Advertisement
E-Paper

মুক্তির মন্দির সোপনতলে কত প্রাণ...

মনের ভেতর অনুরণিত হতে থাকে কাজী নজরুল ইসলামের সেই মর্মস্পর্শী কবিতা—‘আমার ভারতবর্ষ’—যা শুনেছি কাজী সব্যসাচীর জলগম্ভীর কণ্ঠে—! বীর সৈনিক, স্বাধীনতা দিবস থেকে স্বাধীনচেতা প্রমোদ চক্রবর্তী—শ্রদ্ধায় স্মরণ করলেন পারমিতা মুখোপাধ্যায়।‘ভারত হামকো জান সে প্যারা হ্যায়/সবসে ন্যারা গুলিস্তাঁ হামারা হ্যায়/উজড়ে নহিঁ আপনা চমন/টুটে নেহিঁ আপনা ওয়াতন/গুমরাহ না কর দে কোই/বরবাদ না কর দে কোই/মন্দির য়ঁহা/মসজিদ য়ঁহা/হিন্দু য়ঁহা/মিলকে রহেঁ হাম প্যার সে/জাগো...’। মনে পড়ছে হরিহরণের উদাত্ত কণ্ঠে মণিরত্নমের ‘রোজা’ সিনেমার সেই বিখ্যাত দেশপ্রেমের গান, যা শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে? কী অসাধারণ গানের কথাগুলো...!

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৮

‘ভারত হামকো জান সে প্যারা হ্যায়/সবসে ন্যারা গুলিস্তাঁ হামারা হ্যায়/উজড়ে নহিঁ আপনা চমন/টুটে নেহিঁ আপনা ওয়াতন/গুমরাহ না কর দে কোই/বরবাদ না কর দে কোই/মন্দির য়ঁহা/মসজিদ য়ঁহা/হিন্দু য়ঁহা/মিলকে রহেঁ হাম প্যার সে/জাগো...’।

মনে পড়ছে হরিহরণের উদাত্ত কণ্ঠে মণিরত্নমের ‘রোজা’ সিনেমার সেই বিখ্যাত দেশপ্রেমের গান, যা শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে?

কী অসাধারণ গানের কথাগুলো...!

‘আসাম সে গুজরাত তক/ বঙ্গাল সে মহারাষ্ট্র তক/জাতি কা হি ধুন এক হ্যায়/ভাষা কা হি সুর এক হ্যায়/কাশ্মীর সে মাদ্রাজ তক/কহে দো সব হি হাম এক হ্যায়/আওয়াজ দো হাম এক হ্যায়/জাগো...’।

শুধু গায়ে কাঁটা নয়, গানটি শুনতে শুনতে চোখে জল চলে আসে। নিজেকে ভারতবাসী বলতে গর্ববোধ হয়। সত্যিই তো গরিমা করার মতো আমাদের দেশে যা আছে, পৃথিবীর কোথাও তা নেই।

স্বামী বিবেকানন্দ এই ভারতের পথে পথে আসমুদ্র হিমাচল পরিব্রাজক রূপে ঘুরে বেড়িয়েছেন। চিনতে চেয়েছেন ভারতের আত্মাকে। ভারতের প্রকৃত স্বরূপ কাজের মধ্যে নিহিত। আমাদের মধ্যে। আমরা যারা ভারতবাসী তাদের মধ্যে। উচ্চারিত হয়েছে স্বামীজির কণ্ঠে‘নতুন ভারত বেরুক। বেরুক লাঙল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে, মালো, মুচি, মেথরের ঝুপড়ির মধ্য হতে। বেরুক মুদির দোকান থেকে ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে। বেরুক কারখানা থেকে, হাট থেকে, বাজার থেকে। বেরুক ঝোপ জঙ্গল, পাহাড় পর্বত থেকে। এরা এক মুঠো ছাতু খেয়ে দুনিয়া উল্টে দিতে পারবে, আধখানা রুটি পেলে ত্রৈলোক্যে এদের তেজ ধরবে না, এরা রক্তবীজের প্রাণসম্পন্ন। এই সামনে তোমার উত্তরাধিকারী ভবিষ্যৎ ভারত’।

স্বামীজি এই ভারতেরই সন্তান। সিংহের বিক্রমে ভারতকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আমরা তাঁরই দেশের মানুষ হয়ে নিজের দেশের জন্য সামান্য ত্যাগস্বীকারও করতে পারব না?

মনে হয় সেনাবাহিনীর সেই সব জওয়ানদের কথা, যাঁরা ভারতের সীমান্তগুলিতে অতন্দ্র প্রহরায় রত। কী দুর্গম সেই সীমানা। অভ্রভেদী পর্বতের তুষারাচ্ছন্ন অঞ্চল, মরুভূমির চরম আবহাওয়াও যাঁদের দেশরক্ষার প্রতিজ্ঞা থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারে না। এর পরেও রয়েছে শত্রুপক্ষের আঘাত কখনও কখনও হাসিমুখে বরণ করে নিতে হয় নির্মম মৃত্যুকে। রক্ত আজও কম ঝরে না এই সৈনিকদের। আমাদের নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবনের জন্য নিজেদের জীবন দিয়েও তাঁরা রক্ষা করেন দেশ মাতাকে। এই ভারতেরই কোনও গ্রামে বা মফফস্বল শহরে এই সৈনিকদের পরিবার পরিজনেরা দিন কাটান উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায় কত দূরে কী ভাবে রয়েছে ছেলেটা।

যুদ্ধ শুধু সেনাবাহিনীর নয়, দেশের জন্য লড়াই করেন তাঁরাও, যাঁরা বিশ্ব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা অন্য কোনও প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে যখন দেখছিলাম খেলা শুরুর আগে নিজের নিজের দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে এগারো জন যোদ্ধা খেলোয়াড়। তাদের চোখে মুখে প্রত্যয়ের ছাপ। তখন মনে মনে ভাবছিলাম কবে আমার ভারতের ছেলেদের দেখব অমন মাথা উঁচু করে বিশ্বকাপ ফুটবলের আঙিনায় দাঁড়িয়ে গাইছে, ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা...’। এত বড় দেশ আমাদের আর এদেশে ফুটবল প্রতিভার অভাব? এই ভারতের কোণে কোণে কত নবীন প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে, যাদের পেটে হয়ত দু’বেলা ভাল ভাবে খাবার জোটে না। মাথার ওপর ছাদ নেই। আমরা পারি না ভারতের সেই সব সন্তানদের মধ্য থেকে প্রতিভা তুলে আনতে? ঘানা, ক্যামেরুন, বসনিয়া, আলজিরিয়া, কোস্টারিকা, ইরান এরা যদি পারে, আমরা পারব না কেন?

মনের ভেতর অনুরণিত হতে থাকে কাজী নজরুল ইসলামের সেই মর্মস্পর্শী কবিতা‘আমার ভারতবর্ষ’যা শুনেছি কাজী সব্যসাচীর জলগম্ভীর কণ্ঠে ‘আমার ভারতবর্ষ পঞ্চাশ কোটি নগ্ন মানুষের/যারা সারাদিন রৌদ্রে খাটে/সারারাত ঘুমোতে পারে না ক্ষুধার জ্বালায় শীতে/কত রাজা আসে যায় ইতিহাসে/ঈর্ষা আর দ্বেষ আকাশ বিষাক্ত করে, জল কালো করে/বাতাস ধোঁয়ায় কুয়াশায় ক্রমে অন্ধকার হয়/চারিদিকে ষড়যন্ত্র, চারিদিকে লোভীর প্রলাপ/যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আসে পরস্পরের মুখে চুমু খেতে খেতে/মাটি কাঁপে সাপের ছোবলে বাঘের থাবায়/আমার ভারতবর্ষ চেনে না তাদের/ মানে না তাদের পরোয়ানা/তার সন্তানেরা ক্ষুধার জ্বালায় শীত, চারিদিকে প্রচণ্ড মারের মধ্যে/আজও ঈশ্বরের শিশু, পরস্পরের সহোদর’।

অমৃতের সন্তান আমরা। প্রাচীনকালে এই ভারতভূমিতেই ধ্বনিত হয়েছে বেদ উপনিষদের পবিত্র স্তোত্র। মানবজীবনের সঙ্গে এখানে মিশে রয়েছে আধ্যাত্মিকতা। ভোগের মধ্যেও ত্যাগ একমাত্র ভারতই শোনাতে পারে এই কথা। ভারতবাসী হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব ভারতের এই ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা নৈরাশ্যবাদী নই। আমরা দুর্বল নই। আমাদের বিশ্বাস একদিন নিশ্চয়ই আমরা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করব।

সেই বিশ্বাস নিয়েই এগোই আরও একটি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে। এ বছর আটষট্টিতম স্বাধীনতা দিবস। ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হল বলিদান/লেখা আছে অশ্রুজলে/কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা বন্দিশালার ওই শিকল ভাঙা/তারা কী ফিরিবে আজ সুপ্রভাতে,/যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে’। আমরা যেন ভুলে না যাই আমাদের পূর্বপুরুষরা কী ভাবে এই স্বাধীনতার মূল্য চুকিয়ে গিয়েছেন। যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি এই বহুমূল্য স্বাধীনতা তাঁদের প্রতিটি রক্তবিন্দু মিশে আছে এই ভারতের ধূলিকণায়। তাঁরা তাঁদের দেহ দিয়ে সেতু প্রস্তুত করে গেছেন আর সেই সেতু দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি নবযুগের সন্ধিক্ষণে।

স্বাধীনতালাভের ইতিহাস আজ এত বছর পরেও এখনও কথা বলে। আজ কোনও নৈরাশ্যবাদ নয়, কোনও নেতিবাচক মনোভাব নয়, আজ শুধু এগিয়ে চলার দিন‘হম ভারত কে বীর সিপাহী/আজাদি কে সচ্চে রাহি,/কভি ন মুড়কর পিছে দেখে/কাম পড়ে তো সব মিলে যায়ে...’। মেরা ভারত মহান।

কলম যখন ধরেছি, তখন একজন কলমচি হিসেবে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, মমত্ববোধ ও ভালবাসা লেখার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য। এর ভিতর দিয়েই জানাই দেশমাতৃকাকে আমার শতকোটি প্রণাম।

এ বার আপনাদের এমন একজন মানুষের কথা শোনাব, যিনি অনেক কষ্ট স্বীকার করে এই মুম্বইয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং বাঙালি হিসেবে আমাদের খুব উজ্জ্বল করে গেছেন। সুধীজন, ১৯৪৭ সালের পনেরোই অগস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল। তারও বেশ কয়েক বছর আগে ১৯২৯ সালে ওই একই দিনে অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা শহরের কাছে একটি ছোট শহরে জন্মেছিল এক শিশু। কে জানত ঈশ্বর তার ভাগ্যলিপিতে লিখে দেবেন একদিন এই মুম্বইয়েই তাকে আসতে হবে ভাগ্য অনুসন্ধানে এবং কালক্রমে এই মুম্বই হয়ে দাঁড়াবে তার কর্মস্থল তথা তাঁর ভাষায় ‘দ্বিতীয় মা’।

নিশ্চই ভাবছেন, কে এই শিশু? আপনারা অনেকেই দেখেছেন ‘লভ ইন টোকিও’, ‘জুগনু’, ‘তুমসে আচ্ছা কৌন হ্যায়,’ ‘নয়া জমানা’ প্রভৃতি ফিল্ম এবং জানেন এই সব ফিল্মের পরিচালকের নাম। হ্যাঁ, পরবর্তী কালে ওই শিশুই হয়ে ওঠে প্রযোজক-পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তী।

চার ভাইয়ের মধ্যে প্রমোদ ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর যখন ছয় বছর বয়স, তখন তাঁর পিতা মারা যান। ছোট দুটি ভাই এবং মাকে নিয়ে সেই সময় থেকেই শুরু হয় প্রমোদের জীবন সংগ্রাম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অল্প বয়স থেকেই সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিতে হয় তাঁকে। ছাত্রজীবনে তিনি মেধাবী ছিলেন এবং খেলাধুলাতেও ছিল তাঁর অফুরন্ত উৎসাহ। তবে সব সময়ই তাঁর মনের মধ্যে বড় কিছু করার তাগিদ অনুভব করতেন। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতায় আসেন। সেখানে চাকরিও নেন, কিন্তু মন বসত না। সর্বদাই মনের ভেতর এক অস্থিরতা কিছু একটা করতে হবে। সিনেমার প্রতি বরাবরই ভাললাগা ছিল, হয়তো সেই ভাললাগাকে সাথী করেই একদিন উঠে বসলেন বম্বেগামী ট্রেনে। পকেটে মাত্র পাঁচ টাকা, ব্যাগে দু’জোড়া জামা প্যান্ট। এই বিরাট বম্বে শহরে নেই কোনও মাথা গোঁজার ঠাঁই, নেই কোনও আত্মীয়পরিজন। একদম একা এই বিরাট অজানা অচেনা শহরে ভাগ্য অনুসন্ধানে মাত্র আঠারো বছর বয়সে। সাল ১৯৪৭।

এর পর জীবন ধারণের জন্য শুরু হল লড়াই। সে লড়াইয়ে বেলুন বিক্রি, ফুটপাথে শয়ন, রেস্তোরাঁয় চাকরি, রাবার ফ্যাক্টারিতে কাজ, টিউশন সবেতেই সামিল হতে হয়েছে। কিন্তু অর্জুনের মতো হয়তো সিনেমার পাখির চোখটার থেকে নজর সরাননি, তাই ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছেন, প্রস্তুত করেছেন পথ। প্রথমে ফিল্মে অনুবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার পর অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর হিসেবে রপ্ত করেন রিল কাটিং বা এডিটিং এর কাজ এবং বলা বাহুল্য এই সময় থেকেই তিনি পরিচালক হওয়ার পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে রাখছিলেন নিজেকে।

কয়েক বছর পর তিনি আরম্ভ করলেন জীবনীমূলক তথ্যচিত্র বানানো। সহকারি পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেন রাজ খোসলা ও গুরু দত্তের সঙ্গে। তাঁর প্রথম একক পরিচালনা জি পি সিপ্পি প্রযোজিত ‘টুয়েলভ ও ক্লক’। এর পর তিনি পরিচালনা করেন গাঙ্গুদাদা, পাসপোর্ট এবং সংযোগ। ১৯৬২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি ‘প্রমোদ ফিল্মস’ নামে।

১৯৬৪ ‘প্রমোদ ফিল্মস’-এর প্রযোজনায় তৈরি হয় ‘জিদ্দি’। জয় মুখোপাধ্যায় এবং আশা পারেখ ছিলেন নায়ক-নায়িকা। ‘জিদ্দি’র সাফল্যের পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পর একে একে তৈরি হয় লভ ইন টোকিও, জুগনু, তুমসে আচ্ছা কৌন হ্যায়, নয়া জমানা, পতিতা, ওয়ারেন্ট, ড্রিমগার্ল, নাস্তিক, জ্যোতি, জাগির প্রভৃতি ফিল্ম। তবে ওয়ারান্ট, নাস্তিক এবং ড্রিমগার্ল-এর পরিচালনা প্রমোদ চক্রবর্তী করলেও এই ফিল্মগুলির প্রযোজনা ‘প্রমোদ ফিল্মস’ থেকে হয়নি। এগুলি অন্য প্রযোজকেরা প্রযোজনা করেছেন।

তাঁর ফিল্মে তিনি সবসময়েই নতুন কিছু করতে চেয়েছেন, যা দর্শককে আকৃষ্ট করেছে বারবার। কারণ, তাঁর দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতাই তাঁকে শিখিয়েছিল যে বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করতে হলে সবসময়েই নতুন ভাবে বা একটু অন্য ভাবে ভাবতে হবে। আসলে এটাই সৃষ্টিশীলতা। সিনেমা যে শিল্প আর সিনেমার কলাকুশলীরা যে শিল্পী। জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী যেমন ধর্মেন্দ্র, হেমামালিনী, শাম্মি কূপর, আশা পারেখ, জীতেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, প্রাণ প্রমুখের সঙ্গে তিনি যেমন কাজ করেছেন, তেমনই নতুন শিল্পীদেরও সুযোগ দিয়েছেন। শুটিং করেছেন ভারতের বাইরেও বিভিন্ন লোকেশনে।

প্রমোদ চক্রবর্তীর শেষ ফিল্ম ১৯৯৮ সালে নির্মিত ‘বারুদ’। অক্ষয় কুমার ও রবিনা ট্যান্ডন হিরো-হিরোইন। ২০০৪ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রমোদ চক্রবর্তীর স্ত্রী লক্ষ্মী চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম দূরভাষে। তাঁরও বয়েস হয়েছে। তাঁর স্মৃতিচারণে ধরা পড়ল কিছু বিরল মুহূর্ত। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রযোজক-পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তীকে মানুষ চেনে তাঁর সিনেমার মধ্যে দিয়ে কিন্তু আপনি তো মানুষটির সহধর্মিণী, সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন। সংসার জীবনে তাঁকে কী ভাবে পেয়েছেন আপনি? তিনি উত্তরে বললেন, স্বামী হিসেবে উনি ছিলেন খুব ভাল। সবসময় সংসারের খেয়াল রাখতেন। কাজের জায়গা আর পরিবার তাঁর কাছে ছিল স্বতন্ত্র। কাজের জন্য কখনওই পরিবারের কর্তব্যে অবহেলা করেননি। মাঝে মাঝে স্ত্রী, সন্তান-সহ বেড়াতে চলে যেতেন। ১৯৫৪ সাল দুজনের চার হাত এক হয়। সেই থেকে পঞ্চাশ বছর দুজনে এক সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। লক্ষ্মী চক্রবর্তীরও জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে হলেও তিনি পরিবারের সঙ্গে ১৯৩৮ সালে বম্বে চলে আসেন। এখানেই ওঁর পড়াশোনা, বড় হওয়া। এর পর প্রমোদ চক্রবর্তীর সঙ্গে বিবাহের পর বম্বের সঙ্গে বন্ধনও অনেক দৃঢ় হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলি, কথা হয়েছিল প্রমোদ চক্রবর্তীর পৌত্র প্রতীক চক্রবর্তীর সঙ্গেও। তিনি প্রমোদ ফিল্মসের ঐতিহ্য মেনে ফিল্ম পরিচালনায় আগ্রহী। ইতিমধ্যে পরিচালনা করে ফেলেছেন ‘ফ্রম সিডনি উইথ লভ’ ফিল্মটি। আশা করি প্রতীক তাঁর ঠাকুর্দার যোগ্য উত্তরসূরী হবেন।

সবশেষে বলি এই সকল তথ্যসংগ্রহ ও যোগাযোগ সহায়তা করেছেন মৃণাল গুহ যিনি বহুদিন ধরে যুক্ত ছিলেন প্রমোদ চক্রবর্তী প্রোডাকশনের সঙ্গে।

প্রমোদ চক্রবর্তীর কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, সততা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। কী ভাবে সামান্য অবস্থা থেকে তিনি ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি তৈরি করেছিলেন তা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। তাঁর জীবনই আমাদের শেখায় সাফল্যের কোনও শর্টকাট রাস্তা নেই। সুধীজন, এ বার শেষ করার পালা। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে হচ্ছে সিনেমা পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তীর জীবনও ‘সিনেমায় যেমন হয়...।’

paramita mukhopadhyay kazi nazrul islam mumbai edition promod chakrabarty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy