Advertisement
E-Paper

বিধানসভায় জেডিইউ সরকারকে সমর্থন লালুর

দীর্ঘ দু’দশক পর আবার রাজনীতির একই মঞ্চে চলে এলেন লালুপ্রসাদ-নীতীশ কুমার। বিহারে দু’জনকেই প্রায় অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে মোদী-লহর। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্য-রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে পরোক্ষে বিজেপি-র বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হল লালুর আরজেডি ও নীতীশের জেডিইউ। এমনই যে হতে চলেছে তা কয়েকদিন ধরেই আঁচ করা যাচ্ছিল।

স্বপন সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০৩:২৬

দীর্ঘ দু’দশক পর আবার রাজনীতির একই মঞ্চে চলে এলেন লালুপ্রসাদ-নীতীশ কুমার। বিহারে দু’জনকেই প্রায় অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে মোদী-লহর। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্য-রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে পরোক্ষে বিজেপি-র বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হল লালুর আরজেডি ও নীতীশের জেডিইউ। এমনই যে হতে চলেছে তা কয়েকদিন ধরেই আঁচ করা যাচ্ছিল। রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জেডিইউ সরকারকে আরজেডি নিঃশর্তে সমর্থন করবে---আজ লালুপ্রসাদের এই ঘোষণা শুধু বিহারে নয়, সারা দেশেই বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে নির্দিষ্ট বার্তা নিয়ে গেল। বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আরজেডি নেতৃত্ব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও তাঁরা বৃহত্তর রাজনীতির স্বার্থে তাঁকেই সমর্থন দিতেন।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন বিজেপি-জোট দখল করেছে। পাশাপাশি, আরজেডি, কংগ্রেস ও জেডিইউয়ের আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৪,২,২। এ ছাড়া কাটিহার আসনটি এনসিপি নেতা তারিক আনোয়ার দখলে রেখেছেন। আর শতাংশের হিসেবে বিজেপি-জোট ৩৮.৮% শতাংশ ভোট পেয়েছে। সেখানে আরজেডি, জেডিইউ ও কংগ্রেস পেয়েছে যথাক্রমে ২০.১%, ১৫.৪%, ৮.৪% ভোট। অর্থাৎ তাদের মিলিত ভোট বিজেপি-জোটের থেকে ৫.৫ শতাংশ বেশি। আপাতত ২৩৭ আসনের বিধানসভায় বিজেপি বিধায়ক ৮৯। আর জেডিইউ, আরজেডি ও কংগ্রেসের বিধায়ক যথাক্রমে ১১৭, ২১ ও ৪---মিলিতভাবে ১৪২। এর সঙ্গে রয়েছে সিপিআইয়ের একজন বিধায়ক। এ ছাড়াও রয়েছে অন্তত ৪ নির্দলের সমর্থনও।

কংগ্রেস আগেই জিতনরাম-সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছে। বিধানসভায় কাল জিতনরাম মাঁঝির শক্তি পরীক্ষা। তার এক দিন আগে আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ বলেন, “বিহারে জেডিইউ সরকারকে কব্জা করার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। এই সরকার যাতে পুরো সময় থাকে তার জন্য আমরা বাইরে থেকে নিঃশর্ত সমর্থন জানাবো। এই সরকার পুরো সময় ক্ষমতায় থাকবে। কারণ মানুষ তাদের পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়েছেন।” ১৯৯৪ সালে সাবেক জনতা দল ছেড়ে লালু এবং নীতীশ আলাদা হয়ে যান। সেই বছরের এপ্রিলে গড়ে ওঠা সমতা পার্টিই আজকের জেডিইউ। আরজেডির এক নেতার কথায়, “ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমরা তো একই পরিবারে ছিলাম। সুতরাং দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির এই উত্থানের সময় এক হতে আমাদের সমস্যা কোথায়?” আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউ এবং আরজেডি কি এক সঙ্গে লড়াই করবে? লালুপ্রসাদের বক্তব্য, “ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যৎই বলবে।” জেডিইউ এবং আরজেডি যে আসলে সেই সাবেক জনতা পরিবারেরই সদস্য, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন জেডিইউ মুখপাত্র কে সি ত্যাগীও। তাঁর কথায়, “আরজেডির এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের পরিবার এক, ঘর আলাদা। আগামী দিনে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ লড়াই আজ বিহার থেকেই শুরু হল। সারা দেশেই তা ছড়িয়ে পড়বে।”

আরজেডি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মূলত তিনটি কারণে লালুকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। প্রথমত, জিতনরামকে সমর্থনের মাধ্যমে দলিত-মহাদলিতদের কাছে লালুপ্রসাদ একটা বার্তা দিলেন। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী ফলাফল দেখে কংগ্রেস বলছে, আরজেডির সঙ্গে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। লালুর বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিয়েছে। আগামী দিনে কংগ্রেস লালুপ্রসাদের হাত ধরবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে লালুর নিজেরই। সে ক্ষেত্রে আরজেডি একা হয়ে পড়বে। তৃতীয়ত, আগামী দিনে আরও কিছু বিধায়ক আরজেডি ছেড়ে যেতে পারেন। সেটা আটকানোও লালুপ্রসাদের উদ্দেশ্য।

তাঁর প্রাক্তন রাজনৈতিক সহযোগী লালুপ্রসাদের এই সিদ্ধান্ত জানার পরে লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসোয়ান বলেছেন, “বন্যা যখন আসে তখন বিছে এবং সাপ এক সঙ্গেই থাকে। মোদী-লহরের সামনে এদের আর কোনও বিকল্প ছিল না।” আর বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা, বিজেপি-র নন্দকিশোর যাদব বলছেন, “কংগ্রেস-আরজেডি-জেডিইউ এখন তিনটি বড়সড় শূন্য। তিন শূন্যকে যোগ করলেও ফল শূন্যই দাঁড়ায়। এ নিয়ে আমরা ভাবিত নই।” বিধানসভায় আরজেডি নেতা তথা সদ্য নির্বাচিত আরজেডি সাংসদ আব্দুল বারি সিদ্দিকি বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে মহাদলিত মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাই। এই প্রথম কোনও দলিত নেতা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন।” আর পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি এবং আরএসএস রাজ্যের সরকারকে ফেলতে চাইছে। তা হবে না। নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও আমরা একই সিদ্ধান্ত নিতাম।”

swapan sarkar jdu nitish kumar lalu prasad yadav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy