Advertisement
১০ মে ২০২৪

ওঁদের লড়াই সচেতনতার বিকাশে

ওদের বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে! সমাজ-পরিবার ওদের অনেককেই ‘পাগল’ বলে ভুল করেছিল। ওদের রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে এসে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

প্লাস্টিকের পাত্রে একটা একটা করে বল রাখছিল বছর দশেকের ছেলেটি। পাশে নিজের মনে পুঁতি দিয়ে মালা গাঁথছে এক জন। কেউ একমনে আঁকছে পাহাড়, নদী।

দেখে কে বলবে, ওদের বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে! সমাজ-পরিবার ওদের অনেককেই ‘পাগল’ বলে ভুল করেছিল। ওদের রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে এসে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার। গত ১১ বছরের চেষ্টায় কেউ কেউ ফিরেছে মূল স্রোতে। ভর্তি হয়েছে সাধারণ স্কুলে।

সকাল থেকে রাত এই শিশুদের জন্য লড়াই করছেন কৃষ্ণনগরের শৈবাল সরকার। শৈবাল বলছেন, ‘‘অনেকেই এই শিশুদের পাগল মনে করেন। কিন্তু তারা তো তা নয়। ঠিক সময় থেরাপি পেলে ওরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।’’ শৈবালের ছেলে বছর পনেরোর শৌর্য অটিস্টিক। স্কুলশিক্ষিকা নন্দিনী নাগ বা কৌশিক ভট্টাচার্যের ছেলে আক্রান্ত সেরিব্রাল পলসিতে। কৃষ্ণনগরে এমন শিশুদের জন্য বিশেষ স্কুল ছিল না। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি হননি তাঁরা। নিজেদের সন্তানদের জন্যই খুললেন সেন্টার।

২০০৬ সালে তাঁরা কয়েক জন অভিভাবক শুরু করলেন ‘উন্মেষ’। সেখানে বর্তমানে ৩২ জন শিশু রয়েছে। আছেন এক জন স্পিচ থেরাপিস্ট, পাঁচ জন স্পেশ্যাল এডুকেটর আর দুই ফিজিওথেরাপিস্ট। আর আছে প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনার জন্য নানা রকম উপকরণ। এক সময় ওষুধের ব্যবসা করতেন শৈবাল। স্ত্রী নিরুপমা শিক্ষকতা করেন। বাড়ির নীচ তলায় ওই সেন্টার। তার খরচও জোগাড় করেন নিজেরাই। শৈবাল, কৌশিকেরা বলছেন, ‘‘লড়াইটা শুরু হয়েছিল নিজেদের সন্তানদের জন্য। এখন লড়াইটা অটিজমের বিরুদ্ধে।”

বহরমপুরে এখনও এমন ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অটিস্টিক খুদে পড়ুয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ দিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেয়। অটিজম বাচ্চাকে ভর্তি করানোর মতো স্কুল না থাকায় বহরমপুরের অন্য এক দম্পতি তাঁদের আট বছরের সন্তানকে বাড়িতে রেখে পড়াশোনা শেখানোর চেষ্টা করছেন।

বহরমপুরের মধুপুরের বাসিন্দা বিশ্বদীপ মণ্ডল বলছেনন, ‘‘ছেলে অটিস্টিক। অথচ স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হলে শুনতে হয়েছে ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’, ‘পাগল’। তখনই ঠিক করি নিজেরাই ওদের জন্য একটি স্কুল গড়ব। কিন্তু প্রশাসনের তরফে সে ব্যাপারেও কোনও সাহায্য পাইনি। তবে স্কুল আমরা গড়বই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE