Advertisement
E-Paper

ভাবনায় যৌথ রেডিও বক্তৃতা, আসামাত্র ভিসা

হাতে সময় আর মাত্র চার দিন। তার পরেই দিল্লিতে নামবে বারাক ওবামার ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতে থাকবেন সাকুল্যে আড়াই দিন। মোট এই সাড়ে ছ’দিনের বিন্দুমাত্র যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকেই এখন কড়া নজর রেখে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দফতরে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কূটনৈতিক আলোচনা তো হবেই। কিন্তু তার বাইরেও দু’টি বিষয়কে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৩

হাতে সময় আর মাত্র চার দিন। তার পরেই দিল্লিতে নামবে বারাক ওবামার ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতে থাকবেন সাকুল্যে আড়াই দিন। মোট এই সাড়ে ছ’দিনের বিন্দুমাত্র যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকেই এখন কড়া নজর রেখে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দফতরে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কূটনৈতিক আলোচনা তো হবেই। কিন্তু তার বাইরেও দু’টি বিষয়কে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

১) দু’দেশের মধ্যে ‘আসামাত্র ভিসা’ (ভিসা অন অ্যারাইভাল) দেওয়ার প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব চালু করা।

২) ওবামার সঙ্গে রেডিওতে একটি যৌথ বক্তৃতা দেওয়া।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই দু’টি বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারত ও মার্কিন সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পৌঁছচ্ছেন পেন্টাগনের আন্ডার সেক্রেটারি ফ্রাঙ্ক কেন্ডাল। তাঁর সঙ্গে ভারতীয় কর্তারা প্রধান দু’টি বিষয়ের পাশাপাশি আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের আলোচ্যসূচিও ঝালিয়ে নেবেন।

কেন এই দু’টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব?

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, দু’দেশের মধ্যে তাত্ত্বিক ও দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা কিংবা চুক্তির পাশাপাশি এমন কিছু সিদ্ধান্তও মোদী নিতে চান, যাতে অবিলম্বে দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হন। তেমনই একটি ক্ষেত্র হল ভিসা। মার্কিন ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং জটিল। তার সরলীকরণের প্রয়োজন আছে বলে অনেকেই মনে করেন। অন্য দিকে, মার্কিনদের এ দেশে আসামাত্র ভিসা দেওয়া গেলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সুবিধেই হবে। প্রাথমিক ভাবে সব বিমানবন্দরে না হলেও আপাতত নয়াদিল্লি এবং নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরে ‘আসামাত্র ভিসা’-র ব্যবস্থা চালু করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর।

এর জন্য অবশ্য ভারতীয় বিমানবন্দরকে প্রযুক্তিগত ভাবে প্রস্তুত হতে হবে। কারণ, ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি বিরাট প্রশ্ন। সে ক্ষেত্রে এমন কোনও বায়োমেট্রিক কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে, যা বিমানবন্দরে দেখানো মাত্রই সেই ব্যক্তি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য চোখের সামনে চলে আসবে। এই প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও আমেরিকার সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। মোদ্দা কথা, ওবামার সফরের মধ্যেই ভিসার বিষয়টি নিয়ে কোনও চুক্তির ঘোষণা করা যায় কি না, কথা চলছে তা নিয়েই।

এর সঙ্গে রয়েছে রেডিও-বার্তা। চেষ্টা চলছে, মোদী-ওবামাকে একসঙ্গে রেডিওতে হাজির করার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজের ভাবনা পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যেই আকাশবাণীতে ‘মন কি বাত’ নামে একটি অনুষ্ঠান শুরু করেছেন মোদী। এ বার তাকেও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। সেপ্টেম্বরে যখন মোদী আমেরিকা গিয়েছিলেন, তখন মোদী-ওবামা একটি বহুল প্রচারিত মার্কিন দৈনিকে যৌথ সম্পাদকীয় লিখেছিলেন। দিল্লিতে নতুন সরকার আসার পর বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছিল সেখানে। এ বার আকাশবাণীর মাধ্যমে সেই কাজটাই করতে চাইছে মোদী প্রশাসন।

আগামী ২৫ তারিখ দিল্লি পৌঁছচ্ছেন ওবামা। ফিরে যাচ্ছেন ২৭শে। ২৫ তারিখেই রয়েছে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলি। মোদী-ওবামা বৈঠক, দিল্লির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা। ২৬ তারিখ প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রায় ৮০ মিনিট উপস্থিত থাকবেন ওবামা। এ ছাড়াও রয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর নৈশভোজ, হায়দরাবাদ হাউসে চুক্তি স্বাক্ষর, তাজমহল দর্শন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে কত দ্রুত ওবামাকে তাজমহল দেখিয়ে আনা যায়, তা নিয়েই চলছে নানা কাটাছেঁড়া। এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, পূর্ব-ঘোষণা মতো আগরা থেকে হয়তো আর দিল্লি ফিরবেন না ওবামা। সে ক্ষেত্রে তাজমহলের শহর থেকেই তাঁকে নিয়ে দেশের পথ ধরতে পারে এয়ার ফোর্স ওয়ান।

তার আগে চুক্তি হতে পারে কোন কোন ক্ষেত্রে?

বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়ানো এবং নিরাপত্তাদু’টি বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদী এবং ওবামা। কারণ, ভারত তথা গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সাপেক্ষে নিরাপত্তার বিষয়টি দু’তরফের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমেরিকা ভারতকে ১৭ রকম অস্ত্র সরঞ্জাম দিতে প্রস্তুত বলে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল। তবে এখনই এত অস্ত্র কেনার প্রয়োজন না থাকায় তা থেকে বাছাই করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দু’টি চুক্তি হতে পারে।

পাশাপাশি, ভারত মার্কিন পরমাণু চুক্তির রূপায়ণ, পরিবেশ বিষয়ক চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলবে। প্রতিরক্ষা, খুচরো ব্যবসা, রেল এবং বিমা ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে এই ক্ষেত্রগুলিতে মার্কিন লগ্নির সম্ভাবনা নিয়ে কথা হবে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতিতে এ দেশে কারখানা তৈরির আহ্বান জানানো হবে মার্কিন সংস্থাগুলিকে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রেওয়াজ মাফিক এ বার ভারত সফর শেষ করে পাকিস্তানে যাচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতের উদ্দেশে এটি তাঁর সদর্থক বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। ওবামার ভারত সফরের আগে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নিয়ে পাকিস্তানকে আগেই সতর্ক করেছিল আমেরিকা। যদিও আমেরিকায় পাক রাষ্ট্রদূত জলিল আব্বাস সেই খবরকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকেই দুষেছেন।

ওবামার সঙ্গে এই সফরে আসার কথা স্ত্রী মিশেল এবং দুই কন্যা মালিয়া এবং সাশার। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ শেষ মুহূর্তে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করলে ২৫ তারিখ নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে সপরিবারই দেখা যাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

jayant ghosal narendra modi barack obama visa on arrival republic day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy