Advertisement
E-Paper

ভুল মানতে দ্বিধা কেন, কারাটকে তোপ ভি এসের

দীর্ঘ ৬ বছর ধরে যে কথা মনে মনে রেখেও বলতে পারেননি আলিমুদ্দিনের নেতারা, সরাসরিই এ বার প্রকাশ কারাটকে সেই প্রশ্ন করে বসলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন! পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারই যে বামেদের বিপর্যয় ডেকে এনেছিল, এই সত্য স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়?

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৬

দীর্ঘ ৬ বছর ধরে যে কথা মনে মনে রেখেও বলতে পারেননি আলিমুদ্দিনের নেতারা, সরাসরিই এ বার প্রকাশ কারাটকে সেই প্রশ্ন করে বসলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন! পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারই যে বামেদের বিপর্যয় ডেকে এনেছিল, এই সত্য স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ভাবেই সাধারণ সম্পাদকের দিকে তোপ দাগলেন কেরলের বিরোধী দলনেতা!

শুধু সমর্থন প্রত্যাহারের প্রশ্নই নয়। রীতিমতো ১০ পাতার চার্জশিট দিয়ে কারাটকে কাঠগড়ায় তুলেছেন নবতিপর ভি এস! কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে মঙ্গলবার তাঁর সেই ‘নোট’ বিলিও করা হয়েছে। যে কারাট এখন বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা বলছেন, কয়েক মাস আগে লোকসভা নির্বাচনের সময় তিনি কেন কেরলে বামফ্রন্টের ঘর সামলাতে উদ্যোগী হলেন না, সেই প্রশ্ন তুলতেও ছাড়েননি ভি এস। সিপিএমের নতুন রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন ঠিক করতে গিয়ে কারাটের মতের বিপরীতে ভি এস সমর্থন জানিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরির পাল্টা দলিলকেই। বাংলার তরফেও এ দিন শ্যামল চক্রবর্তী ব্যাট ধরেছেন ইয়েচুরির পক্ষেই।

কেরল সিপিএমের ক্ষমতাসীন শিবির বরাবরই কারাটের অনুগামী। তাদের সঙ্গে আবার বনিবনা নেই ভি এসের। লোকসভা ভোটের সময় কিছু দিনের জন্য অবশ্য শান্তি বজায় ছিল কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন এবং ভি এসের মধ্যে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ বার সুযোগ পেয়েই আবার স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছে কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর! কেরল সিপিএমের ক্ষমতাসীন অংশ দলের লাইনের প্রশ্নেও কারাটকে বিশেষ বিড়ম্বনায় ফেলতে চায়নি। কিন্তু ভি এস সেই কৌশলেও জল ঢেলেছেন। তাঁর এ দিনের বিস্ফোরক মেজাজ দেখে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, “ধর্মযুদ্ধে যেন একাকী সৈন্যের মতোই লড়েছেন ভি এস! ওঁর জনপ্রিয়তা যে হেতু প্রবল, কেরলে দলের মধ্যেও এ বার ভি এসের তোলা প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা!”

অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ থেকে যে ৩২ জন সদস্য ওয়াক আউট করে এসে পৃথক সিপিএম তৈরির ভিত্তি রচনা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র জীবিত সদস্য হিসাবে এখনও কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন ভি এস-ই। সিপিএম তৈরির সময় যিনি ছিলেন যুব নেতা, দলের ৫০ বছর পূর্তির সময়ে তাঁকেই আবার প্রতিবাদীর বড় ভূমিকায় দেখা গেল এ বার। দলের রণকৌশল এবং পরিচালনা পদ্ধতি নিয়েই যিনি গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।

ভি এস প্রশ্ন তুলেছেন, নিজেদের কৌশলের ব্যর্থতা আড়াল করতে ১৯৭৮ সালের ইতিহাস টেনে আনার প্রয়োজন পড়ছে কেন? পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে মনমোহন সিংহ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার জেরে যে সব ঘটনাপ্রবাহ, তাতেই তো সিপিএম সাম্প্রতিক কালে ধীরে ধীরে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব হারিয়েছে! দ্বিতীয়ত, কারাট তথা পলিটব্যুরো এখন বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা বলছেন ঠিকই। কিন্তু ৬ মাস আগেই লোকসভা ভোটের সময় কেরলে সিপিএম নেতৃত্বের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে আরএসপি বাম জোট এলডিএফ ছেড়ে বেরিয়ে আলাদা লড়েছিল। তাতে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবিকে কোল্লম আসনটি শুধু হারতেই হয়নি, দলেরও মান খোয়া গিয়েছিল। বাম ঐক্য গড়তে গেলে আগে তো আরএসপি-কে ডেকে ব্যবধান মিটিয়ে নেওয়া উচিত!

তবে কেরলে আসন নিয়ে ওই সঙ্কটের সময় শুধু কারাটই নন, ইয়েচুরি-সহ অন্য পলিটব্যুরো সদস্যেরাও যে সমাধানের চেষ্টা করেননি এই তথ্য উল্লেখ করেও ভারসাম্য রাখতে চেয়েছেন ভি এস। পাশাপাশিই খুনোখুনির রাজনীতি এড়াতে দলীয় নেতৃত্ব আগে তৎপর হলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকত বলেও মত দিয়েছেন তিনি। এবং তাঁর এই যুক্তির পক্ষে কোঝিকোড়ে সিপিএম থেকে বেরিয়ে আরএমপি-তে যোগ দেওয়া নেতা টি পি চন্দ্রশেখরনের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে ভি এসের কথায়।

প্রবল বিতর্কের এই আবহেই আজ, বুধবার শেষ হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির চার দিনের বৈঠক। পলিটব্যুরো শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালাচ্ছে দলিল-পাল্টা দলিল নিয়ে ভোটাভুটি এড়াতে। সে ক্ষেত্রে সব দলিল থেকে সংশোধনী নিয়ে খসড়া রিপোর্ট পাঠানো হতে পারে দলের নিচু তলায় আলোচনার জন্য। তার পরে চূড়ান্ত ফয়সালা হবে পার্টি কংগ্রেসেই।

sandipan chakrabarty v s achuthanandan prakash karat sitaram yechury cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy