আজ যিনি সওয়াল করছেন, কাল তাঁর হাতেই বিচারের ভার। আইনজীবী থেকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। প্রায় ১৫ বছর পর ফের এই ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে দেশের শীর্ষ আদালত।
প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতি হিসেবে চার জনকে মনোনীত করেছে। যার মধ্যে রয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র। তাঁর সঙ্গে ওড়িশা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আদর্শকুমার গয়ালের নামও রয়েছে। কিন্তু চমক বাকি দু’টি নাম নিয়ে। গোপাল সুব্রহ্মণ্যম ও রোহিনতন নরিম্যান। দু’জনেই কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়েন।
গোপাল সুব্রহ্মণ্যম পশ্চিমবঙ্গের সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের মামলাতেও ওড়িশা সরকারের তরফে অংশ নিয়েছিলেন। তার আগে ২৬/১১-র মুম্বই হামলার মামলায় সিবিআইয়ের প্রধান আইনজীবী হিসেবে তিনি কাজ করেছিলেন। দিল্লি গণধর্ষণের পরে গঠিত প্রয়াত বিচারপতি জে এস বর্মা কমিটিরও অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ফালি নরিম্যানের পুত্র রোহিনতন নরিম্যান মাত্র ৩৭ বছরেই সুপ্রিম কোর্টের ‘সিনিয়র অ্যাডভোকেট’ মনোনীত হয়ে রেকর্ড করেছিলেন। তাঁর জন্য নিয়ম সংশোধন করা হয়।
দু’জনের মধ্যে মিল হল, গোপাল সুব্রহ্মণ্যম এবং রোহিনতন নরিম্যান দু’জনেই মনমোহন সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। টু-জি স্পেকট্রাম বন্টন দুর্নীতির মামলায় গোপালের সঙ্গে কেন্দ্রের মতপার্থক্য হয়। টেলিকম মন্ত্রক গোপালের বদলে রোহিনতনকেই আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেছিল। তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন রোহিনতন। কিন্তু পরে তিনিও দায়িত্ব ছেড়ে দেন। প্রাক্তন আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াটাই যার প্রধান কারণ বলে অভিযোগ।
এই দুই আইনজীবীকে এখন সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনীত করেছে প্রধান বিচারপতির কলেজিয়াম। তবে এই নিয়োগ হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সবুজ সঙ্কেতের পরে। মনে করা হচ্ছে, নতুন সরকার গঠনের পরই এ বিষয়ে সিলমোহর বসবে।
মূলত তিনটি ক্ষেত্র থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মনোনীত করার প্রথা রয়েছে। কিন্তু আমেরিকায় আইনজীবীদের মধ্যে থেকে বিচারপতি মনোনীত করার চল থাকলেও এ দেশে তেমন দৃষ্টান্ত বড়ই কম। ১৯৫০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২১০ জনকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র চার জন বাদে সকলেই কোনও না কোনও হাইকোর্ট থেকে উঠে এসেছেন। বাকি ওই চার জনই সরাসরি আইনজীবী থেকে শীর্ষ আদালতের বিচারপতির পদে বসার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন একজন বাঙালি। বিচারপতি সুবিমলচন্দ্র রায় ১৯৭১ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হয়ছিলেন। যদিও চার মাস পরেই মৃত্যু হয় তাঁর। আইনজীবী থেকে দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা শেষ বার এমন ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালে। বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মনোনীত হন। তার আগের বছরই তিনি এনডিএ-সরকারের সলিসিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের বয়স এখন ৫৬ বছর। রোহিনতনের ৫৮ বছর। ফলে দীর্ঘ সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন তাঁরা।