Advertisement
E-Paper

সমন্বয়হীন তিন দেশ, তাই হামলা

সবটা না হলেও জানা ছিল অনেকটাই। স্রেফ সমন্বয়ের অভাবে রোখা যায়নি মুম্বইয়ে ২৬/১১-র হামলা। অন্তত তেমনই দাবি এক মার্কিন দৈনিকের। তারা জানিয়েছে, ওই হামলার অন্যতম চক্রী তথা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ জারার শাহের গতিবিধি কিছু দিন ধরেই নজরে রাখছিল ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থা। অন্য দিকে, ভারতের মাটিতে যে লস্কর-ই-তইবা হামলা চালাতে পারে, সে নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে। সূত্রের খবর, ভারতও টুকরো টুকরো তথ্য পেয়েছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০১

সবটা না হলেও জানা ছিল অনেকটাই। স্রেফ সমন্বয়ের অভাবে রোখা যায়নি মুম্বইয়ে ২৬/১১-র হামলা। অন্তত তেমনই দাবি এক মার্কিন দৈনিকের। তারা জানিয়েছে, ওই হামলার অন্যতম চক্রী তথা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ জারার শাহের গতিবিধি কিছু দিন ধরেই নজরে রাখছিল ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থা। অন্য দিকে, ভারতের মাটিতে যে লস্কর-ই-তইবা হামলা চালাতে পারে, সে নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে। সূত্রের খবর, ভারতও টুকরো টুকরো তথ্য পেয়েছিল। অন্তর্তদন্তে নেমে ক’জন প্রাক্তন মার্কিন ও ভারতীয় আমলার মন্তব্য এবং এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা কিছু তথ্যের ভিত্তিতে এমনটাই দাবি করেছে ওই দৈনিক। কিন্তু সময় থাকতে তিন দেশ সেই সব তথ্য ও সূত্র নিয়ে আলোচনা-টেবিলে না বসায় রোখা যায়নি ২৬/১১-র তাণ্ডব।

হিসেব বলছে, তিন দিনব্যাপী ওই হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ১৬৬ জনের। তার পর ছ’বছর কেটে গিয়েছে। মামলা শেষ হয়নি। সাজা পায়নি পাকিস্তানের জেলে বন্দি হামলার অন্যতম চক্রী জাকিউর রহমান লকভি। উল্টে সম্প্রতি তার জামিন মঞ্জুর হওয়ায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা বিশ্ব। সমালোচনার ভয়ে পাকিস্তান কোনও মতে এখনও তাকে জেলে আটকে রেখেছে। কিন্তু তার বিচার কবে শেষ হবে জানা নেই।

এ সমস্ত জটিলতাই এড়ানো যেত যদি সময় থাকতে টুকরো টুকরো সূত্রগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করত তিন দেশ। ওই দৈনিক জানাচ্ছে, ২৬ নভেম্বরের হামলার জন্য ২০০৮-এর অগস্ট থেকে তোড়জোড় শুরু করেছিল জারার শাহ। কখনও গুগল আর্থ-এর মাধ্যমে সম্ভাব্য হামলাস্থলগুলির নাড়িনক্ষত্র বুঝে নেওয়া, কখনও আবার গোটা শহরের মানচিত্র হাতের তালুর মতো চিনে ফেলা সবই ছিল তার কর্মসূচির মধ্যে। ওই দৈনিকের দাবি, ২৬/১১ হামলার একমাত্র জীবিত জঙ্গি আজমল কসাবও জানিয়েছিল, গুগল আর্থের মাধ্যমে জারার তাকে ও তার ন’জন সঙ্গীকে মুম্বই চেনায়। এর পাশাপাশিই চলত দুনিয়ার কোন প্রান্তে ঠিক কী হচ্ছে, তা নিয়ে খবর সংগ্রহ করা, জেহাদি ভাবধারা নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কাজ।

জারারের খবর সংগ্রহের কৌশলও ছিল বিস্ময়কর। বছর তিরিশের ওই তরুণ জানত, ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর নজরদারি চালায় পশ্চিমের দেশগুলি। সে জন্য মাঝে মধ্যেই বিশেষ ধরনের ‘ইন্টারনেট ব্রাউসার’-এর খোঁজ করত সে। এমন ব্রাউসার যেখানে কি না তার গতিবিধির ‘রেকর্ড’ থাকবে না। তবে সাফল্য মেলেনি। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকেই তার ইন্টারনেট গতিবিধি নজরে রাখতে শুরু করেছিল ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থা গর্ভনমেন্ট কমিউনিকেশনস হেডকোয়াটার্স বা জিসিএইচকিউ। সে সময় নজরে এসেছিল, ‘ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল’ (ভিওআইপি) পরিষেবা ব্যবহার করছে জারার। তখন অবশ্য উদ্দেশ্যটা বোঝা যায়নি। পরে স্পষ্ট হয় ছবিটা। আসলে হামলা চলাকালীন পাকিস্তানের কন্ট্রোল রুম থেকে ফোনে জঙ্গিদের লাগাতার নির্দেশ দিচ্ছিল জারার ও লকভি।

জারারের গতিবিধি নজরে রাখছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাও। আসলে লস্কর-ই-তইবা যে ভারতের মাটিতে বড়সড় হামলার ছক কষছে সে কথা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছিল পুলিশের একাংশ। অর্থাৎ আলাদা আলাদা ভাবে ব্রিটেন ও ভারত জারারের গতিবিধি নজরে রাখছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেনি।

তবে মার্কিন প্রশাসন জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে একাধিক বার ভারতকে সতর্ক করেছিল। এমনকী শেষ বারের সতর্কতায় সম্ভাব্য হামলাস্থল হিসেবে তাজ হোটেল-সহ এক ডজন জায়গার নামও জানিয়েছিল আমেরিকা। সে জন্য ১৮ নভেম্বর ওই হোটেলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। কিন্তু তার পরেও এড়ানো গেল না তাণ্ডব। এবং এ জন্য তিন দেশের সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করছে মার্কিন দৈনিক।

হামলার পরেও কিছু দিন অন্যতম চক্রী ডেভিড হেডলিকে সন্দেহ করেনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। অথচ দেখা যাচ্ছে, হামলা নিয়ে চক্রীদের একাধিক ই-মেল পাঠিয়েছিল হেডলি। শুধু তা-ই নয়। হামলার আগেও তার এক স্ত্রী একাধিক বার মার্কিন প্রশাসনকে জানিয়েছিল, হেডলি আদতে পাক জঙ্গি। মুম্বইয়ে কোনও হামলার ছক কষ কষছে সে। কিন্তু সেই সব তথ্য যে গোয়েন্দা দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি, তা স্পষ্ট। ২৬/১১ হামলার সময় ভারতের বিদেশসচিব ছিলেন শিবশঙ্কর মেনন। মার্কিন দৈনিককে তিনি বলেন, “কেউ পুরোটা বুঝতে পারেনি।...আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারত কেউ নয়।” অথচ হামলা শুরু হওয়ার পরই আলোচনার টেবিলে বসে যায় তিন দেশ। শুরু হয় ধাঁধার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশগুলো মেলানোর কাজ। তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এ জন্য অবশ্য নজরদারি প্রক্রিয়ায় গাফিলতিকেই দায়ী করছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র এক প্রাক্তন কর্তা চার্লস ফ্যাডিস। তাঁর কথায়, “নজরদারি থেকে অজস্র তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু তার বেশির ভাগই বিশ্লেষণ করা হয় না।” তবে অন্য এক প্রাক্তন মার্কিন কর্তার দাবি, সে সময় তারা আল কায়দা, তালিবান, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র এ সব নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তার ফাঁকে ওই হামলা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ হয়নি। ব্রিটিশ-প্রশাসনের আবার দাবি, এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আগে থেকে জানা থাকলে নিশ্চয়ই ভারত সরকারকে দিত তারা। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ভাবে তথ্য সংগ্রহের কথা স্বীকার করছে না ব্রিটেন।

কিন্তু তার পরেও কিছু প্রশ্ন থাকছে। ওই দৈনিকের দাবি, হামলার পর থেকে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলছে ভারত। ঠিক কীসের ভিত্তিতে এই অভিযোগ? ওই মার্কিন দৈনিকের দাবি, হামলা শুরু হওয়ার পর ভারতকে বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেন ও আমেরিকা যে তথ্য দিয়েছিল, তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় পাকিস্তানের কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা অভিযানটি চালানো হয়েছে। সুতরাং ব্রিটেন কিছু জানত না এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সব দেখে আল পাচিনো অভিনীত ‘দ্য রিক্রুট’ ছবিটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে অনেকের। আল পাচিনো সেখানে এক বার শিক্ষানবিশ গুপ্তচরদের বলেছিলেন, “আমাদের সাফল্য কেউ জানতে পারেন না। ব্যর্থতাটা সকলে জানেন।” এমনটাই কি হয়েছিল ২৬/১১-র ক্ষেত্রেও!

ভাঁড়ারে ২৬/১১ তথ্য

• গুগল আর্থ দিয়ে হামলাস্থল চেনা

• গুগল ম্যাপ থেকে মুম্বই মানচিত্র বোঝা

• নেট থেকে তাজ হোটেলের ছবি বার করা

• জেহাদি দর্শন-সংক্রান্ত বিষয় খোঁজা

• ভিওআইপি পরিষেবা ব্যবহার করা

• অতীত হামলার তথ্য বার করা

• গুপ্ত যোগাযোগের কৌশল খোঁজা

mumbai terror attack 26 11 hotel taj hafeez sayeed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy