Advertisement
E-Paper

মাওবাদী এলাকার ভোটেই নজর

নতুন অনেক কিছুই। রাজ্যজুড়ে নরেন্দ্র মোদীর হাওয়া, মাওবাদী এলাকায় বুথে বুথে ভোটারের ভিড়, জঙ্গিদের আঁতুড়ঘরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সতর্ক পাহারার মধ্যে কার্যত নির্বিঘ্নে নির্বাচন। যদিও গত ২৪ এপ্রিল ভোট করিয়ে ফেরার পথে মাওবাদীদের মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ভোটকর্মী ও পুলিশ মিলিয়ে ৭ জন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই হামলাও হয়েছিল ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:২০

নতুন অনেক কিছুই।

রাজ্যজুড়ে নরেন্দ্র মোদীর হাওয়া, মাওবাদী এলাকায় বুথে বুথে ভোটারের ভিড়, জঙ্গিদের আঁতুড়ঘরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সতর্ক পাহারার মধ্যে কার্যত নির্বিঘ্নে নির্বাচন। যদিও গত ২৪ এপ্রিল ভোট করিয়ে ফেরার পথে মাওবাদীদের মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ভোটকর্মী ও পুলিশ মিলিয়ে ৭ জন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই হামলাও হয়েছিল ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর। এ রাজ্যের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় গণ-আতঙ্কে খাঁ খাঁ ভোটকেন্দ্রের যে ছবিটা এত দিন পরিচিত ছিল, তার বদল কিছুটা হলেও এ বার ঘটেছে।

এমনটা সত্যিই অনেক দিন দেখেনি ঝাড়খণ্ড। তাই ভোটের আগের অঙ্কের সঙ্গে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতির হিসেব মেলাতে পারছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনই শুধু নয়, ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত শতাংশের হিসেবে এত ভোট এখানে এই প্রথম বার পড়ল।

হিসেবের বাইরের এই বাড়তি ভোট নিয়েই রাজনীতির অঙ্ক কষতে পারছে না কংগ্রেস-বিজেপি। তাদের আগের হিসেব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। কারণ প্রত্যন্ত এলাকার ভোটে রয়েছে বিভিন্ন জটিল সমীকরণ। প্রথম সারির দলগুলির নেতাদের একাংশ বলছেন, রাজ্যের দুর্গম এলাকার ভোট খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করে মাওবাদীরাই। উপরন্তু আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাব থাকে। কিন্তু নেতাদের দাবি, এ বার মোদী-হাওয়া তো বইছেই, ভোটের পালে হাওয়া লেগেছে কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি জোটেও। প্রকাশ্যে দুই শিবিরেরই আশা, ওই বাড়তি ভোট তারাই পাবে।

বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র প্রদীপ সিংহের কথায়, “মাওবাদী এলাকার কিছু ভোট আমাদের বিপক্ষে যাবে ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগই নরেন্দ্র মোদীর দিকে। তা ছাড়া, শহরে আমাদের প্রার্থীরা যথেষ্ট জনসমর্থন পেয়েছেন। ১০-১১টা আসন জিতবই।”

নির্বাচনের আগে মোদী এ রাজ্যে আটটি সভা করে গিয়েছেন। তুলনায় সনিয়া ও রাহুল গাঁধী হাজির ছিলেন একটি করে নির্বাচনী সমাবেশে। বিজেপি নেতারা বলছেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ঝাড়খণ্ডের মতো গরিব রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লাতেহার, মনিকা, চতরা, পাঁকি, লোহারডাগা, গিরিডি, ছত্তরপুর, চাইবাসার সারান্ডার মতো মাওবাদী ‘কেল্লা’ বলে পরিচিত জায়গায় গড়ে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আগের নির্বাচনগুলির তুলনায় তা প্রায় ৯-১০ শতাংশ বেশি। সারান্ডায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। যেখানে আগে বুথে বুথে লোকেরই দেখা মিলত না।

কংগ্রেস এবং জেএমএম নেতাদের দাবি, কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ওই সব জায়গার বাসিন্দাদের বোঝানো গিয়েছে, মাওবাদীদের হাত থেকে তাঁরা সুরক্ষিত। বিশেষত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কার্যত মাওবাদীদের চোখে চোখ রেখে সারান্ডার লোহার খনিকে কেন্দ্র করে শিল্পায়নের কথা জানিয়েছেন। ওই দুই দলের নেতাদের বক্তব্য, এ সবেই কংগ্রেস জোটের দিকে ঝুঁকেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জেএমএম মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথায়, “গ্রামাঞ্চলে কোনও মোদী-হাওয়া ছিল না। বাড়তি ভোট আমাদের দিকেই আসবে।” বিজেপি-র দাবি, ইস্পাতনগরী জামশেদপুরে নির্বাচনের দু’সপ্তাহ আগে পর্যন্ত সমর্থনের হাওয়া ছিল জেভিএম প্রার্থী অজয় কুমারের পালে। সেখানে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সভার পর থেকেই লোকের নজর ঘুরে যায় বিজেপি প্রার্থী বিদ্যুৎবরণ মাহাতোর দিকে।

বিরোধীদের বক্তব্য অন্য রকম। তাঁরা বলছেন, গিরিডির বর্তমান বিজেপি সাংসদ রবীন্দ্র পাণ্ডে মোদী-হাওয়ায় জিতে যাবেন বলেই ধরে নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু নির্বাচনের পর পরিস্থিতিটা অন্য রকম। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, গিরিডিতে এখন সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন জেএমএম প্রার্থী তথা বিধায়ক জগন্নাথ মাহাতো। বর্তমানে বিজেপির দখলে থাকা দেওঘর আসনটিকেও হিসেবের বাইরে রাখা হয়েছে। কোডারমা আসনে সিপিআইএম (এল) বিরোধীদের সব হিসেব গোলমাল করে দিয়েছে। হাজারিবাগ আসনটিতে প্রাক্তন বিজেপি নেতা লোকনাথ মাহাতোকে প্রার্থী করায় তিনি বিজেপির ভাল ভোট কেটেছেন বলে দাবি করছে আজসু।

probal gangopadhyay jharkhand maoist ranchi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy