Advertisement
১১ মে ২০২৪

দুই বাংলার রান্নার লড়াই

এ পার-ও পার বাংলার রান্নার প্রতিযোগিতায় সেরা হলেন কারা? তিন দিন ব্যাপী ফুড ফেস্টিভ্যালে দুই বাংলার লোভনীয় পদে কেমন মেতেছিল উৎসবের প্রাঙ্গণ? রইল সে সবই...এ পার-ও পার বাংলার রান্নার প্রতিযোগিতায় সেরা হলেন কারা? তিন দিন ব্যাপী ফুড ফেস্টিভ্যালে দুই বাংলার লোভনীয় পদে কেমন মেতেছিল উৎসবের প্রাঙ্গণ? রইল সে সবই...

লোভনীয় রান্না

লোভনীয় রান্না

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

রান্না নিয়ে বাঙাল-ঘটি ফাটাফাটি নতুন নয়। এ বার দুই পারের বাঙালিকে হাতা-খুন্তি দিয়ে রান্নার রণক্ষেত্রে নামানো হল ঘটা করে। অনুষ্ঠানের নাম ‘পত্রিকা এক পাতে দুই বাংলা’। আইআইএইচএম আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন। ভাবনা অনুযায়ী বাঙাল ও ঘটি দু’রকমের পদ নিয়ে হাজির হতে হবে প্রতিযোগিতায়। আর সব রান্নার মধ্য থেকে দুই পার থেকেই বেছে নেওয়া হবে সেরা রাঁধুনী।

বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসে জমা পড়েছিল হাজারখানেক এন্ট্রি। তার থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল ১০০ জনকে। এদের নিয়েই ‘পত্রিকা এক পাতে দুই বাংলা’ অনুষ্ঠানের হাত ধরে ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই সিটি সেন্টার সল্টলেকে আয়োজন করা হয়েছিল ফুড ফেস্টিভ্যালের। সেখানে কলকাতার বহু বিখ্যাত রেস্তরাঁই স্টল দিয়েছিল। ছিল কলকাতা ও তার বাইরের বিশিষ্ট কিছু মিষ্টির দোকানও। আর বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের স্টল ‘আজি বাংলাদেশ-এর হৃদয় হতে’।

বাংলাদেশের ফুড স্টলের কাচ্চি বিরিয়ানি, ভুনি খিচুড়ি ও সরষে ইলিশ ছিল প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়াও এই খাবারের উৎসবপ্রাঙ্গণ মেতে উঠেছিল ফিশ ফ্রাই, বাসন্তী পোলাও, মাটন কষা, চিকেন কাটলেট, মাটন কবিরাজি, প্রন কাটলেট, চিকেন পকোড়া, কচু চিংড়ি, বেক‌ড ফিশ, ডেভিলের গন্ধে। আর যেখানে খাবার, সেখানে বাঙালি কি না পৌঁছে পারে? এই তিন দিন হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটেছিল অনুষ্ঠানপ্রাঙ্গণে। পলকের মধ্যে ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছিল ফিশ ফ্রাই, কোর্মা, কালিয়া।

পাবদার পদ

মিষ্টির কথাই তো উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশের পিঠে, পাটিসাপটা থেকে শুরু করে ছিল গোপালভোগ, ছানা ভাজা, ছানার মহিমা, ম্যাঙ্গো মোহিনী, ক্ষীরের মালপোয়া... আরও কত কী! খাবারে পেট ভরে গেলেও দু’হাতে মিষ্টির বাক্স বোঝাই হয়ে সকলে বাড়ি ফিরেছিলেন সেই ক’দিন অনুষ্ঠানস্থল থেকে।

শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়, অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল খাবারের ডেকরেশন ও পরিবেশন। আইআইএইচএমের ছাত্রছাত্রীরা লাইভ কাউন্টারে খাবার তৈরি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের কাটিংয়ের পরে স্যালাড সাজিয়েও দেখাচ্ছিলেন। সঙ্গে চলছিল আইস স্কাল্পটিং। বরফ কেটে কেটে বিভিন্ন রকমের জিনিস বানিয়ে দেখানো হয়েছিল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে।

এই উৎসব প্রাঙ্গণেই তিন দিনব্যাপী রান্নার প্রতিযোগিতা চলেছিল। বেছে নেওয়া প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে ১০০ জনই অংশগ্রহণ করেছিলেন এই তিন দিনব্যাপী প্রতিযোগিতায়। যার মধ্যে প্রথম দিন ৫০ জন ও দ্বিতীয় দিন বাকি ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন রন্ধন প্রতিযোগিতায়। তার মধ্যে দুই বাংলা থেকেই ২৫ জন করে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে আম-কাসুন্দি ইলিশ, আনারস ইলিশ, ডিমের পাতুরি, মশালা ফুচকা থেকে শুরু করে কন্টিনেন্টাল পদ রেঁধে তাক লাগিয়ে দেন প্রতিযোগীরা।

রূপশ্রী হালদার (বাঁ-দিকে) ও রিমা মজুমদার।

প্রথম দিনের প্রতিযোগিতায় দুই বাংলা থেকে দু’জন করে উঠে আসেন সেমিফাইনাল রাউন্ডে। দ্বিতীয় দিনও একই ভাবে দুই বাংলা থেকে ২৫ জন করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে দু’জন করে চার জন উত্তীর্ণ হন সেমিফাইনােল। এই রাউন্ডের বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজিৎ মজুমদার, দেবাশিস দাস। সেমিফাইনালের আট জনের মধ্যে চার জন উঠে আসেন ফাইনালে। ফাইনাল রাউন্ডের বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপাল ডি জে গোম্স, ফুড ব্লগার ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ি, হলিডে ইনের এগজ়িকিউটিভ শেফ জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএইচএনের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল দেবাশিস দাস ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর নবনীতা কর। পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা থেকে শুরু করে প্রতিযোগীদের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দেবজিৎ মজুমদার।

চেখে দেখার পালা

ফাইনালে জয়ী হন রূপশ্রী হালদার। এ পার বাংলার সেরা রাঁধুনি হন রিমা মজুমদার। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বাকি প্রতিযোগীরাও যারপরনাই খুশি। তার সঙ্গে পরিবারের সকলে মিেল কবজি ডুবিয়ে দুই বাংলার খাবার খেয়ে তাঁদের রসনা যে তৃপ্ত, তাতে সন্দেহ নেই। সুতরাং বাঙাল-ঘটি তরজা যতই চলতে থাকুক, দুই বাংলার খাদ্যভাণ্ডারে আখেরে লাভ হয়েছে কিন্তু আপামর বাঙালিরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Festival Bengali Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE