Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সংসদে রাহুলের জন্য ঢাল খুঁজছেন সনিয়া

রাহুল গাঁধীকে লোকসভায় বিরোধী নেতার পদে দেখতে চাইছেন জয়রাম রমেশের মতো নেতারা। কিন্তু ছেলের ‘শুভাকাঙ্ক্ষীদের’ এই দাবি হয়তো না-ও মানতে পারেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ১০ নম্বর জনপথ সূত্রে খবর, দলের কোনও বর্ষীয়ান নেতাকে সেই দায়িত্ব দিতে পারেন সনিয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

রাহুল গাঁধীকে লোকসভায় বিরোধী নেতার পদে দেখতে চাইছেন জয়রাম রমেশের মতো নেতারা। কিন্তু ছেলের ‘শুভাকাঙ্ক্ষীদের’ এই দাবি হয়তো না-ও মানতে পারেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ১০ নম্বর জনপথ সূত্রে খবর, দলের কোনও বর্ষীয়ান নেতাকে সেই দায়িত্ব দিতে পারেন সনিয়া।

কংগ্রেস সূত্র বলছে, লোকসভায় কমলনাথ ও রাজ্যসভায় গুলাম নবি আজাদকে বিরোধী দলনেতা করার সম্ভাবনা বাড়ছে। লোকসভায় বিরোধী নেতা হওয়ার বদলে সংগঠন মজবুত করাকেই বরং অগ্রাধিকার দেবেন রাহুল। প্রশ্ন হল, রাহুলকে বিরোধী দলনেতা করার ব্যাপারে কেন ইতস্তত করছেন সনিয়া? কেনই বা তিনি নিজে সেই দায়িত্ব নিতে চাইছেন না! অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় তিনিই তো ছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী। সনিয়া-ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ ব্যাখ্যা দেন, গরিষ্ঠতা থাকলেও বাজপেয়ী সরকার ছিল শরিক-নির্ভর। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাজপেয়ীর পক্ষেও বিরোধীদের মত অগ্রাহ্য করে এগোনো সম্ভব হয়নি বহু ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন বিজেপি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সনিয়া বুঝতে পারছেন, লোকসভায় এ বার বিরোধী দলনেতার কাজ সহজ নয়। লোকসভা নেতার পদে থাকবেন নরেন্দ্র মোদী। যাঁর বিরুদ্ধে সমানে সমানে সওয়াল চালিয়ে যাওয়া রাহুলের পক্ষে সম্ভব হবে না। উল্টে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে রাহুলকে কোণঠাসা করতে বাড়তি চেষ্টা চালাবে বিজেপি। ছেলেকে সেই বিপদের মুখে কেন ঠেলে দেবেন সনিয়া? তিনি বরং এক জনকে রাহুলের ঢাল হিসেবে চাইছেন লোকসভায়।

সনিয়া নিজে কেন সেই দায়িত্বটা নিচ্ছেন না? কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ সারির নেতা জানাচ্ছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই সনিয়া আগের মতো সক্রিয় নন। লোকসভা ভোটে মোদী এ বার গাঁধী পরিবারকে যে ভাবে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সনিয়ার সম্পর্ক সহজ হওয়াও মুশকিল। একই সমস্যা রাহুলের ক্ষেত্রেও। তা ছাড়া, মোদী কিন্তু বাজপেয়ীর মতো নন। লোকসভার বিরোধী নেতাকে সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে বারবার কথা বলতে হয়। কক্ষ সমন্বয় করতে হয়। সনিয়া বা রাহুলের পক্ষে সেই কাজটা অস্বস্তিকর হতে পারে।

বাজপেয়ী জমানাতেও সনিয়ার তরফে অধিকাংশ সময়ে এই কাজটা করতেন মাধবরাও সিন্ধিয়া ও শিবরাজ পাটিল। পরে করেছেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। কিন্তু এঁরা কেউই এখন লোকসভায় নেই। তাই নাম উঠে আসছে কমলনাথের।

রাহুলের ঢাল হয়ে ওঠার ব্যাপারে কমলনাথ নিজেও বেশ সক্রিয়। লোকসভায় ভরাডুবির পর রাহুলের ওপর যাতে ব্যর্থতার দায় না পড়ে, সে বিষয়ে সব থেকে সক্রিয় লোকসভায় ৯ বারের এই সাংসদ। তা ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি নেতৃত্ব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অধিকাংশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে কমলনাথের। ইউপিএ সরকারের শেষ দিকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। ফলে লোকসভায় তাঁকেই বিরোধী নেতা করার সম্ভাবনা সব চেয়ে। রাজ্যসভায় যেমন বিরোধী দলনেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন গুলাম নবি আজাদ। এ কে অ্যান্টনি ও অম্বিকা সোনির নাম শোনা গেলেও গুলাম ভাল বক্তা ও সংখ্যালঘু নেতা। সে কারণেও হয়তো তাঁকে বেছে নিতে পারেন সনিয়া।

তবে কংগ্রেসকে এটাও ভাবতে হচ্ছে যে, লোকসভায় ১০ শতাংশ আসনও পায়নি তারা। ফলে সরাসরি তারা বিরোধী নেতার পদটি পাবে না। প্রাক-নির্বাচনী জোট ইউপিএ-র তরফে যাতে কংগ্রেস ওই পদ পেতে পারে সেই চেষ্টা করতে হবে কংগ্রেসকে। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

রাহুল তবে কী করবেন? তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, চার দিক থেকে তুমুল সমালোচনার তোড়ে রাহুল কিছুটা ঘেঁটে গিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও শৈলী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যেও আজ সকাল থেকে রাজ্য স্তরের বিভিন্ন নেতাকে ফোন করা শুরু করেছেন রাহুল। তাঁদের জানাচ্ছেন, দলের জন্য আগের চেয়ে আরও বেশি সময় দেবেন তিনি। গোহারা হলেও দল একেবারে ডুবে যায়নি আপাতত এই বার্তাটাই দিতে চাইছেন তিনি। লোকসভার বিষয়টি হয়তো তাঁর মাথাতেই নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul sonia parliament leader of opposition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE