জোট নিয়ে কংগ্রেসকে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেন। আগে থেকেই ডাকা দলের আজকের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক সেই কারণেই তিনি একদিন পিছিয়ে দিয়েছেন। আরজেডি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেসকে ১১টি এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি-কে একটি আসন আরজেডি দিতে রাজি। তার বেশি নয়।
তবে লালু ও কংগ্রেসের এই পারস্পরিক দড়ি টানাটানিকে অন্য রকম ভাবে এখনই দেখতে রাজি নন দুই দলের কোনও নেতাই। দু’পক্ষেরই বক্তব্য, পারস্পরিক স্বার্থেই এই জোট দরকার। সে ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা একটা কমল কিংবা দুটো বাড়ল কিনা সেটা খুব বড় কথা নয়। আজ দিল্লিতে রটে যায়, কংগ্রেস তলে তলে নীতীশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বিষয়টি যে ঠিক নয়, তা প্রমাণ করতেই আজ সন্ধে থেকে সনিয়ার নির্দেশেই লালুর সঙ্গে ‘ট্র্যাক-২’ স্তরে আলোচনা শুরু করেছেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল। দিল্লিতে কংগ্রেস হাইকমান্ড সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, জটিলতা খুব দ্রুত কেটে যাবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা জটিল নয়। তবে জটিলতা বেড়েছে আসনগুলির গুণগত মান অর্থাৎ সেখানে জেতার সম্ভাবনার প্রশ্নেই। মধুবনি আসনটি নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। দলের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের জন্য মধুবনি আসনটি চায় কংগ্রেস। অন্য দিকে, এই আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আরজেডি নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকিকে ওই আসনেই দাঁড় করাতে চান লালুপ্রসাদ। গত ভোটে সিদ্দিকি বিজেপি-র হুকুমদেব নারায়ণ যাদবের কাছে মাত্র ৯ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি আসন সম্পর্কে কংগ্রেস আগ্রহী।
লালু গত কালই দিল্লি থেকে পটনা ফিরেছেন। আজ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশকে এক রাখতেই এই জোট চেয়েছি। এ বার কংগ্রেস ঠিক করুক তারা কী করবে।” তিনি জানিয়েছেন, “গত কালই আমি বিহারের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশিকে চিঠি দিয়ে যা বলার বলে দিয়েছি।” তবে কোন কোন আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হয়েছে তা নিয়ে লালু কিছু না বললেও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ১১টি আসন হল: সাসারাম, ঔরঙ্গাবাদ, জামুই, মুঙ্গের, পূর্ণিয়া, কাটিহার, সুপোল, পটনাসাহিব, নালন্দা, হাজিপুর এবং মুজফ্ফরপুর। এনসিপিকে কিষাণগঞ্জ ছাড়তে রাজি লালু। তবে কংগ্রেস হাইকমান্ড বিহার নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও জানেন না বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “আলোচনা চলছে। আমাদের নেতারা কথা বলছেন। আমি সেই আলোচনায় নেই।”
আরজেডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার কয়েক দফায় আলোচনার পরেও লালুপ্রসাদ গত কাল দিল্লি থেকে প্রায় খালি হাতেই ফিরেছেন। লালুপ্রসাদ বলেছেন, “নির্বাচনের মুখে দাড়িয়ে আছি। ময়দানে নামতে হবে। নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই।” ঘনিষ্ঠ মহলে লালুর বক্তব্য, কয়েকটি আসন নিয়ে মতভেদ হচ্ছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেস ১৫টি আসন দাবি করছে। যা দেওয়া সম্ভব নয় বলে লালু কংগ্রেসকে জানিয়ে দিয়েছে। এলজেপি বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে কংগ্রেস ছ’টি এমন আসন চেয়েছে যেখানে আরজেডি প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে আগে থেকেই মনস্থির করেছে। মধুবনি, জেহানাবাদ এবং নওয়াদা নিয়ে মূলত মতভেদ। এ ছাড়াও আছে পাটলিপুত্র, ভাগলপুর এবং পূর্ব চম্পারণের মতো আসনও। লালু দলের মধ্যে জানিয়েছেন, ‘‘এখনও কংগ্রেস আমাকে কিছু বলেনি। তবে আলোচনার রাস্তা খোলাই আছে।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে আমার দূরত্ব নেই। কংগ্রেসকে ১১টি আসন দিতে চেয়েছি। দু’বারই আমি ইউপিএ-কে সমর্থন করেছি। এ বার কী হয় তা দেখার!”