Advertisement
E-Paper

সঙ্কটকালে দুই বাম দলই ‘দক্ষিণপন্থী’

দুর্দিনের বাজারে লোকসভা ভোটে মুখরক্ষা করেছে মূলত দক্ষিণী রাজ্যই। সঙ্কট মোচনের পথ মন্থন করতে তাই এ বার দক্ষিণের রাস্তাতেই পা বাড়াচ্ছে দুই কমিউনিস্ট পার্টি! লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমে। প্রশ্নের মুখে দলের রাজনৈতিক অভিমুখ পর্যালোচনারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৭

দুর্দিনের বাজারে লোকসভা ভোটে মুখরক্ষা করেছে মূলত দক্ষিণী রাজ্যই। সঙ্কট মোচনের পথ মন্থন করতে তাই এ বার দক্ষিণের রাস্তাতেই পা বাড়াচ্ছে দুই কমিউনিস্ট পার্টি!

লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমে। প্রশ্নের মুখে দলের রাজনৈতিক অভিমুখ পর্যালোচনারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রাথমিক আলোচনার পরে এই নিয়ে চূড়ান্ত পথ সন্ধানের চেষ্টা হবে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসেই। এবং এ বারও সম্ভবত সেই আসর বসতে চলেছে দক্ষিণ ভারতেই। গত দু’বারের মতো।

আর এক কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের জেরে জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারিয়েছে। দলের অস্তিত্বই দেশের বেশির ভাগ জায়গায় প্রশ্নের মুখে। এই অবস্থায় তাদের পার্টি কংগ্রেস হতে চলেছে কেরলে। প্রাথমিক ভাবে সিপিআই শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, পার্টি কংগ্রেস হবে আগামী বছর মার্চ-এপ্রিলে। সেই সময়ে কেরলে কিছু স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা। তেমন হলে পার্টি কংগ্রেস পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে মে মাসে। কখন, কোন শহরে কংগ্রেস করা যাবে, তার রূপরেখা ঠিক করার জন্য ইতিমধ্যেই বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কেরল রাজ্য কমিটিকে। লোকসভা ভোটে এ বার সিপিআই একমাত্র সাংসদ পেয়েছে কেরলের ত্রিশূর থেকেই!

সিপিএম অবশ্য এখনও পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজ্য বাছার কাজ চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে সম্ভাবনায় পয়লা নম্বরে এখন তেলঙ্গানা। নতুন তৈরি হওয়া রাজ্যের নতুন কমিটিকেই যে তাঁরা পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের দায়িত্ব দিতে চান, পলিটব্যুরোর ঘরোয়া আলোচনায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। দলের প্রথা মেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। তবে প্রথমে পার্টি কংগ্রেস করার সম্ভাব্য রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের নাম উঠলেও আলিমুদ্দিন প্রাথমিক ভাবে সেই প্রস্তাবে আপত্তির কথাই জানিয়ে দিয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।

নির্বাচনে ধারাবাহিক সাফল্যের নিরিখে দেখলে এ বারের পার্টি কংগ্রেস হওয়ার উপযুক্ত দাবিদার হতে পারত মানিক সরকারের ত্রিপুরা। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবে পার্টি কংগ্রেসের মতো বিপুল আসরের আয়োজন উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে সম্ভব হচ্ছে না। দলের একাংশ চেয়েছিল, এই অবস্থায় আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা দিতে ২১তম পার্টি কংগ্রেস বসুক বাংলায়। কিন্তু বঙ্গ ব্রিগেড মনে করছে, তাতে আরও হিতে বিপরীত হতে পারে! তৃণমূলের হামলায় এমনিতেই বাম নেতা-কর্মীরা জেরবার। পার্টি কংগ্রেসের সময়টাকে বেছে নিয়ে শাসক দলের লোকজন যদি কোথাও হামলা চালায়, তা হলে আবার প্রশ্ন উঠতে পারে: কর্মী-সমর্থকেরা যখন আক্রান্ত, নেতারা তখন পার্টি কংগ্রেসে আলোচনায় মগ্ন! তখন আবার নেতাদের প্রতিনিধিদল নিয়ে ঘটনাস্থলে দৌড়তে হতে পারে। এত ঝুঁকি নিয়ে পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করা সমস্যাবহুল বলেই আলিমুদ্দিনের কর্ণধারেরা মনে করছেন। তা ছাড়া, দলের নেতা-কর্মীদের জন্য অজস্র মামলা লড়ার খরচ দিতে গিয়ে জেরবার পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের পক্ষে পার্টি কংগ্রেসের মতো ব্যয়সাপেক্ষ আয়োজন করা যুক্তিযুক্ত কি না, তা নিয়েও এ রাজ্যের নেতৃত্বেরই প্রশ্ন আছে।

সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও আলোচনা প্রয়োজন। তবে বাংলার সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ।” পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের প্রস্তাব দিতে পারেন নয়া রাজ্য তেলঙ্গানার রাজ্য সম্পাদক তাম্মিনেনি বীরভদ্রম। যে তেলঙ্গানা রাজ্য তৈরিরই এক সময় প্রবল বিরোধী ছিল সিপিএম! তেলঙ্গানা ছাড়াও বিবেচনায় আছে সাবেক অন্ধ্র এবং কর্নাটক।

শেষ পর্যন্ত তেলঙ্গানার নামই চূড়ান্ত হলে দক্ষিণের মাটিতে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের হ্যাটট্রিক হবে! আগের দু’বার কংগ্রেস বসেছিল তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূর ও কেরলের কোঝিকোড়ে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের রসিকতা, “লোকসভায় এ বার ১১ সাংসদের ৭ জনই দক্ষিণ থেকে। এখন দক্ষিণপন্থী হওয়ার চাপ তো থাকবেই!”

sandipan chakrabarty rsp cpm left front disaster in loksabha poll
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy