সাবান না মাখলে স্নান সম্পূর্ণ হয়েছে বলেই মনে হয় না? স্নানঘরের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী সাবান। কিন্তু গত এক দশক ধরে সেই সামগ্রীকেই স্নানঘর থেকে সরিয়ে ফেলেছেন বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা মালবড়ে। ১০ বছর হয়ে গেল, ‘চক দে ইন্ডিয়া’ ছবির তারকা গায়ে সাবান মাখেন না। কেবল জলেই তাঁর ভরসা। আর নুনে! সাবানের পরিবর্তে নুন? বিদ্যার স্নানের নিয়ম প্রথাসিদ্ধ নয়, জনপ্রিয়ও নয়। তবে ত্বকচর্চার জন্য কার্যকরী বলে মনে করেন অভিনেত্রী। ইনস্টাগ্রামে সে কথা জানানোর পর অনুগামীদের মনে প্রশ্ন জাগে, কী ভাবে স্নান করেন বিদ্যা?
অভিনেত্রীর স্নান-প্রথা
বিদ্যা গত দশ বছর ধরে গায়ে সাবান ছোঁয়াননি। প্রথমে এক বার পুরো গা ভিজিয়ে নেওয়ার পর ৩০ সেকেন্ডের জন্য শাওয়ারের জল বন্ধ করে দেন বিদ্যা। তার পর খানিক পরিমাণ নুন নিয়ে তাতে অল্প জল মিশিয়ে সারা গায়ে আলতো ভাবে ঘষে নেন। আর সেই মুহূর্তে তিনি কল্পনা করেন, তাঁর দেহ ও মনের সমস্ত নেতিবাচকতা যেন জলে ধুয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাবানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি মিশ্রণ, যেমন বেসন, হলুদ এবং গোলাপজল। তাও মাঝেমধ্যে। মূলত সাধারণ জলেই স্নান সারেন শাহরুখ খানের সহ-অভিনেত্রী। বিদ্যার বক্তব্য, ৫২ বছর বয়সে তাঁর ত্বক যতটা কোমল, আগে এতটাও ছিল না। বিদ্যার পরামর্শ, প্রথম ১০ দিন নুন দিয়ে স্ক্রাব করার পর বিরতি নিতে হবে। কারণ নুনের অতিরিক্ত প্রয়োগ আবার ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে।
অপ্রচলিত স্নান-প্রথা। ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু সত্যিই কি সাবান ছাড়াই স্নান সম্ভব?
প্রতি দিন সাবান ব্যবহার করলে সত্যিই তা ত্বকের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক। ২০২৪ সালে, ‘অ্যালার্জোলজি
ইন্টারন্যাশনাল’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল জাপানের টোকিয়ো
মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের একটি গবেষণা। সেখানে বলা হয়েছিল, যাঁরা
শুধু জল দিয়ে গা পরিষ্কার করেন এবং যাঁরা ক্লিনজ়ার ব্যবহার করেন, দুই ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে ত্বকের সংক্রমণের মধ্যে কোনও পার্থক্যই পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে এগ্জ়িমা
আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি লক্ষ করা গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে গলা, বাহুমূল, পায়ের পাতার মতো
দেহের কোনও কোনও জায়গায়, যেখানে ঘাম, জীবাণু বেশি জমে, সেগুলি
পরিষ্কার রাখার জন্য সাবান বা ক্লিনজ়ার দরকার হতে পারে। নয়তো ময়লা দূর হবে না,
দুর্গন্ধ হবে, জীবাণু দূর হবে না। অনেক বেশি সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক
তেল ও মাইক্রোবায়োম (ত্বকে থাকা ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলি) নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে
ত্বক খসখসে হয়ে যেতে পারে। তাই মধ্যপন্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন চর্মরোগ
চিকিৎসকেরা। গোটা শরীর সাবান দিয়ে না ধুয়ে বিশেষ অংশগুলি সাবান বা ক্লিনজ়ার
ব্যবহার করে ধুতে পারেন। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে সাবানের বদলে প্রাকৃতির ঘরোয়া উপাদানও
সাবানের কাজ করতে পারে। কিন্তু আপনি যদি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেন যে এ বার থেকে সাবান
ছেড়ে দেবেন, তাতে ত্বক চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না। আকস্মিক ভাবে এই রূপান্তর
সফল হবে না। প্রথম দিকে ত্বক অতিরিক্ত তেলচিটে মনে হবে বা গন্ধ পাবেন। তাই সময়
দিন, যাতে মাইক্রোবায়োম নতুন ভাবে কাজ করতে পারে।
কাদের জন্য এই অভ্যাস কার্যকরী নয়
· সকলের জন্য সাবান বাদ দিয়ে স্নান উপযুক্ত নয়। ত্বক যদি অত্যন্ত তেলচিটে ও ব্রণপ্রবণ হয়, বা ছত্রাক সংক্রমণের প্রবণতা থাকে, তা হলে বিশেষ ক্লিনজ়ার ব্যবহার করতে হবে।
· গরম, আর্দ্র এলাকা, পরিবেশ দূষণে ভর্তি, যেখানে ঘাম ও জীবাণু দ্রুত জমে, সেখানে শুধুমাত্র জল দিয়ে ধোয়া যথেষ্ট নয়। অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
· সাবান বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে চাইলে, প্রথমে সাবান ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন। কেবল ঘামযুক্ত অংশগুলিতে সাবান মেখে বাকি জায়গা জল দিয়ে ধুয়ে দিন। তার পর ভাল ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন।