Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাহুলকে চুম্বনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই মহিলার আত্মহত্যার, দাবি গগৈয়ের

অনুষ্ঠানের সিডিতে ধরা পড়া সেই বিতর্কিত মুহূর্ত।

অনুষ্ঠানের সিডিতে ধরা পড়া সেই বিতর্কিত মুহূর্ত।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫৮
Share: Save:

যোরহাটের একটি অনুষ্ঠানে রাহুল গাঁধীকে কয়েক জন মহিলার চুম্বন এবং তার পরই সেখানে উপস্থিত এক বিবাহিত মহিলার নিজের বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল দেশ। রাহুলকে চুম্বনের জেরে স্বামীর সঙ্গে অশান্তি হওয়ায় ওই মহিলা আত্মঘাতী হন বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছিল। আজ তার প্রতিবাদ করলেন মৃতার স্বামী, পরিজনরা। এতে ষড়যন্ত্রের ‘গন্ধ’ পাচ্ছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, কংগ্রেস নেতৃত্ব।

ঘটনার সূত্রপাত ২৬ ফেব্রুয়ারি। সে দিন সকালে যোরহাট যান কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। কাছারি ময়দানে মহিলা কংগ্রেসের সদস্য ও অন্য মহিলা সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। আচমকা এক মহিলা সনিয়া-তনয়কে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন। নিমেষে ভেঙে যায় রাহুলের নিরাপত্তা বলয়। চারপাশ থেকে আরও কয়েক জন মহিলা তাঁর উপর কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েন। সকলেই রাহুলকে চুম্বন করতে চান। অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়েন রাহুল। মহিলাদের ঘেরাটোপ থেকে ‘বন্দি’ রাহুলকে টেনে সরিয়ে নেন দুই নিরাপত্তারক্ষী। ঘটনার ধাক্কা সামলে, ফের প্রশ্নোত্তর-পর্ব শুরু করেন রাহুল। সে দিনের অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি ছিল না সংবাদমাধ্যমের। অনুষ্ঠানের যে সিডি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয়, তাতেই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।

যোরহাটের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিতাবরের বেঁকাজান গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য, তিন সন্তানের মা বন্তি চুটীয়া। সভার পর দিন নিজের বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হন বন্তিদেবী। রাতে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাঁর স্বামী হোমেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের ৬০% পুড়ে গিয়েছে। ওই ঘটনার জেরে গুজব ছড়ায়, রাহুলকে প্রথম যে মহিলা চুম্বন করেছিলেন, তিনিই বন্তি। টিভিতে তা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন হোমেশ্বর। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, রাহুলের অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে রাত হওয়ায় তুমুল অশান্তি হয়েছিল দু’জনের। তার পরই বন্তিদেবী আত্মঘাতী হন।

কিন্তু, আজ বন্তিদেবীর পরিবার এর বিরোধিতা করে জানায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কারণে বচসা হয়েছিল। রাহুলকে চুম্বনরত অবস্থায় যে মহিলার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, তিনি বন্তিদেবী নন। রাহুলের অনুষ্ঠান নিয়ে কোনও অশান্তি হয়নি। বন্তিদেবী গায়ে আগুন দিলে স্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন স্বামী।

আজ হাসপাতালে হোমেশ্বরবাবু সাংবাদিকদের বলেন, “ঠেলাগাড়ি মেরামত করতে ওঁর কাছে টাকা চেয়েছিলাম। প্রথমে দিতে চায়নি। পরে দেয়। এর পরই বন্তির চিৎকার শুনি। ঘরে ঢুকে দেখি ও জ্বলছে। বাঁচানোর চেষ্টা করি। আমার গায়েও আগুন লেগে যায়।” তাঁর মন্তব্য, “বন্তি রাহুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল জানি। সে দিন ওর ফিরতে দেরি হওয়ায় আমিই রাতের খাবার তৈরি করি। বৌকেও খেতে দিই।”

পুলিশের বক্তব্য, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে পড়শিদের কাছে বন্তিদেবী এ জন্য অনুতাপ করেন। জবানবন্দি দিতে গিয়ে, গায়ে আগুন লাগানোর কারণ হিসেবে ঝগড়ার কথা জানালেও, রাহুলের অনুষ্ঠানের উল্লেখ করেননি বন্তিদেবী।

এ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র মেহেদি আলম বরা বলেন, “রাহুলের অনুষ্ঠানে তাঁর কাছে ছিলেন বিশেষ ভাবে আমন্ত্রিতরাই। ওই তালিকায় বন্তিদেবীর নাম ছিল না। রাহুলের অনুষ্ঠানের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন একটি পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও এর নিন্দা করে বলেন, “ঘটনাটি পারিবারিক অশান্তির ফল। তার সঙ্গে রাহুলের সফরের সম্পর্ক নেই। ষড়যন্ত্র করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।” চুম্বন-কাণ্ডের সমালোচনায় মুখর স্থানীয় সংগঠন ‘জাতীয় মহিলা পরিষদ’ও। কয়েকজন যুবতী ও বিবাহিতা মহিলা যা করেছেন, তা অসমীয় সংস্কৃতির পক্ষে নিন্দনীয়, মত তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE