দু’জনেই ধনকুবের পিতা। দু’জনেই গুজরাতের ব্যবসায়ী। দু’জনের আদরের কনিষ্ঠ পুত্রের বিয়েও হচ্ছে মাস কয়েকের ব্যবধানে। প্রথম জন, রিল্যায়েন্স গোষ্ঠীর প্রধান মুকেশ অম্বানী ছেলের বিয়েতে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন বৈভবের বিচ্ছুরণে। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রভাবশালী এবং তারকারা এসেছিলেন তাঁর অতিথি হয়ে। তাঁদের সাজগোজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলিউডের প্রিয় পোশাকশিল্পী মণীশ মলহোত্রে। দ্বিতীয় জন, গৌতম আদানি। তাঁর ছেলের বিয়ের পোশাকের নকশাও করেছেন মণীশই। তবে সামান্য পার্থক্য আছে। পোশাকের পুরোটাই মণীশের নকশা হলেও পোশাকের কিছু অংশ হাতে বানিয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষমেরা।
আদানির পুত্র এবং পুত্রবধূ শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন বিশেষ ভাবে সক্ষমদের হাতে বানানো শাল এবং উড়নি গায়ে দিয়ে। অবশ্য শুধু পোশাকে নয়, আদানি-পুত্রের বিয়ের উৎসবের অনেকটা জুড়েই গুরুত্ব পেয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষমেরা।

বিশেষ ভাবে সক্ষম ৫০০ মহিলার প্রত্যেকের বিয়ের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন গৌতম-পুত্র জিৎ আদানি। ছবি : সংগৃহীত।
আদানির ‘মঙ্গল সেবা’
গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে আদানির কনিষ্ঠ পুত্র জিৎ আদানি এবং হবু পুত্রবধূ দিবা শাহের বিয়ের উদ্যাপন। অহমদাবাদে আদানিদের টাউনশিপ শান্তিনগরে বসেছে বিয়ের আসর। সেখানে প্রথম দিনই ‘মঙ্গল সেবা’ করেছেন আদানিরা। কী সেই সেবা? বিশেষ ভাবে সক্ষম ৫০০ মহিলার প্রত্যেকের বিয়ের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন গৌতম। সেই টাকা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন জিৎ। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে সেই ‘মঙ্গল সেবা’র কথা জানিয়েছেনও আদানি।

(বাঁ দিকে) বিয়ের আসরে হস্তশিল্পের ‘মেলা’। সেখানে এক শিল্পীর শিল্প দেখতে মশগুল হবু দম্পতি। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের হাতে তৈরি গয়নাগাটি (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
আদানি-নগরে মেলা!
শান্তিনগরের বিয়ের আসরের এক প্রান্তে হস্তশিল্পের মেলাও বসিয়েছেন। সেই মেলাতেও নানা রকম হাতের কাজ নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষমেরাই। নানা রকম গয়না থেকে শুরু করে শাড়ি, পোশাক, ঘর সাজানোর জিনিস— সবই হাতে বানিয়েছেন তাঁরা। একটি ভিডিয়োয় তাঁদের হাতে বানানো সেই সব জিনিস কিনতেও দেখা গেল আদানি-পুত্র জিৎ এবং তাঁর হবু স্ত্রী দিবাকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে আদানি-পুত্রের বিয়েতে ব্যবহৃত কাচের বাসন, এমনকি সাজানোর জিনিসপত্রও বিশেষ ভাবে সক্ষমদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সরবরাহ করেছে। সেই সব জিনিসও বানিয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষমেরাই। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক অধিকর্তা প্রীতি জোহর এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘বিয়েতে ব্যবহারের ওয়াইনের গ্লাস, জলের গ্লাস এবং চায়ের গ্লাস আমরা তৈরি করেছি। সব ক’টিতেই রয়েছে হাতে আঁকা ফুলের নকশা’’
বিয়ের শাল

পশমিনার শালের পাড়ে নকশা করেছেন বিশেষ ভাবে সক্ষমেরা। ছবি : প্রতীকী।
তবে এই সব কিছুর মধ্যেই সেরা আদানি পুত্রের বিয়ের শালখানি। মণীশের নকশায় দিবার শালটি তৈরি করা হয়েছে পশমিনার উপরে। তাতে রয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজ। জিতের উড়নিটি রেশমের। তার পাড়ে নকশার কাজ করেছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিশেষ ভাবে সক্ষমেরা। সুতোর কাজ এবং হাতে আঁকা মিলিয়ে নকশা করা হয়েছে। সেই শালই গায়ে দিয়ে বিয়ে করতে চলেছেন বর-বধূ।
হস্তশিল্পীদের গুরুত্ব
এ ছাড়াও আদানি-পুত্রের বিয়েতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দেশের হস্তশিল্পে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী শাড়ি থাকছে অতিথিদের জন্য। মহারাষ্ট্রের নাসিকের শিল্পীদের হাতে বোনা পৈঠানি শাড়ি আনানো হয়েছে। গুজরাতের মুন্দ্রার শিল্পীদের মাটির কাজের মুরাল থাকছে বিয়ের সাজসজ্জায়। অতিথিদের জন্য আনানো হচ্ছে রাজস্থানের জোধপুরি চুড়ি এবং বালাও।

বিয়েতে ব্যবহারের ওয়াইন গ্লাসের নকশাও করেছেন বিশেষ ভাবে সক্ষমেরা। ছবি: সংগৃহীত।
অম্বানীদের দরিদ্র সেবা
বিয়েতে দরিদ্রসেবা করেছিলেন অম্বানীরাও। অনন্ত অম্বানীর বিয়ে উপলক্ষে দরিদ্রদের বিয়ে দিয়েছিলেন মুকেশ এবং নীতা অম্বানী। সঙ্গে দিয়েছিলেন যৌতুকও। পাশাপাশি দরিদ্রনারায়ণ সেবাও করেছিলেন তাঁরা। আদানিরা দেখালেন বৈভবে না হোক, সমাজের কল্যাণের চিন্তায় অম্বানীদের তুলনায় খুব পিছিয়ে নেই তাঁরা।
পাত্র-পাত্রী

বাগ্দানের অনুষ্ঠানে জিৎ আদানি এবং দিবা শাহ। ছবি : সংগৃহীত।
আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতমের কনিষ্ঠ পুত্র জিতের বয়স ২৭। তিনি আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ সংস্থা আদানি এয়ারপোর্টের অধিকর্তা, যে সংস্থা ভারতের ৬টি বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করে। জিৎ পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তি এবং স্থপতি বিদ্যায় স্নাতক এবং তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের তথ্য অনুযায়ী, তিনি বিমানচালনাও শিখছেন। জিতের হবু স্ত্রী হিরের ব্যবসায়ী জৈমিন শাহের কন্যা দিবা। বাণিজ্যের দুনিয়ায় জৈমিন বড় নাম হলেও তাঁর পরিবার অন্তরালে থাকতেই পছন্দ করে।