অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর নয়াদিল্লির অফিসে। ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তি রাজনাথ সিংহ। তাঁর হাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তিনি বসেছিলেন মোদীর ঠিক পাশের চেয়ারটিতে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পৌরহিত্য করবেন রাজনাথই।
আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনাথকে এই মর্যাদা দিলেও বাস্তবে এই মন্ত্রিসভায় মোদীর পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন কিন্তু স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, সংস্কারমুখী এবং শহুরে অভিজাত মুখ অরুণ জেটলি। আর তাই আপাতত অর্থ ও প্রতিরক্ষার মতো বিগ ফোর-এর দু’টি মন্ত্রক তাঁর হাতে। বিজেপির কেউ কেউ বলছেন, এর অর্থ হল, এখন জেটলি নর্থ ও সাউথ ব্লকের মধ্যে শাটল সার্ভিস চালু করবেন! কারণ, অর্থ মন্ত্রক নর্থ ব্লকে। আর প্রতিরক্ষা সাউথে।
এ দিন কার্য ক্ষেত্রে হলও তাই।
অরুণের স্ত্রী ডলির পুজোআর্চায় যে খুব মন রয়েছে, এমন নয়। তবু এ দিন স্বামীর জন্য সকালে বিশেষ পুজো করেন তিনি। তার পরে বেরিয়ে সকাল পৌনে দশটার মধ্যে নর্থ ব্লকে অর্থ মন্ত্রকের পৌঁছে যান অরুণ। এটাই তাঁর মূল অফিস। এর আগে বাজপেয়ীর জমানায় তথ্য সম্প্রচার, আইন, বাণিজ্য, এমনকী কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। তবে যে চারটি মন্ত্রককে একত্রে বিগ ফোর বলা হয়, সেই আঙিনায় প্রথম ঢুকলেন ৬২ বছরের এই রাজনীতিক।
আপাতত কী ভাবে সামলাবেন দুই দায়িত্ব? অরুণ বলেন, “প্রতিদিন সকালে নর্থ ব্লকে এসে অর্থ মন্ত্রকের কাজ করে সাউথ ব্লকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চলে যাব।” সেখানেই মধ্যাহ্নভোজন সারবেন তিনি। সেখানে রোজ চার ঘণ্টা সময় দেবেন। ফের বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নর্থ ব্লকে।
কাজও তো কিছু কম নয় দুই মন্ত্রক মিলিয়ে। অরুণের কথায়, “অর্থ মন্ত্রকে অগ্রাধিকার হল মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং একই সঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানো। যে আর্থিক সঙ্কট চলছে তা থেকে দেশকে মুক্ত করা।”
আবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও সংস্কার প্রয়োজন। এ কে অ্যান্টনি প্রতিরক্ষা সংস্কারে কোনও গুরুত্বই দেননি। ফলে দেশের শিল্পপতি ও বিদেশের রাষ্ট্রগুলিও ক্ষুব্ধ। এ বার অরুণ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থা ভাল করার চেষ্টা করবেন। বিভিন্ন কারণে অনেকগুলি সংস্থারই হাল খারাপ। এক দিকে এই সংস্থাগুলির উৎপাদন বাড়াতে হবে, অন্য দিকে আবার নজর রাখতে হবে যাতে বিদেশি লগ্নিও না কমে যায়। আবার অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিও পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এই ভারসাম্য রাখাটাই হবে নতুন প্রতিরক্ষা নীতির চাবিকাঠি।
তবে অরুণের হাতে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী নয়। মোদী কাউকে এই মন্ত্রকের জন্য খুঁজে পেলেই শুধু অর্থে মন দিতে পারবেন অরুণ।
সব দেখেশুনে অনেকেই বলছেন, অরুণ জেটলির সঙ্গে মিল রয়েছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। বস্তুত, দু’জনের মধ্যে সম্পর্কও ভাল। অরুণ যখন বাণিজ্যমন্ত্রী হয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও-র সঙ্গে চুক্তি করেন, প্রণব তখন বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক। এক সময় নরসিংহ রাওয়ের বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রণব ডাঙ্কেল প্রস্তাব ও গ্যাট চুক্তি রূপায়ণের প্রথম পদক্ষেপটি করেছিলেন। তাই ডব্লিউটিও সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তাঁর। এ কথা মাথায় রেখেই ডব্লিউটিও নিয়ে প্রণববাবুর কাছেই পরামর্শ চান অরুণ।
সেই বলতে গেলে শুরু। তার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে দু’জনেই সংসদীয় রাজনীতি করেছেন। অরুণের মতো প্রণববাবুও বহু বছর রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। এমনকী, ইন্দিরা গাঁধীর সময়ে লোকসভায় হেরেও নিজের আনুগত্য ও যোগ্যতাবলে দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। অরুণের সেই পথেই হাঁটছেন এখন। তিনি পড়াশোনা করেন, আইনের জটিল মারপ্যাঁচ বোঝেন।
আর লোকসভা ভোটে হার? বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, ওটা তো অরুণের কাছে শাপে বর। কারণ, লোকসভায় হারের ফলে এখন আর কোনও ভাবেই মোদীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ক্ষমতা নেই অরুণের। তিনি এখন তাই মোদীর প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রশাসনের কাজে যাঁর মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে প্রথম দিন থেকেই তৈরি প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy