Advertisement
২০ মে ২০২৪

মুম্বইয়ে দুর্গতিনাশিনীর পুজো শুরু

তিনি ভুবনেশ্বরী, তিনি বিশ্বরূপা, তিনি বিশালাক্ষী। তিনি শ্রী। তিনি রুদ্রাণী। তিনি শিবাণী, হরপ্রিয়া, শিবকান্তা, মহেশ্বরী। তিনি সুভদ্রা, বারুনি, দাক্ষায়নী, চন্দ্রিকা, ভগবতী, অম্বিকা, শর্বাণী, বিজয়া, কমলপ্রিয়া, অজা। তিনি স্তুতি, যাদবী, ভার্গবী, দুর্গা, ভদ্রা, ঈশানী, নিরাঞ্জনা, সিংহবাহিনী, কান্তা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, উমা, গৌরী— অনেক নামেই তিনি বন্দিতা ও পুজিতা।

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

নমস্তে শরণ্যে শিবে মানকল্পে।

নমস্তে জগৎব্যাপিকে বিশ্বরূপে।।

নমস্তে জগৎবন্দে পদারভিন্ধে।

নমস্তে জগৎতারিণী ত্রাহি দুর্গে।।

নমস্তে জগৎচিন্তামনা স্বরূপে।

নমস্তে মহাযোগিনী জ্ঞানরূপে।।

নমস্তে সদানন্দা রূপে।

নমস্তে জগৎতারিণী ত্রাহি দুর্গে।।

তিনি ভুবনেশ্বরী, তিনি বিশ্বরূপা, তিনি বিশালাক্ষী। তিনি শ্রী। তিনি রুদ্রাণী। তিনি শিবাণী, হরপ্রিয়া, শিবকান্তা, মহেশ্বরী। তিনি সুভদ্রা, বারুনি, দাক্ষায়নী, চন্দ্রিকা, ভগবতী, অম্বিকা, শর্বাণী, বিজয়া, কমলপ্রিয়া, অজা। তিনি স্তুতি, যাদবী, ভার্গবী, দুর্গা, ভদ্রা, ঈশানী, নিরাঞ্জনা, সিংহবাহিনী, কান্তা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, উমা, গৌরী— অনেক নামেই তিনি বন্দিতা ও পুজিতা।

মর্তলোকে মৃন্ময়ী মাতৃমূর্তি ক্রমশ চিন্ময়ী রূপে আবির্ভূত হবেন। অনাবিল আনন্দধারায় বাঙালির প্রাত্যহিক জীবন ক’টা দিন একটু অন্য রকম সাবেকিয়ানায় ঋদ্ধ হবে। চারপাশটা মুখরিত পুজো পুজো আনন্দঘন গন্ধটাও। যদিও এ বার পুজোর মেয়াদ গোটা একটা দিন কম পঞ্জিকার গেঁরোয়। তো কী! সে তো আমরা বছর পড়তেই নতুন পাওয়া ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে অনেক আগে থাকতেই জেনে রেখেছি। সেই মতো দিনক্ষণের হিসেব মিলিয়েই সাজিয়ে রাখা পুজো-পরিকল্পনা। মুম্বইয়ের লোনা হাওয়ায়ও শরতের হিমেল আমেজ তবু একটু যেন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ষড় ঋতুর আবর্তনের সঙ্গে বিশ্ব প্রকৃতির এই বাহ্যিক পরিবর্তনটা মুম্বইয়ে একটু হলেও টের পাওয়া যায়।

“ও দুর্গে দুর্গে রক্ষাণি স্বাহা”

দুর্গা শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যিনি দুর্গা বা সংকটকালে রক্ষা করেন’। পৌরাণিক মতে দেবী মহামায়া দুর্গম নামে মহাপরাক্রমী এক অসুর বধ করেছিলেন। তাই তিনি জগজ্জননী দুর্গাদুর্গতিনাশিনী। এই অসুর বা রাক্ষসকুল নিয়ে পৌরাণিক আখ্যানে আমরা দেখি একদা ব্রহ্ম নিদ্রামগ্ন। তাঁর নিশ্বাস থেকে জন্ম নিল রাক্ষসকুল। জন্মমাত্রই তারা ভয়ানক হয়ে উঠল এবং ব্রহ্মাকেই ভক্ষণ করতে উদ্যত হল। ভয়ার্ত ব্রহ্মাকে বিষ্ণু এসে রক্ষা করেন এবং এই রাক্ষসকুলকে অনার্য অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন। অসুররা দেবতাদেরই সৃষ্ট অথচ তারাই দেবতাদের স্বর্গরাজ্য দখল করতে তৎপর হয়। যেমন মহিষাসুর। মহিষাসুরের পিতা রম্ভ ছিলেন সমগ্র রাক্ষসদের রাজা। কোনও একসময় রম্ভ এক পরমা সুন্দরী রাজকুমারীর প্রেমে পড়েন। ফলত তার ওপর দেবতাদের অভিশাপ বর্ষিত হল, পরবর্তীতে সে মহিষে রূপান্তরিত হবে। রম্ভ ও রাজকুমারীর ঔরসে জন্ম হয় মহিষাসুুর। কথিত আছে মহিষাসুর যখন ইচ্ছে মহিষের রূপ ধারণ করে দেবতাদেরই বিভ্রান্ত করতেন। দেবকুল তিতিবিরক্ত হয়ে উঠলেন। দেবতাদের সম্মিলিত তেজে আবির্ভুতা হলেন দশভুজা দেবী। দেবতারা তাঁর দশভুজায় সাজিয়ে দিলেন ত্রিশুল, খড়্গ, চক্র, বান, শক্তি, ঢাল, ধনুক, ঘণ্টা, পরশু, নাগপাশ ইত্যাদি অস্ত্র ও উপাচার। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের তেজে সৃষ্ট মহামায়া। যাঁকে হিমালয় দিলেন দণ্ড। সূর্য দিলেন ধনুর্বান। চন্দ্র দিলেন অর্ধচন্দ্র। কুবের দিলেন চন্দ্রহার। বিশ্বকর্মা দিলেন কবচ। দেবী দুর্গা দশভুজা রূপে মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিতে মহিষাসুরকে বধ করেন।

শরৎকালে আশ্বিন মাসে শুক্ল পক্ষে রামচন্দ্রের অকালবোধন ছিল। মর্তে শরৎকালে দুর্গাপূজার প্রচলন যদিও আদপে হিন্দুশাস্ত্র মতে বসন্তকালে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে। মেবসমুনি তাঁর শিষ্যদের কাছে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কর্তৃক দেবী দুর্গার মর্তে পুজো প্রচলনের কথা জানতে পারা যায়। রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য যথাবিহিত পুজো স্তব-স্তুতিতে প্রসন্ন হয়ে দেবী আবির্ভূতা হয়ে বরদান করতে চাইলে রাজা তাঁর হৃত রাজ্য ও বৈভব ফিরে পেতে চাইলেন। সমাধি বৈশ্য দেবীর কাছে বর হিসেবে চাইলেন মুক্তি। প্রথন্না দেবী দুর্গা দু’জনেরই ইচ্ছাপূরণ করলেন।

অয়ি গিরি নন্দিনি নন্দিতা

মেদিনী বিশ্ব বিনোদিনী নন্দিনুতে

গিরিবরা বিন্ধোশিরো

অদিতি নিবাসিনি

বিষ্ণু বিলাসিনী জিষ্ণুমুতে।

দেবী দুর্গা মূলত শক্তির দেবী। এই শক্তির প্রধান তিনটি রূপ হল—শ্রী মহা সরস্বতী, শ্রী মহালক্ষ্মী, শ্রী মহাকালী। আবার এই তিন শক্তি রূপ পেয়েছে শ্রী ব্রহ্মা, শ্রী বিষ্ণু, শ্রী মহেশ্বরের অন্তর্গত রূপে। উক্ত এই তিন দেবতা আবার পৃথক রূপে তিন শক্তির মিলিত রূপ। অর্থাৎ সর্বমোট নয়টি রূপে শক্তি বিদ্যমান। যথা—১) শৈলপুত্রী, ২) ব্রহ্মচারিণী, ৩) চন্দ্রকান্তা, ৪) কুশমাণ্ড, ৫) স্কন্দমাতা, ৬) কাত্যায়নী, ৭) কালরাত্রী, ৮) মহাগৌরী, ৯) সিদ্ধাদাত্রী।

দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবী ভাগবত—এই সকল পুরাণ ও উপ-পুরাণে দেবী মাহাত্ম্য আলোচনা আছে। তিনি পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। হিন্দু বিশ্বাসে দুর্গা হলেন শিবের স্ত্রী পার্বতী। কার্তিক ও গণেশের মাতা। হিন্দুশাস্ত্রে ‘দুগা’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে দুর্গা—‘দ’ অর্থাৎ দৈত্য বিনাশিনী, ‘উ’ অর্থাৎ বিঘ্ননাশিনী। ‘গ’ অর্থাৎ পাপনাশিনী। এবং ‘আ’ অর্থাৎ শত্রুনাশিনী। যিনি দৈত্য-বিঘ্ন-পাপ-শত্রুর হাত থেকে মর্তবাসীকে রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা।

দৈত্যনাশার্থবচনো

দকারঃ পরিকীর্তিতঃ

উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত

রেফো রোগঘ্নবচনো

গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ

ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।

শাক্ত সম্প্রদায় ভগবতী দেবী দুর্গাকে পরাশক্তির আধার রূপে মনে করেন। উপনিষদেও দেবীকে ‘উমা হৈমবতী’ অর্থাৎ হিমালয়ের কন্যা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে “নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমর্তাঃ।” যিনি সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি, তিনিই দুর্গা। তিনি ‘ত্রম্বকে’ অর্থাৎ ত্রিনয়না। দেবীর বাম চক্ষু হল ইচ্ছে এবং চন্দ্র হতে উৎপথ। তাঁর ডান চক্ষুটি কার্য এবং সূর্যের প্রতিভু এবং দেবীর কপালের নয়নটি হল জ্ঞান এবং অগ্নির প্রতিভু। দুর্গার বাহন সিংহ। যেটি প্রতিনিধিত্ব করছে দৃঢ় সংকল্পের। যা কিনা অহংকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

দেবীর ত্রিশূলের তিনটি ফলা সত্ত্ব রজঃ তম-কে সূচিত করছে। তিনি তাঁর ত্রিশূল ভেদ করে জাগতিক সমস্ত রকম শারীরিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক বলয় থেকে ভক্তদের মুক্ত করছেন। তাঁর ‘অভয়মুদ্রা’ ভক্তকে ভয় থেকে রক্ষা করছেন। দেবীর হাতে ‘শঙ্খ’— নাদ ব্রহ্ম বা ‘ওম্’ অর্থাৎ ওঁঙ্কার ধ্বনির প্রতীক। দেবীর আরেক হাতে ধনুর্বান—জগতের সমস্ত শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ ও বশীভূত রাখার প্রতীক স্বরূপ। দেবীর হাতে বজ্র অশুভ শক্তির বিনাশকারী। তাঁর আর এক হাতে সুদর্শন চক্র, যেটি তাঁর তর্জনীতে আটকে থাকে। সেটি জগতে যত দুষ্টশক্তি বা পাপ আছে সেটি খণ্ডিত করার প্রতীক। দুর্গার এক হাতে অর্ধস্ফুটিত পদ্ম। যেটিকে ‘পঙ্কজ’ বলা হয়। পঙ্কজ মানে পঙ্ক বা পাঁক থেকে উৎপন্ন। তেমনই জাগতিক সমস্ত কালিমা থেকে সুন্দরতার দিকে উর্ত্তীণতার প্রতীক স্বরূপ এই পদ্ম। দেবীর হাতে তলোয়ার কিংবা খড়্গ হল জ্ঞানের তীক্ষ্নতা যা কিনা জাগতিক অজ্ঞানতা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়।

হিনাস্তি দৈত্যতেজানসি

সভানেনার্পূয় য় জগৎ।

যা ঘণ্টা পাতু নো দেবী

পাপ্যেভ্যহন সুতানিভ।

দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন থেকেই মূল পুজোর সূচনা। সপ্তমীর সকালে মণ্ডপের দু’ পাশে দুটি কলাগাছ ও গঙ্গাজল ভরা ঘট ও ডাব আম্রপল্লব-সহ রাখার বিধি। এরপর একটি কলাগাছকে বেল অপরাজিতা লতা দ্বারা বেঁধে কলাবৌ নবপত্রিকা রূপে সৃষ্ট করা হয়। সাধারণ অর্থে ‘নবপত্রিকাকে’ ‘কলাবৌ’ বা গণেশের বধূ বলে চিহ্নিত করা হলেও এটি কিন্তু দুর্গারই অপর একটি মূর্তি। যা প্রকৃতি ও শস্যবধূ বা মাতা রূপের প্রতীক। এই নয়টি গাছ হল—কদলী, হরিদ্রা, কষু, জয়ন্তী, বিল্ব, ছাড়িম্ব, অশোক, মান ও ধান। একটি পাতা-সহ কলাগাছের সঙ্গে অন্যান্য গাছগুলিকে বেঁধে এক জোড়া বেল শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে তাকে তালপাতা, সিঁদুর ও শাড়ি পরিয়ে ‘নবপত্রিকা’ গঠন করা হয়। দেবী দুর্গা এখানে শস্য রূপে পূজিতা হন। লক্ষণীয় যে এই নয়টি গাছের প্রত্যেকটি দেবীর এক একটি রূপের প্রতীক। কলাগাছকে ব্রাহ্মণী, কচু গাছকে কালিকা, হরিদ্রা গাছকে দুর্গা, জয়ন্তী গাছকে কার্তিকী, বিল্ব গাছকে শিবা, ছাতিম রাছকে রক্তদন্তিকা, অশোক গাছকে শোকররহিতা, মানকচুকে চামুণ্ডা ও ধান গাছকে লক্ষ্মীরূপে কল্পনা করা হয়।

এখানে মনে করা হয় রামচন্দ্রের ‘অকালবোধন’-এর তাৎপর্যই হল অরণ্য সভ্যতা থেকে জনগণের কৃষি সভ্যতায় উত্তরণ। ভারত কৃষিভিত্তিক দেশ। প্রাচীন যুগে শরৎ ঋতু থেকেই বছরের সূচনা হত। কারণ এই সময় পৃথিবী শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে। কৃষকের ঘর নতুন ধানে পূর্ণ হয়ে ওঠে। পুরাণতত্ত্ববিদরা মনে করেন, শস্যশ্যামলা প্রকৃতিকে দুর্গারূপে বন্দনা করাই ‘অকালবোধন’-এর মহান তাৎপর্য। সাধারণত কালিকা পুরাণ, দেবী পুবাণ ও বৃনন্দীকেশর পুরাণ এই তিনটি পুরাণের কোনও একটি অনুসারে দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। এই তিনটি পুরাণের আচার ও মন্ত্রে কিছু পার্থক্য থাকলেও উদ্দেশ্য হল জনমানসে শস্যশ্যামলা পরমা প্রকৃতিকেই দেবী দুর্গা রূপে পুজো দেওয়া।

ভারতের উত্তর ও উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে এই সময় ‘নবরাত্রি’ পুজো পালন করা হয়। নবরাত্রির প্রথম দিন মঙ্গল কলস স্থাপন ও যথাবিহিত পূজাপাঠ করা হয়। নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনটিকে বলা ‘প্রীতি দ্বিতীয়া’। এই দিন ‘ব্রহ্মচারিণী’ পুজো পালিত হয়। তৃতীয় দিন ‘চন্দ্রঘণ্টা’ বা ‘চন্দ্রকান্তা’ পুজো বিধিও প্রচলিত। চতুর্থীর দিন দেবী ‘কুশমাণ্ড’ পুজোয় পুজিতা হন। নবরাত্রির পঞ্চমীর দিনকে বলা হয় ‘ললিতা পঞ্চমী’। এ দিন দেবী স্কন্দমাতা নামে পূজিতা হন। নবরাত্রির মহাষষ্ঠীর দিন দুর্গাষষ্ঠী ও কাত্যায়নী রূপে দেবী পূজিতা হন। সপ্তমীর দিন মহাসপ্তমী বা দুর্গাসপ্তমী ও কালরাত্রি রূপে দেবী পূজিতা হন। মহাষ্টমীর দিনটিতে মহাগৌরী পূজা পালিত হয়। নবরাত্রির মহাষ্টমীর দিনটিকে বলা হয় ‘বীরাষ্টমী’। পুরাণ মতে, এ দিন দেবী দুর্গা ‘দশপ্রহরণধারিণী’ ‘অমরমর্দিনী’ রূপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। মহানবমীর দিনে ‘সিদ্ধিধাত্রী’ পুজো বিধি পালিত হয়। নবরাত্রির দশম দিনে ‘অপরাজিতা পুজো’ ও ‘শমী’ পুজো করা হয়। তারপরেই ‘দশেরা’ উৎসব। অকালবোধন করেই রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছিলেন রামচন্দ্র। অশুভ শক্তিকে হারিয়ে শুভ চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী রাবণবধ হয়েছিল দশমীতেই। সে জন্যেই বহু রাজ্যেই ঘটা করে ‘রাবণ-দহন’ করা হয়। ‘দশেরা’ এই উৎসবটি প্রভূত তাৎপর্যপূর্ণ। রাবণের দশটি মাথার মধ্যে বাস করা দশটি বদ গুণকে মানবজীবন থেকে নস্যাৎ করে দেওয়ার প্রচেষ্টায় ‘রাবণ-দহন-উৎসব’ বা ‘দশেরা’ পালিত হয়। এই দশটি খারাপ গুণ বল—১) কামনাবাসনা, ২) ক্রোধ, ৩) মোহ, ৪) লোভ, ৫) মদ, ৬) মাৎসর্য, ৭) মন, ৮) বুদ্ধি, ৯) চিত্র, ১০) অহং। মানুষের মন প্রজ্ঞা ভুলে, মানবমনের গতিপ্রকৃতি ও চাঞ্চল্যের বশে এই দশটি খারাপ গুণকেই আপাত সত্য মনে করে। ভারতের অনেক জায়গায় দশ দিনব্যাপী রামায়ণের পালা গান বা ‘রামলীলা’ মঞ্চস্থ হয়। রামের রাবণবধের বিজয় উৎসবের প্রতীক হিসাবে দশমীর দিন সন্ধ্যায় রাবণ-দহন উৎসবটি ভারতীয় সংস্কৃতিতে অনন্য মাত্রা আনে।

ফেসবুকের দৌলতে এবং স্মার্ট ফোনের হাত ধরে এখন ঠাকুর দেখি মুম্বইয়ে ঘরে বসেই। কলকাতার জন্য মন কেমন চিনচিন করে ওঠে। কখনও গাড়ি ভাড়া করে নভি মুম্বইয়ের পুজো মণ্ডপে যাই।

“ও সর্বমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থে সাধিকে

শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী নারায়ণী নমহোস্তুতে”।

মুম্বইয়ের সুধী পাঠকজন। শারদীয়া উৎসবের উৎসবমুখর দিন আপনাদের জীবন প্রোজ্জ্বল তথা পুণ্যে ভরে তুলুক। সকলে ভাল থাকুন। শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhuchhanda mitra ghosh madhuchhanda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE