অবশেষে মুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল! উদ্বেগ, টানাপোড়েন, আশা-হতাশায় ১১৯ দিন কাটিয়ে শেষ অবধি জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন মিজোরাম থেকে অপহৃত বাঁকুড়ার ইন্দাসের ছেলে দীপ মণ্ডল। পরিবার সূত্রে দাবি, মোটা টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তবেই মিলেছে মুক্তি। তবে মিজো পুলিশ এই ব্যাপারে মন্তব্যে নারাজ।
গত ২৩ নভেম্বর, মামিত জেলার ডাম্পা ব্যাঘ্র প্রকল্পের চিখা বন শিবিরের কাছে দিল্লির একটি টেলিকম সংস্থার হয়ে টাওয়ার বসাবার কাজ তদারক করছিলেন ২৩ বছরের দীপ। সেই দিনই ডাম্পারেংপুই ও রাজীব নগরের মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে ইঞ্জিনিয়র দীপ, তাঁর ভাড়া গাড়ির চালক সাংলিয়ানথাঙ্গা ও অন্য একটি পিক আপ ভ্যানের চালক লাল জামলিয়ানাকে ব্রু তথা রিয়াং জঙ্গিরা অপহরণ করে। পুলিশের দাবি, পরে ওই জঙ্গিরা অপহৃতদের ত্রিপুরার এনএলএফটি জঙ্গিদের হাতে তুলে দেয়। এনএলএফটি ওই তিনজনকে বাংলাদেশের জোংপুই গ্রামে নিয়ে চলে যায়। পরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় থংনাং এলাকায়। জঙ্গিরা দীপবাবুর সংস্থায় ফোন করে ৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ চায়। এর পরেই মিজো পুলিশ, সিআইডির যৌথ বাহিনী বাংলাদেশের জঙ্গলে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকাটি বাংলাদেশে হওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের সাহায্য ছাড়া মিজো পুলিশ ও ত্রিপুরা পুলিশ অভিযান চালাতে পারছিল না। মামিতের পুলিশ সুপার রোডিংলিয়ানা চাওংথু জানান, সেই সময় বাংলাদেশে প্রাক্-নির্বাচনী রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হয়।
দুই চালক ও দীপকে কয়েকবার পরিবারের সঙ্গে কথাও বলায় অপহরণকারীরা। চলে দর কষাকষি। অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে মিজো ছাত্র সংগঠন এমজেডপি ও দু’টি গাড়ি চালক সংগঠনের সদস্যরা প্রতিবাদী পদযাত্রা শুরু করেন। এক দিকে পুলিশ ও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের চাপ, অন্য দিকে মিজো সংগঠনগুলির প্রতিবাদের জেরে এনএলএফটি জঙ্গিরা ২০ জানুয়ারি মিজোরাম ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জঙ্গলে দুই অপহৃত গাড়ি চালককে ছেড়ে দিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে তাঁরা মামিতে পৌঁছন। পুলিশ সুপার জানান, অপহরণকারীরা সংখ্যায় ছিল ১২ জন। এদের মধ্যে ৬ জন ত্রিপুরার এনএলএফটি ও বাকি ছয়জন ব্রু জঙ্গি। তাদের মধ্যে দু’জনকে ত্রিপুরা পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে।
দীপের পরিবার সূত্রে খবর, শেষ পর্যন্ত জঙ্গিরা দীপের মুক্তির বিনিময়ে অন্তত ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করছিল। কিন্তু পরিবারের তরফে সাফ জানানো হয়, তাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। অত টাকা তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন দীপকে দিয়ে পরিবারে সদস্যদের ফের ফোন করায় জঙ্গিরা। দীপ জানান, জমি-বাড়ি বেচে টাকা যোগাড় করার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। চলছে মারধর।
অবশেষে কয়েক দিন আগে জঙ্গিরা দাবির পরিমাণ কমায়। দীপের অফিসের তরফেও টাকা পাঠাবার ব্যবস্থা হয়। এরপরেই বৃহস্পতিবার মিজোরাম পুলিশ দীপের পরিবারের সদস্যদের আইজলে চলে আসতে বলে। শুক্রবার জঙ্গিরা ফের দীপের ভাই অর্ণব মণ্ডলকে ফোন করে জানায়, দীপ ভাল আছেন। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজ আইজলে পৌঁছন দীপের ভাই অর্ণব মণ্ডল। পুলিশ জানায়, মধ্যস্থতাকারীরা জঙ্গলে দীপকে আনতে গিয়েছেন। রাতে পাকা খবর মিলবে। কিন্তু রাতে জানা যায় পুলিশ সীমান্তে অপেক্ষা করছে। আগামী কাল সকালে দীপকে হাতে পাবে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy