Advertisement
E-Paper

সব পথই খোলা রেখে দিল কংগ্রেস

ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা আগে মনের কথা আজ মুখে এনে ফেলল কংগ্রেস। কাল পর্যন্ত যে বিষয়টি একান্তই ঘরোয়া আলোচনা স্তরে ছিল, আজ তা প্রকাশ্যে এনে কংগ্রেস নেতা রশিদ অলভি বলেন, “স্বীকার করছি, কংগ্রেসের পক্ষে সরকার গড়া কঠিন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে রুখতে কেন সব ধর্মনিরপেক্ষ দল এক হবে না?”

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৪৯

ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা আগে মনের কথা আজ মুখে এনে ফেলল কংগ্রেস।

কাল পর্যন্ত যে বিষয়টি একান্তই ঘরোয়া আলোচনা স্তরে ছিল, আজ তা প্রকাশ্যে এনে কংগ্রেস নেতা রশিদ অলভি বলেন, “স্বীকার করছি, কংগ্রেসের পক্ষে সরকার গড়া কঠিন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে রুখতে কেন সব ধর্মনিরপেক্ষ দল এক হবে না?”

এ কথা বলেই তিনি থেমে থাকেননি। রশিদ আলভি বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেত্রী বাছতে পারেন। কারণ তাঁর যোগ্যতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংশয়ের ঊর্ধ্বে।” রশিদ এ কথা বলে ফেলার পরে অবশ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এটা উত্তরপ্রদেশের এই সংখ্যালঘু নেতার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে, দলের অবস্থান নয়। ইউপিএ-ই ফের সরকার গড়বে বলে তাঁরা নিশ্চিত। তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনও বলেছেন, কাল ফলের দিকেই নজর থাকবে তাঁদের। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত।

কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠেছে রশিদ কি স্রেফ জল্পনায় হাওয়া দিলেন। নাকি এই আলটপকা মন্তব্যের মধ্যে কোনও অঙ্কও রয়েছে? কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, আলভির মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শুনে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতারা হয়তো খুশি হবেন না। কিন্তু এটাই বাস্তব। তবে ওই নামটি মমতার পরিবর্তে নবীন পট্টনায়ক, শরদ পওয়ার কিংবা মায়াবতীও হতে পারে।

বস্তুত গণনা শুরুর আগে বিজেপি শিবিরের আত্মবিশ্বাস দেখে কংগ্রেস নেতারা আজ কিছুটা ভীত। সম্ভাব্য জয় ধরে নিয়ে বিজেপি যখন মাঠে নেমে পড়েছে, তখন মাঠের পাশে ওত পেতে রয়েছেন কিছু আঞ্চলিক দলের নেতাও। তার মধ্যে জয়ললিতা, মমতা, মায়াবতী, মুলায়ম সিংহ, শরদ পওয়ার, নবীন পট্টনায়ক অন্যতম। তাঁদের আশা, ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি হলে তাঁদের ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়তে পারে।

মজার বিষয় হল, বিজেপির ভোট সম্ভাবনা আঁচ করে গত কালই এডিএমকে নেতা মালাইস্বামী বলেছিলেন, “রাজনৈতিক মতাদর্শে ফারাক থাকলেও জয়ললিতা নরেন্দ্র মোদীর ভাল বন্ধু। মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে জয়ললিতা তাঁর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন।” কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি, আজ দলের ওই নেতাকেই বহিষ্কার করে দিয়েছেন জয়ললিতা। সেই সঙ্গে হুইপ জারি করেছেন ফল প্রকাশের পর সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হবে। তার পরেই অবস্থান জানাবে এডিএমকে। তার আগে বেঁফাস মন্তব্য নয়।

এমন নয় যে এর পরেও সরকার গড়তে মোদীকে সমর্থন জানাবেন না জয়ললিতা। কিন্তু বর্তমান এনডিএ নিজেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় কিনা, সেটা দেখতে চাইছেন জয়ললিতা। সে ক্ষেত্রে নিজের প্রয়োজনটা যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। আবার যদি ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি হয়, তা হলে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণের সম্ভাবনা আদৌ রয়েছে কি না, সেটাও মেপে নিতে চান আম্মা। সে সব হিসেব কষেই এই ধুরন্ধর নেত্রী অবস্থান স্থির করবেন।

তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছেন, জয়ললিতার ওপর ভরসা করা যায় না। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে জয়ললিতার সম্পর্কে কিছু টানাপড়েনও রয়েছে। তুলনায় মমতা বা মায়াবতীর সঙ্গে সনিয়া অনেক স্বচ্ছন্দ। তা ছাড়া শরদ পওয়ারকেও এই দৌড় থেকে পিছিয়ে রাখা যায় না। কারণ, পোড় খাওয়া এই মরাঠা নেতার সঙ্গে অন্য রাজ্যের নেতা-নেত্রীদের বোঝাপড়া খুব ভালো। মুলায়ম, মমতা, নবীন-সহ সবার সঙ্গে পওয়ার সদ্ভাব রেখে চলেন।

এই রকম এক পরিস্থিতিতে আজ রাহুল গাঁধীর নির্দেশে কংগ্রেস ওয়ার রুমে দলের মুখপাত্রদের নিয়ে বৈঠক করেন অজয় মাকেন। দলীয় মুখপাত্রদের তিনি বলেন, কাল গণনা শুরু হওয়ার পর যত ক্ষণ না চিত্র পরিষ্কার হচ্ছে, তত ক্ষণ কেউ যেন বেফাঁস কথা না বলেন। কোনও সংবাদ চ্যানেলে গিয়ে বিতর্কে অংশ না নেন। পরিবর্তে কংগ্রেস সদর দফতরে বসে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। কংগ্রেস চাইছে, ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে তাদের সমর্থনে কোনও সরকার গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে কালই যেন সওয়াল জবাব শুরু না হয়। বরং সেই প্রস্তাব আঞ্চলিক দলগুলির কাছ থেকেই আসুক। নেতাদের বলা হয়েছে, ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবি হলে শুধু মাত্র রাহুল গাঁধী ও মনমোহন সিংহকে যেন দায়ী করা না হয়। বলা হোক, ইউপিএ ভাল কাজ করলেও সেই প্রচার মানুষের কাছে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে দল। তাই ব্যর্থতা গোটা দলের।

সব মিলিয়ে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়েই আপাতত অপেক্ষায় রইল কংগ্রেস। মাঝে শুধু উৎকণ্ঠায় ভরা আজকের রাতটা।

vote result shankhadwip das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy