Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিক্ষোভ রাজধানীতে, পাশ কাটাচ্ছে বিজেপি

আমির খানের ‘পিকে’ ছবিটিকে নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ ছড়াল দেশের রাজধানীতেও। বজরঙ্গ দল ও হিন্দু সেনার কর্মীদের প্রতিবাদ ও ভাঙচুরের ঘটনা উত্তরপ্রদেশের বরেলী থেকে অসমের শিলচর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কার্যত নীরবতার রাস্তাই বেছে নিয়েছে বিজেপি। এক দিকে সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের প্রতিবাদ, অন্য দিকে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতার প্রশংসার মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে অদ্ভুত নীরবতার রাস্তা বেছে নিয়েছে বিজেপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

আমির খানের ‘পিকে’ ছবিটিকে নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ ছড়াল দেশের রাজধানীতেও। বজরঙ্গ দল ও হিন্দু সেনার কর্মীদের প্রতিবাদ ও ভাঙচুরের ঘটনা উত্তরপ্রদেশের বরেলী থেকে অসমের শিলচর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কার্যত নীরবতার রাস্তাই বেছে নিয়েছে বিজেপি। এক দিকে সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের প্রতিবাদ, অন্য দিকে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতার প্রশংসার মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে অদ্ভুত নীরবতার রাস্তা বেছে নিয়েছে বিজেপি। তাদের মতে, শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সকলেরই রয়েছে। আর অশান্তি হলে তা স্থানীয় প্রশাসন দেখবে। গোটা বিষয়টিতে একেবারে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল।

ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ এনে বজরঙ্গ দল ও হিন্দু সেনার কর্মীরা আজ পুরনো দিল্লির ‘ডিলাইট’ প্রেক্ষাগৃহের বাইরে প্রতিবাদ জানায়। পিকে-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পাশাপাশি, বরেলীতে প্রসাদ টকিজ-এ ঢুকে বজরঙ্গ ও হিন্দু যুবা বাহিনীর সদস্যরা ভাঙচুরও করে। সিনেমার পোস্টার ছিঁড়ে দিয়েছে তারা। পোড়ানো হয়েছে আমির খানের কুশপুত্তলিকাও। আর অসমের শিলচরের দুটি প্রেক্ষাগৃহে আজ যখন সিনেমাটি চলছিল, তা বন্ধ করতে আচমকাই ঢুকে পড়ে বজরঙ্গ দলের কর্মীরা। প্রেক্ষাগৃহ ভাঙচুর করে তারা, ছিঁড়ে ফেলে সিনেমার পোস্টার। হামলা হয়েছে আমদাবাদের প্রেক্ষাগৃহেও। এ দিকে, এই বিক্ষোভের মধ্যেই ছবির পরিচালক রাজকুমার হিরানি মন্তব্য করেছেন, কোনও ধর্মকে আঘাত ও অসম্মান করা তাঁর ছবির উদ্দেশ্য নয়। কবীর ও গাঁধীর ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ছবির মধ্যে ধর্মের মূল ভাবনাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।

যদিও আমদাবাদ, ভোপাল, রাঁচির পরে বিক্ষোভের উত্তাপ এখন দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এর পরেও বিজেপি নেতৃত্ব নীরবতার পথই বেছে নিয়েছেন। দলের মুখপাত্র জি ভি এল নরসিংহ রাও জানান, পিকে বিতর্কে বিজেপির নিজস্ব কোনও অবস্থান নেই। তবে তাঁর ব্যক্তিগত মত হলো, “এটা একটা অতি সাধারণ ছবি। ফলে মন্তব্য করা অর্থহীন।” বজরঙ্গ দলের বিক্ষোভ নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, “গণতান্ত্রিক দেশে সিনেমা করার অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনি শান্তিপূর্ণ ভাবে যে কেউ প্রতিবাদ জানাতেও পারে।” প্রশ্ন হয়, বজরঙ্গ দল আদৌ শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে কিনা, বিজেপি মুখপাত্রের জবাব, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে। তেমন হলে তারাই বুঝবে।” ঘটনা হলো, কিছু দিন আগে পর্যন্তও সঙ্ঘ পরিবারের একের পর এক নেতার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছিল নরেন্দ্র মোদীকে। সে সব নিয়ন্ত্রণ করতে সঙ্ঘের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে বিষয়টিকে অন্য ভাবেই দেখছে তারা। কেননা, আগের ক্ষেত্র গুলিতে নেতা-নেত্রীদের কোনও একটি বিশেষ মন্তব্য মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সংসদে হইচই শুরু হয়ে সরকারের কাজে বাধা আসছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিতর্কিত ছবির নির্মাণ নিয়ে সঙ্ঘের একাংশ আপত্তি তুলছে। তাদের মনে হচ্ছে বার বার একটি বিশেষ ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আর প্রতিবাদ যা হচ্ছে, তা-ও বিক্ষিপ্ত ভাবে। দেশে আইনশৃঙ্খলার সমস্যাও সে ভাবে দেখা যায়নি। ফলে এখনই লাগাম কষার মতো পরিস্থিতি আসেনি বলেই মনে করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

এ দিকে এই নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতা দিগ্বিজয় সিংহ মন্তব্য করেছেন, “পিকে নিয়ে বজরঙ্গ দল যা করছে, নরেন্দ্র মোদী তার নিন্দা করুন। অন্তত টুইটারে ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।” বিজেপি কেন পুরোপুরি ভাবে নীরব, সে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস নেতার মন্তব্য, “ এ বার নরেন্দ্র মোদী কি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবেন?”

এ দিকে, বিজেপি নেতা সুব্রমক্ষ্মণ্যম স্বামী পিকের টাকা যোগানোর পিছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেঅভিযোগ এনেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pk agitation row bjp delhi amir khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE