতরান করেছিলেন ঈশান। ভেঙে দিয়েছিলেন ক্রিস গেলের রেকর্ড। পরের বছর মানসিক ক্লান্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝেই দল থেকে ছুটি চান। পরে দুবাইয়ে আমোদ-প্রমোদ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি ভারতের দল পরিচালন সমিতি। তৎকালীন কোচ রাহুল দ্রাবিড়, প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর জানিয়েছিলেন, দল থেকে বাদ পড়ার বিষয়টি ভাল ভাবে সামলাতে পারেননি ঈশান। প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর বিশৃঙ্খল মানসিকতা নিয়েও।

২০২৪-এর ডিসেম্বরে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভগবদ্গীতার শ্লোক চোখে পড়ে, যেখানে লেখা ছিল, ‘কর্ম করো, ফলের আশা কোরো না’। বাবা প্রণব পাণ্ডেকে এই শ্লোকের অর্থ জিজ্ঞাসা করেন। বাবা অর্থ বোঝানোর পাশাপাশি আরও কিছু শ্লোক বলেন। তার পর থেকে এই বই ঈশানের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যাট, উইকেটকিপিং গ্লাভসের সঙ্গে এই বই তাঁর কিটব্যাগে থাকবেই।

ঝাড়খণ্ডকে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি জেতানো এবং প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ রান করে ২৫ মাস পরে আবার ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়ে হয়তো ঈশান এই শ্লোকের মানে বুঝতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের মাটিতে শতরানের পর ২০২৩ এক দিনের বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার সঙ্গে তাঁর ওপেন করার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবে পরের সিরিজ়েই ভারতীয় দল রোহিতের সঙ্গে শুভমনকে বেছে নেয়। ঈশানকে ঠেলে দেওয়া হয় রিজ়ার্ভে। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপে কেএল রাহুল অসুস্থ থাকার সময় ঈশান মিডল অর্ডারে নেমে রান করেছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্লেকেলের কঠিন পিচে ভাল খেলেছিলেন। তার পর আবার দল থেকে বাদ পড়ে যান। বিশ্বকাপেও খেলা হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে ঋষভ পন্থ না থাকলেও ভারতীয় দল জিতেশ শর্মা এবং সঞ্জু স্যামসনের উপর আস্থা রেখেছে। তা হয়তো বদলাতে চলেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

ঈশান সম্পর্কে শনিবার প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর বলেন, “সাদা বলের ক্রিকেটে ও টপ অর্ডারে খেলে। ভাল ফর্মেও রয়েছে। ভারতের হয়ে আগেও খেলেছে। এক দিনের ক্রিকেটে ওর দ্বিশতরান রয়েছে। ঋষভ পন্থ বা ধ্রুব জুরেলরা ওর চেয়ে এগিয়ে থাকায় ভারতীয় দলে সুযোগ পায়নি। ওরা দু’জনেই ভাল ক্রিকেটার। এ ছাড়া ওকে না নেওয়ার আর কোনও কারণ ছিল না। ঈশান শুরুতে ব্যাট করে, সঞ্জু শুরুতে ব্যাট করে। অভিষেক শর্মাও রয়েছে। আমাদের মতে, এটাই সেরা কম্বিনেশন। ভাল দল তৈরি করতে গেলে ভাল বিকল্পেরও দরকার হয়। কেউ চোট পেতে পারে বা ফর্ম খারাপ হতে পারে। আমাদের মনে হয়েছে ঈশান এ ব্যাপারে বাকিদের থেকে এগিয়ে।”

ঈশান নিজে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি। সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “আমি খুব খুশি। খুব ভাল লাগছে ভারতীয় দলে ফিরতে পেরে। ঝাড়খণ্ড দলের জন্যও খুশি। প্রথম বার সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি জিতেছি আমরা।”

শেষ বার ভারতের হয়ে খেলার পর ঈশান খেলেছেন ডিওয়াই পাতিল প্রতিযোগিতা, বুচি বাবু ট্রফি, আইপিএল, কাউন্টি এবং ঘরোয়া ক্রিকেট। এর মাঝে বোর্ডের চুক্তি হারিয়েছেন। গত বছর ইংল্যান্ড সফরে ওভাল টেস্টের আগে পন্থ চোট পাওয়ায় ঈশানের কথা ভাবা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে চোট পেয়ে ছিটকে যান। তার পর থেকে বেশ কয়েক বার তাঁর নাম নির্বাচনী বৈঠকে উঠে এলেও মানসিকতার অজুহাত দেখিয়ে বাদ পড়েন। তবে সৈয়দ মুস্তাক জেতার পর আর তাঁকে বাইরে রাখা সম্ভব হয়নি।

কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরে রেখে ভগবদ্গীতা পাঠ এবং আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস রেখেই মানসিক শান্তি খুঁজে নিয়েছেন ঈশান। তাঁর বাবা প্রণব ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে বলেছেন, “এই হতাশা ওকে শৃঙ্খলা শিখিয়েছে। আরও ক্ষুধার্ত করে তুলেছে। যে ছেলেটা সকলকে হাসাত, সে-ই হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। আমরা কাঁদতাম। খুব কঠিন সময় কাটিয়েছি। ১২ বছর বয়সে ছেলেটা পটনা ছেড়ে রাঁচীতে চলে গিয়েছিল। তার পরেও লোকে ওর নামে কত কথা বলত।”

প্রণব আরও বলেন, “অনেক দিন ফ্ল্যাটে একা একা কাটিয়েছে। ম্যাগি রান্না শিখেছে। রাতে সেটাই খেয়েছে। সকালে অনুশীলনের আগে শুধু ছাতু খেয়েছে। আমাদের সঙ্গে সব কথা ভাগ করে নিত।”

দল নির্বাচনের আগের দিনও ঈশান আশা করেননি তাঁর নাম থাকবে। তিনি হতাশ, সে কথা জানিয়েছিলেন। তবে শনিবারের দিনটা হয়তো ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে ঈশানের।

Ishan Kishan ICC T20 World Cup 2026 BCCI Ajit Agarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy