তখনও পাশাপাশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন (ডান দিকে)। রয়েছেন বিজেপি নেতা অর্জুন মুন্ডাও। বৃহস্পতিবার রাঁচিতে পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে উঠে পরশু অপদস্থ হয়েছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। আজ পালা ছিল ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের। সোরেন বক্তৃতা শুরু করতেই জনতার একাংশ এমন ‘মোদী! মোদী!’ চিৎকার জুড়ল, থেমে যেতে বাধ্য হলেন তিনি। আর এই দুই ঘটনা দেখার পরে আজ আর নাগপুরের পথই মাড়ালেন না মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। সেখানে এক শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনিও আমন্ত্রিত ছিলেন।
জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রে আজ নিয়ে গত দশ দিনে প্রায় এক ডজন সরকারি প্রকল্পের হয় শিলান্যাস, না হয় উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই সব ক’টি রাজ্যেই সামনে বিধানসভা নির্বাচন। সরকারি অনুষ্ঠানে ভোটের প্রচারটাও তাই সেরে ফেলছেন মোদী। আর তাঁর সভায় অন্য দলের মুখ্যমন্ত্রীরা বক্তৃতা দিতে উঠলেই প্রধানমন্ত্রীর নামে এমন জয়ধ্বনি হচ্ছে যে হুডা-সোরেনরা অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছেন!
প্রশ্ন উঠেছে এটা নিছকই মোদীর জনপ্রিয়তা, না বিজেপির রাজনৈতিক খেলাও রয়েছে নেপথ্যে! জবাবে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী কোনও দলের নন, দেশের নেতা। তিনি জনপ্রিয় হলে এই ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের নেতৃত্বের ব্যর্থতাও প্রকাশ পাচ্ছে। কান্নাকাটি বন্ধ করে কংগ্রেস বরং আত্মসমীক্ষা করুক।
বিজেপি যাই বলুক, বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিকেই আঙুল তুলল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ সারির দুই নেতা আনন্দ শর্মা ও শাকিল অহমেদ আজ বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানে বিজেপির ক্যাডার ঢুকিয়ে এই জঙ্গিপনার নকশা খোদ প্রধানমন্ত্রীরই তৈরি। বেছে বেছে তিনি সেই রাজ্যগুলিতেই যাচ্ছেন, যেখানে ভোট আসন্ন। সেখানে ইউপিএ সরকারের আমলে ঘোষণা করা বা শুরু হওয়া প্রকল্পগুলির ফিতে কেটে হাততালি কুড়োচ্ছেন। আর দলের ক্যাডারদের দিয়ে স্থানীয় মুখ্যমন্ত্রীকে অপদস্থ করিয়ে বিরোধীদের দুর্বল করতে চাইছেন।” কংগ্রেসের এ অভিযোগও করেছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে নষ্ট করছেন মোদী। লোকসভা ভোটের আগে মোদী ‘পিএম-সিএম’ এক সঙ্গে কাজ করার কথা বলতেন। কিন্তু জয়ের পরে সেই ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করতে নেমেছেন। এখানেই না থেমে আনন্দ শর্মা বলেন, “কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যে তাঁরা ওই সভাস্থলেই পাল্টা জবাব দেননি।” কংগ্রেস নেতৃত্বের এই হুমকির পরই আজ নাগপুরে দলের কিছু সমর্থক প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখান।
বিজেপির বিরুদ্ধে আজ একই রকম হুমকি দিয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও। রাঁচি-ধর্মজয়গড়-সিপত বিদ্যুৎ গ্রিডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদীর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। মোদীর নামে স্লোগানের ধাক্কায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী আজ বেজায় বিড়ম্বনায় পড়েন। বক্তৃতা বন্ধ করে তিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। মোদী হাতের ইশারায় জনতাকে থামতে বলেন। পরে পুলিশও কিছুটা সক্রিয় হয়। তবে অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পর সোরেন সাংবাদিকদের বলেন, “এ সব করে একটা সরকারি প্রক্রিয়াকে ধর্ষণ করা হল।” পরে তাঁর দলের মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আজকের ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা না চান, তা হলে ঝাড়খণ্ডে পা দিলে একই রকম হেনস্থার মুখে পড়তে হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের।’’
প্রসঙ্গত, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা পরশুই জানিয়ে দিয়েছিলেন মোদীর সঙ্গে আর কখনও তিনি এক মঞ্চে থাকবেন না। সন্দেহ নেই হেমন্ত সোরেনও এ বার সে পথে হাঁটবেন। অন্য দিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ কোনও ঝুঁকি না নিয়েই আজই প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বয়কট করেন। যদিও নাগপুরে মেট্রো রেল প্রকল্পের যে শিলান্যাস আজ মোদী করেছেন তা কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগেই তৈরির কথা। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা শাকিল অহমেদ আজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকার ব্যাপারে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ওপর দল নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি। তবে আত্মমর্যাদা বোধ রয়েছে এমন কোনও মুখ্যমন্ত্রীই আর সেই ভুল করতে চাইবেন না।
তবে আজই উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। নাগপুরের অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “পৃথ্বীরাজকে মিস করছি। উনি থাকলে ভাল লাগত। কেন্দ্র-রাজ্য এক সঙ্গে কাজ করলে তবেই দেশ এগোবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy