Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

অক্সফোর্ডের প্রতিষেধক ১০ হাজার জনের উপরে

তৃতীয় পর্যায়ে হবে ১৮-ঊর্ধ্বদের উপরে পরীক্ষা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০২:৫১
Share: Save:

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক তৈরির লক্ষ্যে এগোচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট। তাদের তৈরি সম্ভাব্য প্রতিষেধকটি পরীক্ষার প্রথম ধাপ পেরিয়েছে। প্রাণীদের পরে মানুষের দেহে এটির পরীক্ষা শুরু হয়েছে এপ্রিলে। এখনও পর্যন্ত ১০০০ জনের উপরে প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণ চলছে। এ বার এই পরীক্ষাটিই প্রচুর সংখ্যক মানুষ ও বয়স্কদের উপরে চালাতে চায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। জোর কদমে তার প্রস্তুতিও চালাচ্ছে সমান্তরাল ভাবে। প্রতিষেধক পরীক্ষার জন্য তারা ব্রিটেনের বিভিন্ন অংশ থেকে ১০,২৬০ জনকে বেছে নিচ্ছে সহযোগী সংস্থাগুলির মাধ্যমে। তাঁদের মধ্যে ৫৬ থেকে ৬৯ বছর বয়সিরাই বেশি। অল্প সংখ্যকের বয়স ৭০-এর বেশি এবং ৫ থেকে ১২ বছর বয়সি। প্রবীণ, বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কেমন কী তারতম্য হয় তা দেখা হবে।

তৃতীয় পর্যায়ে হবে ১৮-ঊর্ধ্বদের উপরে পরীক্ষা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে সাবালকদের একটি অংশকে দেওয়া হবে ছাড়পত্র পাওয়া কোনও প্রতিষেধক। অপর অংশ পাবে জেনার ইনস্টিটিউটের তৈরি প্রতিষেধক ChAdOx1। উভয় দলের মধ্যে ফলের কী ফারাক হচ্ছে, দেখা হবে। জেনার ইনস্টিটিউট এই প্রতিষেধকটি তৈরি করেছে অ্যাডেনোভাইরাস থেকে। যার কারণে শিম্পাঞ্জিদের সাধারণ সর্দি হয়ে থাকে। ওই ভাইরাসের জিনকে এমন ভাবে বদলে নেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষের দেহে ঢুকে কোনও মতেই এটি সংখ্যায় না-বাড়তে পারে। এদের অল্প উপস্থিতিতেই দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ-এর প্রধান, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলছেন, ‘‘ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা খুব ভাল ভাবেই এগোচ্ছে। এ বার আমরা বয়স্ক ও বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে আমাদের প্রতিষেধকটি কেমন কাজ করছে, সেটা দেখতে চাই।’’ জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারা গিলবার্টের কথায়, ‘‘ChAdOx1-এর ক্ষমতা যাচাই ও নিরাপত্তা, উভয় দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় ৫৫-ঊর্ধ্বরা অংশ নিতে পারেননি। অথচ তাঁদের অনেকেই পরীক্ষার অংশ হতে আগ্রহী। এ বার সেটা সম্ভব হবে। এই দফার পরীক্ষা হবে দেশের বিভিন্ন অংশে।’’

আরও পড়ুন: হাতের বদলে পায়ের ছোঁয়ায় চলছে লিফট, অভিনব ব্যবস্থা শপিং মলে

আমেরিকা জানিয়েছে, পরীক্ষার গতি বাড়াতে ও দ্রুত প্রতিষেধক উৎপাদনের পথ সুগম করতে তারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ১২০ কোটি ডলার পর্যন্ত জোগাবে। ওষুধ তৈরির সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা সাহায্য করবে। উৎপাদনের বিষয়ে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চলছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানাচ্ছে, দেড় বছরের মধ্যে তারা প্রতিষেধকের ১০০ কোটি ডোজ় তৈরি করতে ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরবরাহ শুরু করে দিতে পারবে। তবে প্রতিষেধক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই প্রথম ব্যাচের ওষুধ তৈরি করতে হবে ঝুঁকি নিয়ে। পরীক্ষায় সেটি উতরোবে কি না বা আদৌ সেগুলি ব্যবহার করা যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা থাকবে না।

প্রাণী ও মানবদেহে পরীক্ষার ফল সবে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত কিছুটা আশাব্যঞ্জক ফল মিললেও, দেখা গিয়েছে প্রতিষেধকটি ছ’টি বাঁদরকে নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করেছে‌ ঠিকই, তবে প্রতিষেধক পাওয়া ও না-পাওয়া, দু’দল বাঁদরের নাকেই প্রায় সমসংখ্যক ভাইরাস বাসা বেঁধে রয়েছে। তা ছাড়া, অন্য গবেষণা বলছে, নোভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক পাওয়া গেলেও হয়তো তা বছর বছর নিতে হবে ফ্লুয়ের মতো। নেদারল্যান্ডসে একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার সূত্রে এমনও মনে করা হচ্ছে, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা হয়তো স্থায়ী হবে মাত্র ছ’মাস। রিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট ইয়ান জোন্স, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পোলার্ডদের আশা, দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতাই মিলবে প্রতিষেধকে। তবে অবশ্যই সব কিছু প্রত্যাশা মতো এগোলে।

আরও পড়ুন: ৩ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি করোনা-আক্রান্ত, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ব্রাজিল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Jenner Institute
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE