Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাতের বাসে দুষ্কৃতী হামলা, খুন কন্ডাক্টর

রাতের বাসে হামলা চলছেই। গত জানুয়ারিতেই অসমের কোকরাঝাড় জেলায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে জঙ্গিরা হামলা করেছিল বাসে। এ বার সেই জেলাতেই বুধবার গভীর রাতে ডাকাত দলের হামলার মুখে পড়ল পরপর তিনটি বাস। একটি বাসের কন্ডাক্টর রুখে দাঁড়ানোয় মাথায় ধারাল অস্ত্রের কোপ দিয়ে খুন করে তাঁকে দুষ্কৃতীরা।

খোকন দে।—নিজস্ব চিত্র।

খোকন দে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:৩৪
Share: Save:

রাতের বাসে হামলা চলছেই। গত জানুয়ারিতেই অসমের কোকরাঝাড় জেলায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে জঙ্গিরা হামলা করেছিল বাসে। এ বার সেই জেলাতেই বুধবার গভীর রাতে ডাকাত দলের হামলার মুখে পড়ল পরপর তিনটি বাস। একটি বাসের কন্ডাক্টর রুখে দাঁড়ানোয় মাথায় ধারাল অস্ত্রের কোপ দিয়ে খুন করে তাঁকে দুষ্কৃতীরা। আহত হয়েছেন আরও দুই বাসযাত্রী। নিহতের নাম খোকন দে (৪৪)। তাঁর বাড়ি কোচবিহারের নীলকুঠি এলাকায়। তাঁর মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ছেলে সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়কের উপরে ফেলে রাখা হয়েছিল বড় বড় পাথর, কাঠের গুঁড়ি। তাতেই আটকে যায় বাসগুলি। তিনটি বাসই কোচবিহার যাচ্ছিল। একটি বাস যাচ্ছিল নওগাঁ থেকে। অন্য দু’টি যাচ্ছিল গুয়াহাটি থেকে। প্রতিটি বাসেই কমবেশি ৫০ জন করে যাত্রী ছিলেন। দুষ্কৃতীদের কয়েকজন যাত্রী সেজে উঠেছিলেন। রাত ২টো নাগাদ বাসগুলি পৌঁছয় ওই জাতীয় সড়কের উপর কোকরাঝাড়ের বগরিবাড়ি থানা এলাকার পানবাড়ির কাছে। ওই এলাকায় দু’পাশে জঙ্গল। পাথর ও গাছের গুঁড়িতে রাস্তা বন্ধ থাকায় বাসগুলি থেমে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই মুখ ঢাকা ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাসে উঠে পড়ে। আতঙ্ক ছড়াতে প্রথমেই তারা শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালায়। এলোপাথারি ঢিলও ছোড়া হয়। তার পরে তিনটি দলে ভাগ হয়ে তিনটি বাসে প্রায় ২০ মিনিট ধরে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম বাসটিতেই ছিলেন খোকনবাবুদের বাসটি। তিনি রুখে দাঁড়াতেই তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসের অধিকাংশ যাত্রী। এর মধ্যেই বাসের আর এক যাত্রীর চোখে ধারাল অস্ত্রের আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। আর এক জনকে লাঠি দিয়ে মাথায় মারে তারা। শুরু হয় লুঠপাট। যাত্রীদের থেকে ঘড়ি, টাকা, সোনার গয়না, মোবাইল লুঠ করে রাস্তায় একপাশে থাকা জঙ্গল ধরে দলটি পালিয়ে যায়। তবে ঠিক কত টাকা লুঠ হয়েছে তা পুলিশ হিসাব করে দেখছে। ঘটনার প্রায় আধ ঘন্টা পরে পুলিশের নজরদারি ভ্যান এলাকায় পৌঁছয়। কিছু পরে আসে পুলিশের বড় বাহিনী। পুলিশ চেষ্টা করেও দুষ্কৃতীদের ধরতে পারেনি বলে দাবি। কোকরাঝাড় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুরজিত সিং পানেশ্বর বলেন, “দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।” ঘটনার জেরে আতঙ্কিত বাস মালিকেরা। ১৭ জানুয়ারি কোকরাঝাড়ের রামফালবিলে রাতের বাসে জঙ্গি হামলায় ৭ জন মারা গিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পরে তিন দিন বাস চালানো বন্ধও রেখেছিলেন বাস মালিকেরা। তারপরে ফের এই হামলার পরে ধুবুরি জেলার বাস পরিবহণ সংগঠনের সম্পাদক বিপুল সরকার বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশকে রাতে রাজ্য এবং জাতীয় সড়কে টহলদারি বাড়ানোর জন্য বলেছি। কিছু এলাকায় চিহ্নিতও করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি। এমন হলে তো আমরা রাতে বাস চালাতে পারব না।”

পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি বাসের অধিকাংশ যাত্রীই মেঘালয়ের ইটভাটায় কাজ করেন। বেতন নিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় খোকনবাবু সহ তিন জনকে ধুবুরি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই খোকনবাবুর মৃ্ত্যু হয়। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে কোকরাঝাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আক্রাসুর ৩৬ ঘন্টার বন্ধ শুরু হয়েছে। এতে বাসগুলি রাতেই বাকি যাত্রীদের নিয়ে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়।

দুষ্কৃতীদের হাতে আহত হয়েছেন কোচবিহার রেলগেট এলাকার বাসিন্দা সুবাস বর্মন। তিনি বলেন, “নগাঁও থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। যাত্রীরা সবাই ঘুমিয়েছিল। হঠাৎ বাসটি ব্রেক কষায় ঘুম ভেঙে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন এসে ছুরি দিয়ে চোখে আঘাত করে। তার পরে পকেটে থাকা ৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

attack bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE