লোকসভা ভোটের সময় কংগ্রেসের শত অনুরোধেও তিনি রাজি হননি। একা লড়াই করার জেদ তাঁর। কিন্তু মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে সেই মায়াবতীকেই বুঝিয়ে সুঝিয়ে জোটে সামিল করতে ফের তৎপর হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে শরিক নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর। তার পর নতুন জোট সমীকরণ গড়ে তোলার দৌত্যে এখন মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন পওয়ার।
রাজনৈতিক সূত্র বলছে, সম্প্রতি দিল্লিতে মায়াবতীর অন্যতম আস্থাভাজন বিএসপি নেতা সতীশ মিশ্রর সঙ্গে বৈঠক করেন মরাঠা স্ট্রংম্যান। জোটের সম্ভাব্য সূত্র নিয়ে উভয়ের দীর্ঘ আলোচনা হয়। যদিও পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের কথা প্রকাশ্যে অস্বীকার করছেন সতীশ মিশ্র। সেই সঙ্গে এ-ও দাবি করছেন, মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে আগের বারের মতোই একা লড়বে বহুজন সমাজ পার্টি। কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে খবর, সতীশের সঙ্গে বৈঠকের পরে সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনায় বসেন পওয়ার। জোটের ব্যাপারে কথাবার্তা ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে। স্থির হয়েছে, মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে জটিলতার অবসান হওয়ার পর নতুন জোট সমীকরণ নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হবে।
প্রশ্ন হল, দলিত নেত্রীকে কাছে টানতে কেন এতটা সক্রিয় কংগ্রেস? মহারাষ্ট্রে মায়ারই বা কী মাহাত্ম্য? সংবিধান প্রণেতা ভীমরাও অম্বেডকরের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের যোগ সুবিদিত। মহারাষ্ট্রের দলিতদের নিয়ে অম্বেডকর একটি আঞ্চলিক দলও গড়েছিলেন। রাজ্যে দলিত ভোটের সংখ্যা এখন প্রায় ১১ শতাংশ। অতীতে এই দলিত ভোটের সিংহ ভাগই পেত কংগ্রেস। কিন্তু গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, তা কংগ্রেসের হাত থেকে বেরিয়ে ক্রমশ আঞ্চলিক দলিত দলগুলির দিকে যাচ্ছে। বড়সড় অংশে ভাগ বসাচ্ছেন মায়াবতী। কিন্তু মায়াকে সঙ্গে নিয়ে সেই দলিত ভোট ফের তাঁদের অনুকূলে আনতে চান সনিয়া ও শরদ পওয়ার। তাঁরা মনে করেন, মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-এন সি পি জোটে মায়া সামিল হলে, ফের মজবুত সমীকরণ তৈরি হবে। বড় কথা হল, লোকসভা ভোটের আগে থেকে কংগ্রেসের যে ধস শুরু হয়েছে, তা এখন থামাতে মরিয়া সনিয়া। মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা ধরে রাখতে তাই সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
বিএসপি সূত্র বলছে, কংগ্রেস-এনসিপি-র এই প্রস্তাবে এখনও চূড়ান্ত সম্মতি দেননি মায়াবতী। কিন্তু আগের থেকে এখন অনেকটাই নরম মায়া। লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিএসপি, কিন্তু একটি আসনও পায়নি। এই অবস্থায় মায়াবতী নিজেই বেশ চাপে আছেন। তা ছাড়া প্রকাশ্যে তাঁর সামনে না বললেও, বিএসপি-র মধ্যে এই আলোচনাও রয়েছে যে কংগ্রেসের প্রস্তাব তখন ফেলা উচিত হয়নি। আবার মহারাষ্ট্রে একা লড়াই করে মায়াবতী যে বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন, সেই আশাও নেই। বরং কংগ্রেস, এন সি পি-র সঙ্গে জোটে থাকলে কয়েকটি আসন জিতলেও জিততে পারেন। সেই বিষয়টিই এখন তাঁকে বোঝাচ্ছেন কংগ্রেস-এন সি পি নেতারা। তবে মায়াবতীর দলের ভিতরে পাল্টা বক্তব্যও রয়েছে। দলের একটি অংশের মতে, উত্তরপ্রদেশের বাইরে ভোটে লড়ার সময়ে গিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলার কথা ভাবা হয়। সে ক্ষেত্রে যত বেশি আসনে লড়া যায়, তত বেশি চাঁদা মেলে। রাজনৈতিক জোটে সামিল হলে সেই সম্ভাবনা কমে যায়। কেননা, লড়ার জন্য আসন সংখ্যা কমে আসে। তাই মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি বিধানসভা আসনের সব কটিতে লড়লেই চাঁদা তোলার সুবিধা হতে পারে দলের, জোটে লড়লে নয়। মহারাষ্ট্রে জোট গড়লেও দলের জয় যখন নিশ্চিত নয়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মায়া এই দিকটি ভেবে দেখবেন বলেই বিএসপি নেতাদের একাংশ মনে করছেন।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, মায়াকে জোটে সামিল করার ব্যাপারে সনিয়াকে মূল বুদ্ধি দিয়েছেন পওয়ারই। শুধু মায়া নয়, মহারাষ্ট্রে ছোটখাটো আঞ্চলিক সব দলের সঙ্গেও পওয়ার কথা বলতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে পওয়ারের ওপর ভরসা করতে বাধ্য হচ্ছে কংগ্রেসও। একটা সময় ছিল, যখন মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে পওয়ারকে চাপে রাখাই ছিল দশ নম্বর জনপথের লক্ষ্য। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস নিজেই এখন দুর্বল। তাই মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়েও পওয়ারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। অন্য দিকে বিকল্পের অভাব হচ্ছে পওয়ারেরও। এনডিএ-র সঙ্গে তলে তলে দীর্ঘদিন ধরেই যোগাযোগ রেখে চলেছেন এই মরাঠা নেতা। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিজেপি-শিবসেনা জুটি সফল হওয়ার পর কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা ছাড়া পওয়ারের কাছে আর কোনও পথ নেই। তাই কংগ্রেস-এনসিপি জোটকে আরও শক্তিশালী করতে নেমেছেন পওয়ার। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন,“লোকসভা ভোটের পর মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এন সি পি উভয়েরই মনোবল ধাক্কা খেয়েছে। মায়া জোটে এলে ফের লড়াইয়ের অক্সিজেন পাবেন কর্মীরা।”
মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে জটিলতা কাটার পর নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ছবিটা খুব তাড়াতাড়িই স্পষ্ট হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy