Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সিবিআই প্রশ্নে সংসদে নিঃসঙ্গই তৃণমূল

সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গে জেরবার তৃণমূল নেতৃত্ব দিল্লিতে বিজেপি বিরোধিতার সুর ক্রমশ চড়া করছে। সংস্কার-সহ নানা প্রশ্নে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে গিয়ে তারা অন্য বিরোধী দলগুলিকে পাশে পাচ্ছে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায়, সেই সারদা-কাণ্ডে কিন্তু তৃণমূলের পাশে নেই কোনও বিরোধী দলই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গে জেরবার তৃণমূল নেতৃত্ব দিল্লিতে বিজেপি বিরোধিতার সুর ক্রমশ চড়া করছে। সংস্কার-সহ নানা প্রশ্নে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে গিয়ে তারা অন্য বিরোধী দলগুলিকে পাশে পাচ্ছে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায়, সেই সারদা-কাণ্ডে কিন্তু তৃণমূলের পাশে নেই কোনও বিরোধী দলই।

সিবিআইয়ের ‘অপব্যবহার’ নিয়ে বিক্ষোভে আজ নিঃসঙ্গই ছিল তৃণমূল। বিষয়টি নিয়ে আজ সংসদে বিজেপির সঙ্গে তরজায় জড়িয়ে পড়ে তারা। সিবিআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে জিরো আওয়ারে আলোচনার জন্য নোটিস দেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কিন্তু স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সেই দাবি খারিজ করে দেন।

জিরো আওয়ারেই সৌগতবাবু বলতে শুরু করেন, “সিবিআই দেশের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু বর্তমান শাসক দলই বিরোধী আসনে থাকার সময়ে সিবিআইকে ‘কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ বলেছিল! সুপ্রিম কোর্টও একে খাঁচায় বন্দি তোতা বলেছে।” সৌগতবাবুর এই বক্তব্যের পরেই হইচই শুরু হয়। পরে তিনি বলেন, “সিবিআইয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল পশ্চিমবঙ্গের উপরে হামলা শুরু করেছে। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি এই হামলার পিছনে রয়েছেন।”

সৌগতবাবুর পরে তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ সহারা কর্ণধার সুব্রত রায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একটি ছবি দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে থামিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “স্পিকার নোটিস অগ্রাহ্য করার পরে সৌগতবাবুর বক্তব্য গ্রহণ করা যায় না। আমাদের সভাপতির বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করছি। সংসদে ছবি প্রদর্শন করারও নিয়ম নেই।”

রাজ্যসভাতে বিষয়টি নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। এতে কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা নেই। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে।”

সংসদের মূল ফটকের কাছে আজও কালো শাল গায়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদরা। গলায় ঝোলানো ছিল সিবিআই-বিরোধী নানা স্লোগান। লক্ষ্যণীয় ভাবে সে সময় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ছিলেন একেবারে পিছনের সারিতে। তাঁর স্লোগানেও তেমন জোর ছিল না।

সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে পাশে না থাকলেও সংসদে ধর্মান্তরণ, পেট্রোপণ্যের মূল্য নির্ধারণ-সহ একাধিক বিষয়ে তৃণমূলের প্রতিবাদকে সমর্থন করছে বাম, কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধীরা। এ ব্যাপারে বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতেও অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে তৃণমূল। সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে সমন্বয়েও এখন আপত্তি নেই ডেরেক ও’ব্রায়েনদের। বস্তুত সেই ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শক্তিই আজ দিনভর দফায় দফায় অচল করে দেয় রাজ্যসভা। ধর্মান্তরণ প্রশ্নে এ সপ্তাহের পুরোটাই রাজ্যসভার অধিবেশন পণ্ড করে দেওয়া এখন বিরোধী জোটের লক্ষ্য।

বিরোধী পরিকল্পনা সফল হলে তার ধাক্কা লাগবে সরকারের আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচিতে। বিশেষ করে বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়ানো সংক্রান্ত বিলে। প্রজাতন্ত্র দিবসের সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারত সফরে আসার আগেই ওই বিল পাশ করাতে মরিয়া মোদী সরকার।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, সংসদে এই অচলাবস্থার মাঝেই পরশু দিল্লি আসার কথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল সূত্র বলছে, মমতা সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ধর্নাতেও বসতে পারেন। আবার ২১ তারিখ দিল্লি আসছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। কালো টাকা উদ্ধারে মোদী সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তিনিও যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসতে পারেন। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, মমতা-নীতীশরা হয়তো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মোদী-বিরোধী একটি মঞ্চ গড়তে চাইছেন।

এ দিন বিরোধীরা একজোট হয়ে ধর্মান্তরণের বিরোধিতা করে রাজ্যসভার অধিবেশন সকাল থেকে অচল করে রাখেন। সরকার এ নিয়ে আলোচনার জন্য তৈরি হলেও ডেরেক ও’ব্রায়েন, সীতারাম ইয়েচুরি, আনন্দ শর্মারা সমস্বরে জানিয়ে দেন, আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রীকে সভায় থাকতে হবে। এই অবস্থায় কাল রাজ্যসভায় বিমা বিল পেশ করার সিদ্ধান্ত নিলেও চিন্তিত সরকার। বিরোধী ঐক্য ভাঙতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কটাক্ষ, “বাম ও তৃণমূলের এই সমন্বয়, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকেই ফায়দা দেবে।”

ডেরেকের মন্তব্য, “ওঁরা যা মনে আসে বলুন। কিছু যায় আসে না।” পরে ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, সপা, বিএসপি, কংগ্রেস, ডিএমকে, বাম মিলিয়ে আটটি বিরোধী দল এখন এককাট্টা। যে করেই হোক এ সপ্তাহে বিমা বিল তাঁরা রুখে দেবেন। সিপিএম নেতারা জানাচ্ছেন, রাজ্যসভায় বিমা বিল সরকার পাশ করাতে না পারলে যৌথ অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হবে। কিন্তু তাতে নৈতিক পরাজয় হবে মোদী সরকারের। সেটুকু নিশ্চিত করতে চাইছেন বামেরা।

প্রশ্ন হল কংগ্রেস কী করবে? দলের এক নেতা বলেন, “আমরা কিছুটা ধন্দে। অতীতে কংগ্রেস সরকারই বিমা বিল সংসদে পাশ করাতে সচেষ্ট হয়েছিল। এখন বিরোধিতা করলে দ্বিচারিতা হবে।” কিন্তু মধুসূদন মিস্ত্রির মতো রাজ্যসভার সদস্যদের বক্তব্য, দ্বিচারিতার প্রশ্ন নেই। কংগ্রেস বিমা বিলের বিরোধিতা করবে না। কিন্তু ধর্মান্তরণ-সহ বাকি বিষয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভে সামিল হবে। রাজ্যসভায় সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে বিমা বিল নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam cbi probe tmc agitation parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE